আবীর আহাদ | ২৫ জুন ২০১৮ | ১০:৪৮ অপরাহ্ণ
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধার দুই দফা দাবি । এক. মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও দুই. ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা চাই। এ-দু’দফা দাবি আজ বাংলার প্রকৃত সব মুক্তিযোদ্ধার প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে ।
আপনি একাত্তরের রণাঙ্গনের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকলে, আপনি প্রকৃতিগতই একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের একজন সদস্য । আমরা সেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই । আর এই স্বীকৃতি চাই এ-জন্য যে, আমরা যারা জীবন-যৌবনকে পায়ের ভৃত্য করে সীমাহীন শৌর্য বীর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্ব দিয়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে এনেছিলাম, আমাদের সেই অবদান তথা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা শব্দদ্বয় আমাদের জাতীয় সংবিধানে স্থান পায়নি বলে আমরা সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে অবহেলা ও করুণার পাত্রে পরিণত হয়ে পড়েছি । এর ফলশ্রুতিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হওয়ার পাশাপাশি যত্রতত্র যে-কেউ নানান ফন্দিফিকির করে মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে ! ইতোমধ্যে অর্থ, প্রতিপত্তি ও রাজনৈতিক বিবেচনায় বিপুলসংখ্যক ভুয়া, এমনকি রাজাকাররাও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হয়ে আমাদের যাবতীয় শৌর্য ত্যাগ ও বীরত্বে ভাগ বসিয়েছে । এখনো তারা মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে ! বিপুলসংখ্যক ভুয়ারা মিথ্যার আশ্রয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে । এসব অসংগতি ও জালিয়াতি কি কেউ সহ্য করতে পারে ? পারিনি বলেই আজ আমরা ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’ নামে সংগঠিত হচ্ছি । সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা আজ এ-সংগঠনের পতাকাতলে জড়ো হচ্ছেন । এমনকি দেশের সচেতন জনগণ ও নতুন প্রজন্মের মধ্যেও অভূতপূর্ব সাড়া পরিলক্ষিত হচ্ছে । কেঁপে উঠছে মতলববাজ রাজনৈতিক চক্র, যারা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা নামটি সহ্য করতে চায় না । অপরদিকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের কারিগররাও প্রমাদ গণছে ! চলছে নানান চক্রান্ত ।
আপনি তো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা । আপনি অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের সমষ্টিগত স্বার্থ ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিতাড়নের চলমান আন্দোলনে সমর্থন দেবেন নৈতিক ও চেতনাগত কারণে । আপনার আমার সকলের জীবনপ্রদীপশিখা কিন্তু নিভু নিভু করছে । প্রতিদিন বেশসংখ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা ইহধাম ত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন । জীবনীশক্তি হারিয়ে, মানবেতর জীবনকে ধিক্কার দিয়ে এ-মুহূর্তে আপনি ঘরে বসে কপালে হাত রেখে, চোখের জল ফেলতে থাকবেন তা তো হবে না !
আপনি জাতীয় বীর । বীরের মহিমায় জেগে উঠুন । মনের সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব জড়তা ও সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে আপনার প্রাপ্য সাংবিধানিক মর্যাদা ও মৌলিক অধিকার ফিরে পাওয়া এবং আপনার আমার সকলের পবিত্র নামের ওপর কলঙ্ক লেপনকারী ভুয়ামুক্তিযোদ্ধাদের বিতাড়নের লক্ষ্যে আগামী তেসরা জুলাই রাজপথে নেমে আসুন । ঐদিন আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সুশৃঙ্খল পদযাত্রা করে আমাদের অতি আপনজন, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যাকন্যা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সমীপে আমাদের উপরোক্ত দু’দফা দাবিতে একটি স্মারকলিপি পেশ করবো । আগামী তেসরা জুলাই মঙ্গলবার সকাল দশটায় আমরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে সমবেত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশে শুরু করবো ঐতিহাসিক পদযাত্রা । স্থানের নামটি সময় মতো জানিয়ে দেয়া হবে । সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ঐদিন দৃপ্তপায়ে ঢাকার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করবেন : বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভুয়া ও রাজাকারদের ঠাঁই নাই ! মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, দিয়ে দাও———ইত্যাদি । আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু-কন্যা মুক্তিযোদ্ধাদের এ-প্রাণের দাবি মেনে নেবেন । জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ।
আবীর আহাদ
আহ্বায়ক, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা