শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আলঝেইমারস : স্মৃতির সঙ্গে লুকোচুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

আলঝেইমারস : স্মৃতির সঙ্গে লুকোচুরি

কিছুদিন আগে আমার চেম্বারে একজন বৃদ্ধাকে নিয়ে এলেন একজন মধ্যবয়সী নারী। বৃদ্ধা অসুস্থ, তা-ও চার-পাঁচ বছর হলো। কিছুই মনে রাখতে পারেন না। কী খেয়েছেন, তা-ও মনে থাকে না। প্রস্রাব-পায়খানা অনেক সময় বিছানা বা সোফায় করে দেন। মাঝেমধ্যে মল হাতে নিয়ে দেয়ালে লাগিয়ে দেন, কিন্তু বেচারার কোনো বিকার নেই। ছেলেমেয়েকে চেনেন না। মাঝেমধ্যে ফাঁকা পেলেই নিজের কাপড়চোপড় গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে চান। কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘আমার বাড়ি যাচ্ছি। ’ কিন্তু সমস্যা হলো অন্যখানে। খুব নাকি মিথ্যা কথা বলেন তিনি। বৃদ্ধার ছেলে বিদেশে থাকেন। মাকে খুব ভালোবাসেন। মাঝেমধ্যে ফোন করে মায়ের সঙ্গে কথা বললে তাঁকে জানান তিনি কিছুই খাননি, তাঁকে কেউ খেতে দেয় না। তাঁকে মারধর করে সবাই। এ পর্যন্ত কথা বলে মধ্যবয়সী নারী কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি বলছিলেন যে তাঁর সংসার ভেঙে যাচ্ছে। তাঁর স্বামী মাকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। মায়ের মুখে এসব শুনে সব বিশ্বাস করেছেন। এখন প্রতিদিনই ঝগড়া হচ্ছে।

বৃদ্ধার ছেলে না বুঝলেও চিকিৎসক হিসেবে আমি বুঝতে পারি। বৃদ্ধা আসলে ইচ্ছা করে মিথ্যা বলছেন না। তিনি রোগে আক্রান্ত হয়েই এমনটা বলছেন। তিনি যে রোগে আক্রান্ত তাকে বলে ‘ডিমেনশিয়া’ বা ‘স্মৃতিলোপ’।

 

ডিমেনশিয়া কী?

ডিমেনশিয়া ইংরেজি শব্দ। বাংলায় অর্থ করলে দাঁড়ায় বুদ্ধিবৈকল্য বা স্মৃতিলোপ। জন্মের পর একটি শিশু বিভিন্ন কিছু শিখতে শুরু করে। নানা বিষয় তার মস্তিষ্কে জমা হতে থাকে। যত বয়স বাড়ে, তত তার জ্ঞান বাড়তে থাকে। একসময় পরিপক্বতা আসে। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে তার মেধা কমতে শুরু করে। স্মৃতি থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায়। তার পরও নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারে। এমন এক সময় আসে, যখন নিজের দৈনন্দিন কাজ অন্য কারো সাহায্য ছাড়া করতে পারে না। এই অবস্থাকে ডিমেনশিয়া বলে।

ডিমেনশিয়া নিউরোলজিক্যাল একটি রোগ। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতি লোপ পায়। শুধু স্মৃতিলোপই নয়, পাশাপাশি কথা বলার সমস্যা, মনঃসংযোগ, এক্সিকিউটিভ ফাংশন বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এ সমস্যাগুলো অল্পমাত্রায় হলে কিন্তু ডিমেনশিয়া বলে না। এগুলো এমন পর্যায়ে কমতে হবে যে আক্রান্ত ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজকর্ম; যেমন—চাকরি, বাজার, ব্যবসা ইত্যাদি ব্যাহত হবে।

 

পরিসংখ্যান

বিশ্বব্যাপী ডিমেনশিয়ার প্রকোপ কিন্তু অনেক। প্রায় ৫০ মিলিয়ন লোক ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। এর বেশির ভাগ প্রায় ৬০ শতাংশ কিন্তু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫ বছরের পর প্রতি আটজনে একজন স্মৃতিভ্রমে আক্রান্ত হন।

প্রতিবছর প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে ডিমেনশিয়ায় নাম লেখায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫ মিলিয়ন এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন হতে পারে।

 

ডিমেনশিয়া নিয়ে বাংলাদেশে ২০১৯ সালের আগে জাতীয় পর্যায়ে কোনো সমীক্ষা হয়নি। তবে সম্প্রতি জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট (নিনস) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার প্রাদুর্ভাব বা ব্যাপকতা ৮.১ শতাংশ। সংখ্যার বিচারে যা ১১ লাখ। সমীক্ষায় বলা হয়, আগামী ২০৪১ সালে দেশে এসব রোগীর সংখ্যা হবে প্রায় ২৪ লাখ। অর্থাৎ বর্তমান সংখ্যার চেয়েও প্রায় তিন গুণ বেশি।

কারণ

ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিলোপ বলতে আমরা বৃদ্ধদের চিন্তা করি। তা ঠিক। কিন্তু শুধু বেশি বয়সীদের হয়, তা কিন্তু নয়। তরুণদেরও হতে পারে এটি। সাধারণত ৬০ বছরের বেশি বয়স্করা ডিমেনশিয়ায় বেশি ভোগেন। বয়স বাড়লে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দেখা গেছে, ৮৫ বছরের বেশি বয়সীদের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়। ডিমেনশিয়ার অনেক কারণ আছে। আলঝেইমারস ডিজিজ নামে রোগটি ডিমেনশিয়ার মূল কারণ। ডিমেনশিয়ার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ জায়গা নিয়ে আছে এটি। এ ছাড়া স্ট্রোককেন্দ্রিক ডিমেনশিয়া, ডিএলবি, পারকিনসনস ডিজিজ ডিমেনশিয়ায় স্মৃতি লোপ হতে পারে।

এ ছাড়া মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন, নরমাল প্রেসার হাইড্রোকেফালাস, হাইপোথাইরয়েড, ভিটামিন-বি১২ স্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার, অ্যালকোহল সেবন ইত্যাদি কারণে ডিমেনশিয়া হতে পারে।

লক্ষণ

আলঝেইমারস রোগীদের শুরুতে স্মৃতি কমে যেতে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তি মনে রাখতে পারেন কম। কোনো জিনিস খুঁজে পেতে কষ্ট হয়, টাকা-পয়সার হিসাব রাখতে পারেন না। অফিসের কাজ আগে ঠিকমতো করতে পারলেও এখন পারছেন না। ড্রাইভিং করতে গেলে অ্যাকসিডেন্ট করা বা পথ ভুলে যাওয়া। এসব লক্ষণ নিয়ে শুরু হয় আলঝেইমারস রোগের। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে স্মৃতিলোপ। এর সঙ্গে যুক্ত হয় কথা বলার সমস্যা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা।

আচরণগত সমস্যা : শুরুতে খুব পরিচিত জায়গা ভুলে যান। স্টাইলিশ কেউ হঠাৎ করে ছেঁড়া কাপড়চোপড় পরা শুরু করেন। যিনি সব সময় চুল পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখতেন, তাঁর চুল থাকে উষ্কখুষ্ক। মুড খুব দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। নিজের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন থাকেন।

মানসিক সমস্যা :  শুরুতে আক্রান্ত ব্যক্তি তাঁর সমস্যা

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:০০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(205 বার পঠিত)
(191 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]