
নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৩ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট
ইরানের ধর্মীয় নেতারা ১৯৮০ সালের গ্রীষ্মকালে দেশটিতে ধর্মীয় সংস্কৃতির পালাবদল ঘটাতে এক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতর তাদের শাসনের বিরোধী যেসব ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী আর ধর্মীয় মধ্যপন্থীরা ছিলেন তাদের উৎখাত করাই ছিল তাদের এই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য।
ধর্মীয় নেতারা মনে করেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষ এই গোষ্ঠীগুলোই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে মানুষের মনে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার বীজ বপন করছে।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর তখন এক বছরের কিছু বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। ফারুখ নেগান্দর তখন ধর্মনিরপেক্ষ একটি বামপন্থী দল ফাদা-ইয়ানের নেতা। তিনি ও তার কমরেডরাও শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। ওই দলের বেশিরভাগই ছিলেন ছাত্র। কিন্তু তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন শাহ-পরবর্তী ভিন্ন এক ইরানের।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘গুচ্ছ বোমার চেয়েও মারাত্মক’
ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখন ছিল ধর্মনিরপেক্ষ মানুষে ভরা, বিবিসির গুলনুশ গুলশানিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন ফারুখ নেগান্দর।
আয়াতুল্লাহ খোমেনি চেয়েছিলেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালগুলোর কণ্ঠ হবে কট্টর ইসলামি ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। শাহ ক্ষমতাচ্যুত হবার পর, তিনি ও তার অনুসারীরা ঘোষণা করলেন যে তাদের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মূল লক্ষ্য হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অনৈসলামিক চেতনার মানুষদের বরখাস্ত করা বা তাদের সরিয়ে দেয়া এবং সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইসলামী শাসনে বিশ্বাসী ধর্মীয় ব্যক্তিদের অধীনে একত্রিত করা।”
দেশটিতে সাংস্কৃতিক পালাবদলের এই বিপ্লব আসলে শুরু হয়েছিল এর মাস দুয়েক আগে- ১৯৮০ সালের বসন্তকালে।
ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখন নানা ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে রীতিমত উত্তাল। যেটাকে ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি দেখেছিলেন একটা হুমকি হিসেবে।
“আমরা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ভয়ে ভীত নই। আমরা সামরিক হামলায় ভয় পাই না। আমরা ভয় পাই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। তারা গুচ্ছ বোমার চেয়েও মারাত্মক,” বলেছিলেন আয়াতোল্লাহ খোমেইনি।
তার বার্তা ছিল খুবই স্পষ্ট। এপ্রিলের শেষ দিকে রেভল্যুশনারি কাউন্সিল তিনদিনের একটা চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেছিল, এই সময়ের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত করতে হবে। নয়ত- ” কাজটা শেষ করার জন্য আমাদেরই লোক পাঠাতে হবে” হুঁশিয়ারি দিয়েছিল রেভল্যুশনারি কাউন্সিল।
প্রতিরোধের স্ফুলিঙ্গ
মেহেদি খোরাসানি সেসময় ছিলেন গণিতের ছাত্র। তিনি ফাদা-ইয়ানকে সমর্থন করতেন। অন্য যেসব ছাত্র কাউন্সিলের জারি করা এই আল্টিমেটাম অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি তাদের সাথে যোগ দিলেন।
“লেকচারার, অধ্যাপকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। যাচ্ছিল শুধু শিক্ষার্থীরা,” বলেন খোরাসানি।
Posted ৩:০৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৩ অক্টোবর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin