বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সালথা-নগরকান্দায় পাটের দামে ধস, কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

সালথা-নগরকান্দায় পাটের দামে ধস, কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

‘সোনালী আঁশে ভরপুর ভালোবাসি ফরিদপুর’— পাটের উৎপাদনের সেরা হওয়ায় স্লোগানটি ফরিদপুরে চাউর রয়েছে। সারাদেশের মধ্যে সোনালী আঁশ পাট উৎপাদনে বিখ্যাত ফরিদপুর। আর ফরিদপুরের মধ্যে পাট উৎপাদনে বিখ্যাত সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা। উভয় উপজেলার প্রধান অর্থকড়ী সফলই হচ্ছে সোনালী আঁশ পাট। এই দুই উপজেলা থেকে উৎপাতিত পাট দেশ ছাড়াও বিদেশের চাহিদা মেটায়। তাই এখানকার কৃষকদের ভাল থাকা না থাকা নির্ভর করে পাট আবাদের সাফল্য অর্জনের উপরে। কৃষকের যত স্বপ্ন পাটকে ঘিরেই।

তবে এবার ভরা বর্ষা মৌসুমে পানির অভাবে সঠিক সময় পাট জাগ দেয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন কৃষকরা। পরে কোন দিক না পেয়ে মাটি খুড়ে পাট জাগ দিতে বাধ্য হন তারা। এতে পাটের গুণগতমান নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কালা হয়ে যায় রং। সেই সাথে বদলে যায় পাটের দামও। মণপ্রতি পাটের দাম কমে গেছে ১৫ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে পাট আবাদ শুরু থেকে বাজারজাত পর্যন্ত পদে পদে ভোগান্তী মোকাবেলা করতে হতে হচ্ছে তাদের। মোট কথা, পাটের দাম আর মান ভাল না হওয়ায় কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেছে এবার। এমন অবস্থায় সরকারিভাবে পাট ক্রয়ের দাবি জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে উভয় উপজেলার কয়েক বাজারে পাটহাটা গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রির জন্য পাটের গাঁট বাজারে নিয়ে আসছেন কৃষকরা। দাম দেখাতে ও একটু বেশি দামে বিক্রির আশায় এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরছে তারা। আর ব্যবসায়ীরা দেশের সোনালী এই সম্পদ পাট কিনে গুদামে স্তূপ করে সাজিয়ে রেখেছেন। তবে পাট নিয়ে বাজারজাত করতে কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা গেছে।

নগরকান্দা, সালথা ও বালিয়া বাজারে আসা আজিজুল মিয়া, জব্বার মুন্সী ও হারুন শেখ বলেন, গত বছর যে পাট প্রতিমণ সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি করেছি। রং খারাপ হওয়ায় সেই পাট এবার সর্বোচ্চ ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করছি। তাও ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছে না। খারাপ মানের পাটের প্রভাব ভালো মানের পাটেও পড়েছে এবার। ভালো মানের পাট সর্বোচ্চ ২৬০০ থেকে ৩ হাজারের টাকার উপরে বিক্রি করতে পারছি না। এতে কাঙ্খিত খরচও উঠবে না। লোকসান গুণতে হবে অনেক। পাটের দাম কম হওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলেন, ঠিকমতো জাগ দিতে না পারায় পাটের রং ভালো আসেনি। তবে নদ-নদীতে যারা পাট জাগ দিতে পেরেছে তাদের পাটের মান কিছুটা ভালো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার যদি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনত, তাহলে কৃষকরা একটু লাভবান হতো।

পাট ব্যবসায়ী আবু মোল্যা, সজিব শেখ, আকরাম মিয়া ও আবু তালেব বলেন, গত বছর একমণ পাট ৩৫০০ থেকে ৩৮০০ টাকা পর্যন্ত পাটের বাজার ছিল। তেল ও সারের দামও কম ছিল। এতে কৃষকরা মোটামুটিভাবে চলতে পারছে। তবে এবার পাটের অবস্থায় খুবই খারাপ। পানির অভাবে কৃষকরা সঠিক সময় ঠিকমত পাট জাগ দিতে পারেনি। মাটি খুড়ে ও নোংরা-পচা পানি পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং কালো হয়ে গেছে। পাটের আশগুলোও অগোছালো হয়েছে। আবার তেল-সার ও দ্রব্যমূল্যেও দামও বেশি। তাছাড়া রং খারাপ এসব পাট মিল মালিকরা নিতে চায় না। তারা ভালো মানের পাট নিচ্ছে। যেকারণে পাটের দাম এতো কম। এই দামে পাট বিক্রি করে কৃষকরাও তাদের খরচ ওঠাতে পারবে না। আমরা ব্যবসায়ীরাও কাঙ্ক্ষিত আয় করতে পারছি না। এ অবস্থায় পাটের দাম নির্ধারণ করে দেওয়াসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পাট কেনা দাবি তাদের।

জানা গেছে, নগরকান্দায় ১২ হাজার ও সালথায় ১২ হাজার ২৪৭ হেক্টও জমিতে পাট আবাদ করা হয়, যা লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি। মোট আবাদি জমির প্রায় ৯১ শতাংশ জমি সোনালী আঁশ পাটের দখলে।

উপজেলা উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কিছুটা আমাদেও দেশের পাটের উপরে পড়েছে। এরপর আমাদের দেশের বড় বড় মিলগুলো বন্ধ থাকার কারণে পাটের দাম তেমন উঠছে না। পাশাপাশি এবার পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে একই পানিতে বারবার পাট পচানোর কারণে পাটের আঁশের মান গুনগত মান খারাপ হয়েছে। যেকারণে পাটের দামও কমেছে। এতে কৃষকরাও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, গার্মেন্টস ফ্যাক্টারীগুলোতে যদি সুতা তৈরী করতো তাহলে পাটের দাম অনেক বেশি পেত চাষিরা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]