বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইতিহাস ঐতিহ্যে অনন্য রংপুরের “তাজহাট জমিদারবাড়ি”

মো: ফরহাদ হোসেন:   |   সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

ইতিহাস ঐতিহ্যে অনন্য রংপুরের “তাজহাট জমিদারবাড়ি”

‘তাজহাট জমিদারবাড়ি’ প্রাসাদটি রংপুর শহরের পুরান রংপুর তথা তাজহাটে অবস্থিত। যা এখন একটি যাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান।

মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে প্রাসাদটি নির্মান করেন। এতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর। মহারাজা গোপাল রায় ছিলেন হিন্দু এবং পেশায় ছিলেন একজন স্বর্নকার।
কথিত আছে, তার মনমুগ্ধকর ‘তাজ’ বা মুকুটের কারণেই এ এলাকার নাম হয় তাজহাট।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একটি শাখা হিসেবে ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রাসাদটি ব্যবহৃত হয়।
তৎকালিন প্রেসিডেন্ট এরশাদ বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীয়করণের লক্ষ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা সদরে বাংলাদেশের হাই কোর্ট বিভাগের আঞ্চলিক শাখা বা বেঞ্চ স্থাপন করেন যার একটি রংপুরে স্থাপিত হয়েছিল। পরে, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে এই পদ্ধতি তুলে দেয়া হয়। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাসাদটিকে একটি সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে।

স্থাপত্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করতঃ ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার রংপুর জাদুঘরকে স্থানান্তর করে এ প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসে। ঐতিহাসিক এ প্রাসাদটির সম্মুখভাগে মার্বেলের সিঁড়ি বেয়ে জাদুঘরে উঠলেই রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী কক্ষ যাতে রয়েছে দশম ও একাদশ শতাব্দীর টেরাকোটা শিল্পকর্ম। যেখানে রয়েছে সংস্কৃত এবং আরবি ভাষায় লেখা বেশ কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি যার মধ্যে রয়েছে মুঘল সম্রাট আওরাঙ্গজেবের সময়ের কুরআন সহ মহাভারত ও রামায়ন। পেছনের ঘরে রয়েছে বেশ কয়েকটা কাল পাথরের হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর প্রতিকৃতি।

প্রাসাদ চত্বরে রয়েছে বিশাল খালি মাঠ, সৌন্দর্যে ভরা ফুলের বাগান, গাছের সারি এবং প্রাসাদের দুই পাশে রয়েছে দুইটি পুকুর।

প্রাসাদটির প্রসস্ত প্রায় ২২০ ফুটের মত এবং উঁচু প্রায় চার তলার সমান। প্রাসাদটির গঠনশৈলী প্রাচীন মুঘল স্থাপত্য থেকে অনুপ্রাণিত বলে মনে করা হয়। প্রাসাদটির মধ্যভাগে বিশাল একটি গম্বুজ ও দুই পাশে তার ছড়িয়ে যাওয়া দালানগুলোর একটা মসজিদের অবয়ব থেকে যার প্রমান মেলে। তাজহাট যেই দিক থেকে বাংলাদেশের অন্য সকল প্রাসাদের থেকে আলাদা তা হল এর সিঁড়িগুলো। প্রাসাদে সর্বমোট ৩১ টি সিঁড়ি রয়েছে যা সম্পুর্ন ইতালীয় ঘরানার মার্বেল পাথরে তৈরি। একই পাথরে সিঁড়ি থেকে উঠে জাদুঘর পর্যন্ত মেঝের পুরোটা তৈরি। প্রসাদটির পশ্চাৎভাগে রয়েছে গুপ্ত সিঁড়ি। জনশ্রুতি আছে গুপ্ত সিঁড়িটি কোন একটি সুড়ংয়ের সাথে যুক্ত যা সরাসরি ঘাঘট নদীর সাথে যুক্ত । তবে নিরাপত্তা জনিত কারনে সিঁড়িটি এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

প্রাসাদের সুন্দর ফোয়ারাটির শ্বেতশুভ্র মার্বেল ও তার সবুজাভ নকশা কালের বিবর্তনে কিছুটা মলিন হলেও এখনো এর জৌলুষ বুঝা যায়। কথিত আছে রাণীর জন্যেই বিশেষ করে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

জমিদারবাড়িটি রংপুর শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জাদুঘরে নির্দিষ্ট প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করে প্রবেশ করা যায়। প্রাসাদ চত্ত্বরে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চাইলে গাড়ীর জন্যও নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]