
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট
হিগুয়েন তার সেরা সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদ-য়্যুভেন্তাসের জার্সি গায়ে জিতেছেন শিরোপা। আছে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক। তবু তার নাম এলে মানুষের মনে উঁকি দেয় বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার মঞ্চে লিওনেল মেসির কান্না। মেসির শিরোপাস্বপ্ন থমকে যাওয়ার দায় যে অনেকটা তারও। সেই গঞ্জালো হিগুয়েন মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই দিলেন অবসরের ঘোষণা।
মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল ইন্টার মিয়ামিতে খেলা আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়েন অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। চলমান মৌসুম শেষেই ফুটবলকে বিদায় জানাবেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৭৫ ম্যাচ খেলা এল পিপিতা।
রিয়াল মাদ্রিদ, নাপোলি, য়্যুভেন্তাস, চেলসি ও এসি মিলানের মতো ক্লাবে খেলা এই স্ট্রাইকার সোমবার (৩ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে অবসরের সিদ্ধান্ত জানান।
ইন্টার মিয়ামির জার্সিতে এ মৌসুমে এমএলএসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিগুয়েন। অথচ এমন ফর্মে থাকতেই ফুটবলকে বিদায় বলছেন তিনি। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরের এই লিগের মৌসুম শেষ হবে। তবে তার দল ইন্টার মিয়ামি যদি প্লে-অফে উঠতে না পারে তাহলে চলতি মাসেই ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলবেন তিনি।
ইন্টার মিয়ামির গোটা স্কোয়াডকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া হিগুয়েন নিজের বিদায়ের ঘোষণা দিতে গিয়ে আবেগে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘ফুটবলকে বিদায় জানানোর দিনটা চলেই এল। এই পেশা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, ভালো ও খারাপ সময়ের মধ্যে গিয়েছি, কিন্তু এ জন্য নিজেকে সুবিধাপ্রাপ্তই মনে হয়েছে।’ এ সময়ে তিনি তার সব ক্লাবের কোচিং স্টাফকে ধন্যবাদ জানান। বিদায়ের ঘোষণার ক্ষণে খারাপ স্মৃতিগুলো বাদ দিয়ে মনে রাখতে চাইলেন ভালো স্মৃতিগুলোই।
ইন্টার মিয়ামি এখন লড়ছে এমএলএসের প্লে-অফের টিকিট নিশ্চিত করতে। ক্যারিয়ারে বিভিন্ন দেশে লিগজয়ী তারকা ক্যারিয়ার শেষ করতে চান এমএলএসের শিরোপা জিতে। তিনি বলেন, ‘এমএলএস চ্যাম্পিয়ন হয়ে ক্যারিয়ার শেষ করাটা হবে স্বপ্নের মতো।’ এ মৌসুমে ইন্টার মিয়ামির জার্সিতে ২৬ ম্যাচে ১৪ গোল তার। মৌসুম শেষেই ইন্টার মিয়ামির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হতো তার।
২০০৯ সালে অভিষেকের পর আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৭৫ ম্যাচ ৩১ গোল করেছেন হিগুয়েন। খেলেছেন ৩টি বিশ্বকাপ। এর মধ্যে ২০১০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক। এটিই বিশ্বকাপে কোন আর্জেন্টাইনের শেষ হ্যাটট্রিক। জাতীয় দলের হয়ে কোনো শিরোপা জিততে না পারলেও খেলেছেন ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল। এ ছাড়া ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালেও দলে ছিলেন তিনি। তিনটি টুর্নামেন্টেই শিরোপাবঞ্চিত হওয়ার জন্য আলবিসেলেস্তেরা হিগুয়েনকেই দায়ী করেন অনেকটা। ২০১৮ বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি।
জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা না থাকলেও ক্লাবের হয়ে তার ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে ছিলেন বিশ্বসেরা স্ট্রাইকারদের একজন। আর্জেন্টিনার বড় ক্লাব রিভার প্লেট থেকে ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন তিনি। রিয়ালের হয়ে লা লিগায় ১৯০ ম্যাচে করেছেন ১০৭ গোল। ২০১৩ সালে মাদ্রিদ ছেড়ে ম্যারাডোনার ক্লাব নাপলিতে যোগ দেন। নেপলসের ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন কোপা ইতালিয়া ও সুপার কোপা ইতালিয়া। পরিণত হয়েছিলেন ক্লাবের ঘরের ছেলেতে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে সিরি ‘আতে এক মৌসুমে গড়েন ৩৬ গোলের রেকর্ড, যা অক্ষত আছে এখনও।
২০১৬ সালে নাপলি ছেড়ে ইতালির জায়ান্ট ক্লাব য়্যুভেন্তাসে যোগ দেন তিনি। ক্লাবটির হয়ে লিগে ১০৫ ম্যাচে করেছেন ৪৮ গোল। সেখানে তিনবার পান লিগ জয়ের স্বাদ। পাশাপাশি ২০১৬-১৭ মৌসুমে খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও। তবে ইউরোপসেরার পদক আর জিততে পারেননি।
এ ছাড়া সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য খেলেছেন এসি মিলান ও চেলসিতেও।
হিগুয়েনের বিদায়ের ঘোষণা নিয়ে ইন্টার মিয়ামির কোচ ফিল নেভিল বলেন, ‘যখন আপনি বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠবেন, অভিজ্ঞতা এবং সামর্থ্য থাকবে, তখন আপনি একাই দলকে টানতে পারবেন। শুরু থেকেই দেখিয়েছে সে বিশ্বমানের খেলোয়াড় এবং বিজয়ী।’
Posted ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin