মুফতি শাহেদ রহমানি | ০৪ জুন ২০১৭ | ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ
রোজাদার সূর্যাস্তের পর যেসব খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করে রোজা ভঙ্গ করেন, তা-ই ইফতার। ইফতার শব্দের অর্থ রোজা ভঙ্গ করা। আরবি ‘ফুতুর’ শব্দ থেকে এটি উদ্ভূত। এর অর্থ নাশতা করা ও হালকা খাদ্য গ্রহণ করা। ইফতার শব্দের অন্য অর্থ বিরতি ও ভঙ্গ করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রোজা সমাপ্তির জন্য পানাহার করাকে ইফতার বলা হয়।
সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আগমন ঘটে। তখন ইফতারের সময় হয়ে যায়। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা হলো—ইফতারে বিলম্ব করা যাবে না। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ যত দিন পর্যন্ত সময় হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। ’ (বুখারি শরিফ, হাদিস :২৮৫২)
মহানবী (সা.) খুবই সাদাসিধে ইফতার পছন্দ করতেন। হজরত আব্দুল্লাহ বিন আবি আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রোজায় আমরা রাসুল (সা.)-এর সফরসঙ্গী ছিলাম। সূর্যাস্তের সময় তিনি একজনকে ডেকে বললেন, ছাতু ও পানি মিশিয়ে ইফতার পরিবেশন করো। ’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১০৯৯) অথচ আমরা সেই নবীর উম্মত হয়ে সাহরি ও ইফতারে হয়ে পড়ছি অসংযমী। সমাজে যারা বিত্তশালী, সাহরি ও ইফতারে তাদের জন্য ১০-২০ পদ খাবার চাই-ই চাই। অনেকের কাছে আবার রমজান মানে স্রেফ ইফতার পার্টির বিনোদন। রোজা রাখুক বা না রাখুক, ইফতারে তাদের ভোজনবিলাসিতার কমতি নেই। অথচ রমজান ভোজনবিলাসিতার মাস নয়। রমজান হলো আত্মশুদ্ধি ও সংযমের মাস।
রোজাদারকে ইফতার করানো ইবাদত। কিন্তু আমাদের সমাজে এই ইবাদত বিকৃত সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। কোথাও রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ, কোথাও ব্যবসায়িক পলিসি আবার কোথাও প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে ইফতার পার্টির নামে। রাজনৈতিক দলগুলো নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ইফতার পার্টির আয়োজনকে দলীয় কর্মসূচির অপরিহার্য অংশ বানিয়ে নিয়েছে। আর এসব পার্টিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই আহূত হয়ে থাকেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইফতার কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে ইফতার করানো হলে সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই সব আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি (প্রতিদান হিসেবে) তা-ই পাবে, যা সে (কাজের ক্ষেত্রে) নিয়ত করেছে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির উদ্দেশে হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও রাসুলের জন্যই হবে। আর যে বৈষয়িক উন্নতি কিংবা কোনো নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে হিজরত করবে, তার হিজরত ওই বিষয়ের জন্যই হবে। ’ (বুখারি শরিফ : হাদিস : ১)
কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, তারা ইফতার পার্টির আয়োজন করে গ্রাহক সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে। তাদের ইফতার পার্টিকে ইফতারি না বলে প্রতারণার ফাঁদ বলাই শ্রেয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়। ’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১০২)
অনেক ইফতার পার্টিতে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয় এবং প্রচুর পরিমাণে খাবার নষ্ট করা হয়। এটি সম্পূর্ণভাবে ইসলামবিরোধী। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই, আর শয়তান তার প্রতিপালকের অকৃতজ্ঞ। ’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৭)
লেখক : সিইও, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা। কৃতজ্ঞতা: কালেরকণ্ঠ