
নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
কুড়িগ্রামে এবার স্কুলশিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। বয়স গোপন করে তিনি চাকরি করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুধু তাই নয়, বিয়ে না করেই দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের নামে শিক্ষাভাতা তুলছিলেন ওই শিক্ষিকা।
সরকারি নির্দেশনায় ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফারের (ইএফটি) ফরম পূরণ করতে গেলে রুনা খাতুন নামে ওই শিক্ষিকার প্রতারণার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
রুনা খাতুন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের আরাজি পিপুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
গত ৪ জুলাই কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার ভুয়া জন্মসাল এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিক্ষাভাতা গ্রহণের বিষয়ে ওই শিক্ষিকাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে জানানো হয় পরিবারের প্ররোচনায় চাকরিতে প্রবেশের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘খ’ ছকে লিপিবদ্ধ এবং অবিবাহিত ও স্বামী-সন্তান না থেকেও ইএফটিতে সেই তথ্য গোপন করেছেন। শিক্ষাভাতা উত্তোলন করার অভিযোগে সশরীরে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে নির্দেশ প্রদান করে শিক্ষা বিভাগ।
২০১০ সালে স্কুলটি চারজন শিক্ষক নিয়ে রেজিস্টার্ড বেসরকারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এই চারজনের একজন ছিলেন রুনা। পরবর্তী সরকার ২০১৩ সালে দেশের প্রায় ৩০ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহকে জাতীয়করণ করে। আর এই সুযোগে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকও সরকারি হয়ে যায়।
সরেজমিনে যাত্রাপুরঘাট থেকে প্রায় ২০-২৫মিনিট নৌকায় যেতে হয় আরাজি পিপুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়টি শিশু শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২২৪। বিদ্যালয়ে ৫টি পদের মধ্যে আছেন চার শিক্ষক। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক রুনা খাতুন।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, রুনা খাতুন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চাকলি গ্রামের বখত জামান ও রেনু বেগম দম্পতির মেয়ে। তিনি ২০১০সালে সিরাজগঞ্জের আরিয়া মহন স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৩.৬৯ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এসএসসি সনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ হলো ১৩ আগস্ট ১৯৯৫। অথচ তিনি চাকরিতে প্রবেশের সময় ১৩ আগস্ট ১৯৯০ জন্মসাল ব্যবহার করে নিয়োগ নেন। এ ছাড়া তিনি অবিবাহিত হয়েও নিজেকে বিবাহিত পরিচয় দিয়ে থাকেন।
২০১৭ সাল থেকে সন্তান না থেকেও সন্তানের নাম ব্যবহার করে ৫০০ টাকা হারে শিক্ষাভাতা তুলেছেন। কিন্তু চলতি বছর শিক্ষকদের ইলেকট্রনিক ফাউন্ডস ট্রান্সফার(ইএফটি) মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদান করার জন্য তথ্য আপলোড করতে গিয়ে ধরা পড়ে শিক্ষকের এমন প্রতারণা।
অভিভাবক জহুরুল ইসলাম বলেন, নদীভাঙনের কারণে এখানে কোনো স্কুল ছিল না। কোনো শিক্ষিত মানুষও ছিল না সে সময়। পরে আমরা এখানে স্থানীয় একটা স্কুল করি এই চার শিক্ষককে নিয়ে। রুনা এখানকার বাসিন্দার আত্মীয়তার সূত্রে চাকরি করেন। কিন্তু তার বয়স হয়েছিল কি না, সেটা তো আমরা জানব না? এটা সরকারের বিষয় সরকার দেখবে।
অভিভাবক বালা বেগম বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে এই চরের স্কুলে রুনা আপা চাকরি করছেন। তিনি বিয়ে করেননি এবং তার কোনো বাচ্চা নেই। কিন্তু অফিসে তথ্য কি দিয়েছে সেটাতো বাপু হামরা কমু ক্যামনে?
অভিযুক্ত শিক্ষিকা রুনা খাতুন ভুয়া জন্মসাল এবং অবিবাহিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, বয়স ঠিকঠাক করে শোকজের জবাব দিয়েছি।
তিনি আরও স্বীকার করেন সন্তান না থেকেও ২০১৭ সাল থেকে তিনি সন্তানের নামে ৫০০ টাকা হারে শিক্ষাভাতা তুলেছেন।
প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, স্কুলটি যখন বেসরকারি ছিল তখনই একসঙ্গে আমরা চার শিক্ষক এখানে। ২০১০ সালে ২৫ অক্টোবর এখানে নিয়োগ নেই। পরবর্তী ২০১৩সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। কিন্তু সহকারী শিক্ষকের জন্মসাল ভুয়া ছিল তা আমরা কাগজপত্র দেখে টের পাইনি। ইএফটি পূরণ সময় বিষয়টি সবার নজরে আসে। বর্তমানে এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, তদন্ত শেষ হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি।
Posted ৩:১৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin