অনলাইন ডেস্ক | ০৫ এপ্রিল ২০১৭ | ৫:৩৩ অপরাহ্ণ
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বিব্রতকর সমস্যা। আর শিশুদের বেলায় হলে বিষয়টি জটিল হয়ে দাঁড়ায়। তার দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
যেটা বেশি সমস্যা হয় তা হলো, বাচ্চারা যখনই শক্ত পায়খানা করতে চায়, তখন তাদের ব্যথা করে, পায়খানার রাস্তা অনেক সময় ফেটে যায়। ব্যথা করলেই সে চেপে রাখে। চেপে রাখলে পায়খানাটা থেমে গেল। পানিটা যখনই শরীর শোষণ করে নেয়, তখন এটা আরো বেশি শক্ত হয়। সুতরাং পরের দিন যখন তার আবার পায়খানার বেগ হয়, ব্যথার অনুভূতি তার মধ্যে কাজ করে। তখন সে পায়খানা করতে চায় না। তখন কী করে? বাথরুমে বসালে উঠে যায়। এক রুম থেকে আরেক রুমে চলে যায়, লাফালাফি করে। কান্নাকাটি করে, ধরে রাখার চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত পায়খানার রাস্তা ফেটে যায়। রক্ত বের হয়, বারবার ফাটে। আবার জোড়া লাগে। এ রকম করতে করতে পায়খানার রাস্তা খারাপ হয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদী কোষ্টকাঠিন্যের কারনে পাইলস এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে । বাচ্চাদের রুচি চলে যায়। বমি বমি ভাব লাগে। পেট ফোলা ফোলা থাকে। স্বাভাবিক খাবার খেতে চায় না। তাদের জন্য এটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাই বাচ্চাদের খাবারের দিকে সবসময় নজর রাখতে হবে। এমন কোনো খাবার যেন না খায় যা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে। খুব ভারী এবং প্রক্রিয়াজাত করা খাবার না দিলে এই সমস্যা থেকে অনেকটা দূরে থাকা যায়।
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এখানে কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো:
স্বাস্থ্যকর খাবার: শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে স্বাস্থ্যকর খাবার খুবই প্রয়োজনীয়। আঁশ সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে দিতে হবে। তাদেরকে এমন খাবার দিতে হবে যেগুলো স্বাস্থ্যকর, সহজে হজম হয় এবং মজাদার। শাকসবজি ও ফল রাখতে হবে তার খাবারে। আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে দিলে শিশুদের খাবারে আগ্রহ বাড়বে এবং সে খাবার বাদ দিতে চাইবে না। আঁশ জাতীয় খাবার দেয়ার পাশাপাশি তাদের সঠিক পারিমান পানি খাওয়াতে হবে। কারন পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।
শিশুদের পেট নরম করার ব্যবস্থা করুন: শিশুদের লেক্সেটিভ বা পায়খানা নরম করার ঔষধ দিয়ে হলেও কোষ্ঠকাঠিন্যে দূর করার চেষ্টা করুন। এসব খুব সহজেই কাজ করে এবং নিরাপদও। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াবেন এবং পুরো ডোজ শেষ করবেন। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভালো হওয়ার সাথে সাথেই হঠাৎ করে ঔষধ বন্ধ না করে আস্তে আস্তে বন্ধ করুন।
শারীরিক কার্যক্রম: যে কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রেই শারীরিক কার্যক্রম ভাল স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই শিশুরাও এর ব্যতিক্রম নয়। শিশুর জন্য কিছু শারীরিক ব্যায়াম রয়েছে। হাত পা নাড়াচাড়া করে খেলছে কিনা সেদিকে নজর রাখুন। শিশু সারাদিন যদি শুয়ে বসে কাটায় তাহলে তার নড়াচড়া কম হবে। সারাদিনে কমপক্ষে ১ ঘন্টা হলেও শিশুর শারীরিক কার্যক্রম না হলে অন্ত্রে নড়াচড়াও স্বাভাবিকভাবে হবে না। তাই এই ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখুন।
ঔষধের প্রতি খেয়াল রাখুন: সাধারন জ্বর, সর্দি, কাশি বা যেকোনো রোগের জন্য বাচ্চাকে ঔষধ দিতেই পারেন তবে অবশ্যই তা ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে দেবেন। তবে খেয়াল রাখুন কোনো ঔষধের কারনে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে কিনা। যদি হয় তাহলে তা বন্ধ করুন এবং ডাক্তারকে জানান। এছাড়া ডাক্তারের কাছ থেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের এমন কিছু ঔষধের পরামর্শ নিন যা বাচ্চার উপর ভালো কাজ করে এবং হঠাৎ করে সেটা বন্ধ করে দেবেন না। কমাতে হলে আস্তে আস্তে ডোজ কমিয়ে তারপর বন্ধ করুন।
সুশৃঙ্খলতা বজায় রাখা: সামান্য শৃঙ্খলতা বজায় রাখার মাঝেও বেশ জাদুকরি ক্ষমতা থাকে। টয়লেটে যাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে দিন। এবং সেই সময়ে তাকে প্রতিদিন টয়লেটে নিয়ে যান বা যেতে বলুন এবং মুখে বলুন এখন টয়লেটে যাওয়ার সময়। যার ফলে সে এই নিয়মে অভ্যস্থ হবে।
উপরোক্ত উপায় গুলো মেনে চলতে পারলে অবশ্যই শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য বেশ ভাল ভাবে কমানো সম্ভব। শিশুর অভিভাবককেই খুজে বের করতে হবে কোন উপায় গুলো তাদের শিশুর জন্য ভাল কাজ করে। কোন বাচ্চা যদি খুব বেশি আঁশ জাতীয় খাবার না খায় কিন্তু তার পায়খানা নরম থাকে তাহলে চিন্তার কিছু নেই।
আবার দেখা যায় পায়খানা নরম করার ঔষধ এবং উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খেয়েও সঠিক শারীরিক কার্যক্রমের অভাবে অনেক শিশুর ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কোন শিশুর ক্ষেত্রে এমন নয় যে সব গুলো উপায় অবলম্বন করতে হবে আবার কারো ক্ষেত্রে হয়তো সব গুলোই চেষ্টা করে দেখতে হবে।