
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
নবীজির দেহ-নিঃসৃত ঘাম থেকে গোলাপের সুবাস পাওয়া যেতো। সাহাবায়ে কেরাম নবীজির হাতের ছোঁয়ায় অনুভব করতেন মিশকে আম্বরের সুবাস। নবীজির পদচারণায় বিরাজ করত চামেলির সুঘ্রাণ। আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবিবকে এমন কুদরতি বৈশিষ্ট্য প্রদান করে ছিলেন।
মেশক আম্বর অতি উন্নত মানের সুগন্ধি। হরিণের মৃগনাভি থেকে তৈরি করা হয়। নবীজি (সা.)-এর ঘ্রাণ ছিল এর চেয়েও বেশি সুগন্ধিময়। জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যে পথ দিয়ে হেঁটে যেতেন, কেউ তার তালাশে বের হলে সে সুবাস থেকে চিনে নিতে পারত। বলত রাসুল (সা.) এই পথ ধরে গমন করেছেন। পথিকরা নববী সুবাসে বিমোহিত হতো। আনাস (রা.) ১০ বছর নবীজির খেদমত করেছেন। তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন ‘আমি আম্বর, মেশক ও অন্য কোনো সুগন্ধি নববী সুবাস থেকে অধিক সুবাসিত পাই নি। (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩০)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে বলেন—আমি রাসুল (সা.)-এর হাতের তালুর চেয়ে কোমল ও মসৃণ কোনো রেশম স্পর্শ করিনি। তাঁর ঘামের চেয়ে চমৎকার সুগন্ধি আমি কখনো পাইনি। (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩১)
জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুল (সা.) তার গালে হাত বুলিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, তার হাতের এমন কোমলতা ও সুবাস অনুভব করেছি, যেন তা আতরের কস্তুরি থেকে বের করে এনেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৩২৯)
আনাস (রা.) নবীজির চেহারা দেখার পর এভাবে বর্ণনা দিয়েছেন, নবীজি (সা.)-এর চেহারায় বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটা মুক্তোর মতো দেখা যেত। জাবের (রা.) বলেন, ‘প্রভাতের নামাজ আমি নবীজির পেছনে পড়লাম। নামাজান্তে তিনি ঘরের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আমি সঙ্গে চললাম। রাস্তায় কয়েকটি শিশু নবীজি (সা.)-এর সামনে এলো। তিনি একেক করে প্রত্যেকের গালে হাত বুলিয়ে দিলেন। তিনি আমার গালেও হাত বুলালেন। আমি রাসুল (সা.)-এর মোবারক হাতে শুধু শীতলতাই অনুভব করলাম না, বরং এমন একটি সুগন্ধি অনুভব করলাম যেন তিনি সে সুবাস আতরে শিশি থেকে নিয়ে এসেছেন। রাসুল (সা.) যখন কারো সঙ্গে মুসাফাহা করতেন, সারাদিন সে হাত থেকে মুসাফাহার সুগন্ধি সুবাস ছড়াত। কোনো শিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে, সুগন্ধির কারণে অন্যদের থেকে তাকে পৃথক করা যেত। রাসুল (সা.)-এর বিশেষ খাদেম আনাস (রা.) এর মাতা উম্মে সুলাইম (রা.)-এর বাসায় গিয়ে কায়লুলা করতেন (অর্থাৎ দুপরের আহারের পর যে বিশ্রাম নেওয়া হয়) উম্মে সুলাইম চামড়ার বিছানা পেতে দিতেন। নবীজি (সা.) প্রচুর ঘর্মাক্ত হতেন। উম্মে সুলাইম (রা.) সেই ঘাম জমা করতেন। তিনি তা সুগন্ধির সঙ্গে মিশিয়ে নিতেন। একবার রাসুল (সা.) জাগ্রত হলে জিজ্ঞাসা করলেন, উম্মে সুলাইম, এগুলো কী? আরজ করলেন, আপনার ঘাম। এগুলো আমি সুগন্ধির সাথে মিলিয়ে নিচ্ছি। কেননা আপনার ঘাম সব সুগন্ধির চেয়ে উত্তম। (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩১)
রাসুল (সা.)-এর শরীর মোবারক ঐশীভাবে সুগন্ধিময় থাকা সত্ত্বেও ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর অজু করে খোশবু লাগাতেন। কেউ সুগন্ধি হাদিয়া দিলে খুশি মনে গ্রহণ করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) কখনো সুগন্ধি-আতর ফেরত দিতেন না।’ (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ২৭১৩)
অন্য বর্ণনা মতে, রাসুল (সা.)-এর সুগন্ধির পাত্র ছিল। যা থেকে তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। মেশক ও ধুপকাঠি খুব পছন্দ করতেন।
Posted ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin