অগ্রবাণী ডেস্ক | ২৬ জুন ২০১৭ | ৭:২৯ অপরাহ্ণ
কিশোরগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহের পাশে গত বছর জঙ্গি হামলা হয়েছিল। তাই এ বছর শঙ্কা ছিল নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিদের। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন ছাড়াই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন লক্ষাধিক মানুষ।
সকাল ১০টায় শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। নামাজ শেষে জঙ্গিবাদের নির্মূল ও দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এর আগে প্রতিবছর ঈদে পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ঈদগাহ জামে মসজিদের দোতলায় ইমাম খুতবা পাঠ ও মোনাজাত করতেন। কিন্তু এবার নিরাপত্তার কারণে মসজিদের নিচতলায় নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে খুতবা পাঠ ও মোনাজাত করা হয়। এ বছর দুই লাখের বেশি মুসল্লি নামাজে অংশ নেন।
গত বছরের জঙ্গি হামলার ঘটনায় এবার শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে আট প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ২০ প্লাটুন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া মাঠে সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারিতে ছিলেন। মাঠের প্রবেশপথগুলোতে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা ও আটটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাঠে প্রবেশের সময় লাইনে দাঁড় করিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করে আর্চওয়ে দিয়ে মাঠে প্রবেশ করানো হয়।
নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল থেকে জেলা শহরের প্রায় সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুসল্লিদের জন্য জায়নামাজ ছাড়া ছাতা ও যেকোনো ধরনের ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা প্রখর রোদের মধ্যে হেঁটে ঈদগাহ মাঠে আসেন। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য মাঠের সামনের ১০টি কাতার বাঁশের বেড়া দিয়ে খালি রাখা হয়। সকাল ৮টার দিকে জামাতে অংশ নিতে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি ট্রেনে মুসল্লিরা কিশোরগঞ্জ এসে পৌঁছান।
শোলাকিয়া মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিট আগে একটি শটগানের গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হয়।
মোনাজাতের আগে সংক্ষিপ্ত বয়ানে মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে কখনো জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের লাখো আলেমের একসঙ্গে ফতোয়া দেওয়া বিশ্বে নজিরবিহীন ঘটনা।
এর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন খান।
গত বছরের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে পুলিশ সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় পুলিশের দুই সদস্য, এক জঙ্গি ও বাড়ির ভেতরে থাকা ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামের এক গৃহবধূসহ চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আট পুলিশসহ তিন পথচারী।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর ইংরেজি ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির ওপর এই ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশ নেন বলে মাঠের নাম রাখা হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠে। বিশাল এই মাঠের মধ্যে মোট কাতার রয়েছে ২৬৫টি।