
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
ডলার কেনাবেচায় যে অভিন্ন রেট নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে রফতানি ও আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবধান বেশি রাখা হয়েছে। এতে ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে রফতানিকারকরা চাপে পড়বেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের দিকে তাকিয়ে নয়, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ব্যাংকের স্বার্থে। কারণ সাড়ে ৫ টাকার এই ব্যবধান যেমন চাপে ফেলবে দেশের পুরো অর্থনীতিকে, তেমনি বাড়াবে বাণিজ্য ঘাটতি।
কোনোভাবেই যেন বাগে আনা যাচ্ছে না মার্কিন ডলারকে। দফায় দফায় নিজের দাম বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিকে দীর্ঘ সময় ধরে অস্থির করে রেখেছে বৈদেশিক এই মুদ্রাটি। তাকে বশ মানাতে এবার ব্যাংকিংখাতের দুই শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ মার্কেটে অভিন্ন রেটে বেচাকেনা হবে ডলার।
তবে এই সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের চাপে ফেলবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, রফতানি আয়ের চেয়ে অনেক বেশি ধরা হয়েছে আমদানি ব্যয়।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, রফতানি আয় এবং রেমিট্যান্সের মূল্যের যে ফারাক, সেখানে আমাদের প্রায় ১০ শতাংশ কম দেয়া হচ্ছে। এই জায়গাটায় সরকারের একটু কাজ করা দরকার। কারণ, এই দুটি অংশের মাঝামাঝি জায়গার থাকবে আমাদের আমদানি মূল্য। আমরা যখন বিভিন্ন ধরনের মেশিনারি পণ্য আমদানি করব, তখন দেখা যাবে যে আমাদের অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। তাই এই ফারাকটা কমানো গেলে ভালো হতো।
নতুন সিদ্ধান্তে দেখা যায়, রফতানিকারকরা এক ডলারের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা পাবেন; এরপর এক টাকা লাভ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে দেয়া হবে ১০৮ টাকা, এখানেও সুযোগ রয়েছে এক টাকা লাভের। আমদানি ব্যয়ের ক্ষেত্রে এই দুই আয়ের গড় অর্থাৎ ১০৪.৫ টাকা শোধ করতে হবে ব্যবসায়ীদের। হিসাব বলছে, রফতানি আয় দিয়ে আমদানি দায় মেটাতে একজন ব্যবসায়ীকে নিজের পকেট থেকে ভরতে হবে আরও সাড়ে ৫ টাকা। তাই ডলারকে ঠান্ডা করতে ব্যাংকগুলোর নেয়া এমন সিদ্ধান্ত দিন শেষে দেশের অর্থনীতিতে বরং নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি রফতানিকারকদের জন্য চাপ তৈরি করছে। আর রফতানিকারকদের জন্য চাপ তৈরি মানে অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করা। অতীত অভিজ্ঞতা থেকেও দেখা গেছে যে ব্যাংকগুলো আমদানি বা রফতানিকারকদের জন্য কাজ করে না। ব্যাংকগুলো কাজ করে নিজেদের স্বার্থে। এবারও তেমনটাই হয়েছে। আমরা যদি চওড়া দামে আমদানি করি এবং রফতানি করি কম দামে, সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই টাকার অঙ্কে একটা বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তেও ডলার মার্কেট যে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল হচ্ছে না এমন ঈঙ্গিতও দিয়েছে স্বয়ং সংগঠন দুটি। কারণ প্রতি সপ্তাহেই এই রেট নতুন করে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।
Posted ৪:৩৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin