ডেস্ক | ০১ জুলাই ২০১৮ | ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ
দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া এবং মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট। ৮ কিলোমিটারের দূরত্বে যেতে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগায় যাত্রীদের আগ্রহ বেশি সি-বোটে।
সি-বোটে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও প্রতিনিয়ত নিতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি। পদ্মায় সি-বোট দুর্ঘটনায় কতজন লোক নিখোঁজ বা হতাহত হয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়াও রাতের অন্ধকারে সি-বোটে নারী যাত্রীরা চালক দ্বারা ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সি-বোট ঘাট ইজারাদার মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদেনীমণ্ডল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আশরাফ হোসেন খাঁন।
যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রাতের আঁধারে চলাচল, ধর্ষণের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই চলমান শিমুলিয়া ঘাটে। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে রাজী হন না বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি বিধি মোতাবেক নৌরুটে সি-বোট ভাড়া ১৩০ টাকা হলেও যাত্রীদের থেকে রাখা হয় ১৫০ টাকা। ভাড়ার টাকা টিকিটের গায়ে লেখা নেই। দুই ঘাট মিলিয়ে ৪ শতাধিক সি-বোট থাকলেও বেশিরভাগ চালক প্রশিক্ষণহীন ও অদক্ষ। সাপ্তাহিক ছুটি, সরকারি বন্ধের দিন ও ঈদ মৌসুমে যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের চিত্র সবারই জানা। এখন তাই যাত্রীরা বাধ্য হয়ে নেতার ঘাটের অনিয়মকেই নিয়ম মেনে নিয়েছেন।
শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে চলাচল করছে স্পিডবোটসরেজমিনে নৌরুট পরিদর্শন করে দেখা যায়, কাঁঠালবাড়ি সি-বোট ঘাটের টিকিট কাউন্টারে ব্যানারে লেখা “শিমুলিয়া টু কাঁঠালবাড়ি সি-বোট ভাড়া ১৩০ টাকা এবং নির্ধারিত ভাড়ার থেকে বেশি আদায় করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”। যথারীতি ১৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে টিকিট দেওয়া হলো এবং টিকিটের গায়ে ভাড়া লিখা না থাকায় কাউন্টারে কথা বললে সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজী হননি। দুইজন যাত্রী ছাড়া চালকসহ ১৯ জন যাত্রী লাইফ জ্যাকেট পড়েননি। লাইফ জ্যাকেট পড়তে তদারকি কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো নজরদারি। দুই ঘাটের চিত্র একই।
নৌরুটের একাধিক যাত্রী জানান, বাড়তি টাকার লোভে সন্ধ্যার পর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলে সি-বোট। চালকরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং সরু চ্যানেলে দ্রুতগতি নিয়ে চলাচল বিপদজনক হয়ে পড়েছে।
বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে প্রতিবাদ জানালে প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে পড়তে হয়। যাত্রীদের মারধরের ঘটনাও ঘটে। ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টস ও চাকরিজীবী নারীরা এসব সি-বোটে করে যাওয়ার পথে পদ্মার চড়ে চালকদের দ্বারা ধর্ষণের স্বীকারও হচ্ছেন। অনেকেই এসব বিষয়ে মুখ খুলতে রাজী হন না বলে জানান যাত্রীরা।
শিমুলিয়া সি-বোট ঘাট ইজারাদার আশরাফ হোসেন খাঁন বলেন, টিকিটের গায়ে ভাড়ার টাকা উল্লেখ করার জন্য আমি বলছিলাম। মাঝিকান্দি পর্যন্ত ভাড়া ১৫০ কিন্তু কাঁঠালবাড়ি নেওয়ার কথা নয়। নৌরুটে দুইটি ঘাট মিলিয়ে ৪ শতাধিক সি-বোট আছে এবং প্রতিদিন ৪ হাজার মানুষ চলাচল করে থাকে এ নৌযানে। সি-বোটে লাইফ জ্যাকেট পড়ার বিষয়ে যাত্রীদের একাধিকবার বললেও তারা পরছেন না।
এসময় তিনি বলেন, শুধু শিমুলিয়া ঘাটের অনিয়মের বিষয়টিই কেন আগে আসে, কাঁঠালবাড়ি ঘাটেও অনিয়ম হচ্ছে সেদিকে নজর দিন।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনির হোসেন বলেন, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাট পর্যন্ত সরকারি বিধি মোতাবেক নির্ধারিত ভাড়া হচ্ছে ১৩০ টাকা। এ নৌরুটে মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তদারকি করে থাকি। আমরা যখন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি টিকিটের গায়ে ভাড়া লিখা দেখতে পাই ১৩০ টাকা, তারা হয়ত দুই ধরনের টিকিট রেখে থাকে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাদারীপুর শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান আহম্মদ জানান, ঘাটের ভাড়ার বিষয়টি আমাদের অধীনে নয়। তাছাড়া স্থানীয়দের থেকে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।