মঙ্গলবার ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস আজ

প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সব দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সব দিবস গুলোর মধ্যে একটি হলো বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস।

২৫ সেপ্টেম্বর, আজ বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস। এই দিবসটি ২০১০ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। যদিও বাংলাদেশে সেটা হতে সময় লেগেছে আরো চার বছর অর্থাৎ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে। এর আগে বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিস্টদের পালনের জন্য বিশেষায়িত কোনো দিবস ছিল না। আর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছিল বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়।

তারপর আস্তে আস্তে ছড়িয়েছে। এখন প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশে এই দিবসটি পালন করা হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগ, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও বিভিন্ন ফার্মেসী পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকাসহ বড় বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে উৎসাহের সঙ্গে র‌্যালি ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি,সেমিনার ও বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পালনের মাধ্যমে দিবসটি নিয়মিত পালন হয়ে আসছে।

তবে কেন এই দিবস?

এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ফার্মেসি পেশায় যারা কর্মরত আছেন তাদেরকে উৎসাহ প্রদান এবং এই পেশা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, তাদের গুরুত্ব সমাজের সামনে তুলে ধরা, তাদের সম্পর্কে সঠিক ধারণা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। এজন্যই মূলত ২০১০ সাল থেকে সারাবিশ্বে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে।

একটু পেছনের ইতিহাস যদি দেখি তাহলে দেখা যাবে, বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস প্রথম পালনের উদ্যোগ নেয় আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ফেডারেশনস (এফ আই পি), একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন যারা ফার্মেসীর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পেশাজীবী, গবেষক, বিজ্ঞানিদের নিয়ে কাজ করে। পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১৪০ টি সংগঠন এবং প্রায় ৪ মিলিয়ন ফার্মেসী সংযুক্ত মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত। ১৯১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই কারণে মূলত ২৫ সেপ্টেম্বরকে ফার্মাসিস্ট দিবস হিসেবে প্রস্তাব করা হয়।

২০০৯ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ফেডারেশনের কাউন্সিল মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তুরকিশ ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ২৫ সেপ্টেম্বরকে ফার্মাসিস্ট দিবস পালনের জন্য প্রস্তাব করে। এই প্রস্তাব কাউন্সিল কতৃক সর্বসম্মতি ক্রমে গৃহীত হওয়ার পর ২০১০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এই দিবস পালন হয়ে আসছে। এই উপলক্ষে প্রতি বছর নতুন নতুন থিম দেয়া হয় যা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টদের সঠিক অবস্থান তুলে ধরতে সাহায্য করে।

২০২২ সালের থিম- ‘ফার্মেসি স্বাস্থ্যকর বিশ্বের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ’। বিভিন্ন দ্বন্দ্ব, ভিন্ন রাজনীতি ও সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যসহ সব বাধা কাটিয়ে স্বাস্থ্যের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে এবার পালিত হচ্ছে দিবসটি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই দিবসের গুরুত্ব অনেক। শুরুতেই বলেছিলাম ফার্মাসিস্টদের নিয়ে সাধারণ মানুষের কী ধারণা। এই ধারণার পরিবর্তন অবশ্যই অবশ্যই প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সেবায় ফার্মাসিস্টদের কী ভুমিকা, কেন তাদের প্রয়োজন, স্বাস্থ্য সেবায় ভবিষ্যতে তাদের ভুমিকা কী হতে পারে, এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার এক মুখ্য সময়।

বার বারই ওষুধের নিরাপদ ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। ওষুধের অনিরাপদ, অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলেই দেখা দিচ্ছে ‘আ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট’র মতো কিছু মারাত্মক জটিলতা। মানুষকে ওষুধের এই নিরাপদ ব্যবহারে উৎসাহিত করা, সচেতনতা তৈরি করা অনেকটা নির্ভর করে ফার্মাসিস্টদের ওপর। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত দেশের কাতারে। সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য সেবা খাতকেও এগিয়ে যেতে হবে সমান তালে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মতো সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা আমাদের দেশে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আর সেখানে সরাসরি ফার্মাসিস্টদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিল্পনির্ভর ফার্মেসী চর্চার পাশাপাশি যদি ক্লিনিকাল ও কমিউনিটি ফার্মেসীর ধারণাকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় তবে তা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য এক মাইলফলক হবে। যদিও বিষয়টা বাস্তবায়নে সময়ের প্রয়োজন সেই সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনাও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার, কিন্তু এখনি সময় বিষয়গুলো নিয়ে সঠিক গবেষণা, পরিকল্পনা করার। যা আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারে বহুদুর।

শুধু তাই নয়, দেশের ক্রমবর্ধমান ওষুধশিল্পের প্রসার, জাতীয় অর্থনীতিতে ফার্মাসিস্টদের অবদান অপরিসীম। যা আমরা ছোট্ট একটা রিপোর্ট দেখলেই আমরা বুঝতে পারি। আনন্দবাজারের এক রিপোর্ট এ বলা হয়েছিল, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বের অনুন্নত ৪৮ দেশের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ। ২৫৭ কোম্পানির ২৪ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ। বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। রফতানি বাড়ছে দ্রুত। কর্মসংস্থান দুই লাখের। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই শিল্পকে আরো এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই ফার্মাসিস্টদের কেই গুরুত্ব দিতে হবে ।

এই বিষয়গুলো সামনে এনে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, দেশের স্বাস্থ্যখাতের সকল পর্যায়ে ফার্মাসিস্ট দের ভুমিকা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে এই দিবস। আগামী দিনে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফার্মেসী পেশাকে আরো সুসংহত ও সুদৃঢ় করতে ‘বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস’ পালনের বিকল্প নেই বললেই চলে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(217 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]