শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাশরাফি বিন মর্তুজার ৩৯তম জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ০৫ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট

মাশরাফি বিন মর্তুজার ৩৯তম জন্মদিন আজ

দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক ও পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজার ৩৯তম জন্মদিন আজ (৫ অক্টোবর)। ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর তারিখের নড়াইলে জন্মগ্রহণ করেছেন বর্তমানে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি। জীবনের ৩৮ বসন্ত কাটিয়ে ৩৯তম বছরে পা দিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এ ক্রিকেটার।

ক্রিকেটকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানোর আগেই যোগ দিয়েছেন সক্রিয় রাজনীতিতে, লড়েছেন সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে, সেখানে নিতে হয়েছেন নিজ জন্মস্থানের এলাকার সংসদ সদস্য। নতুন এ পরিচয়ে সময় দিতে গিয়ে এখন ক্রিকেট থেকে খানিক দূরেই রয়েছেন মাশরাফি। তবে দেশের মানুষের কাছে সবসময়ই তার প্রথম পরিচয় লড়াকু এক ক্রিকেটার হিসেবে।

২০০১ সালের নভেম্বরে মাত্র ১৮ বছর বয়সে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক মাশরাফির। বৃষ্টির কারণে শেষ দুইদিনের খেলা হয়নি, ম্যাচের ফলাফল হয় ড্র। তবে জিম্বাবুয়ের একমাত্র ব্যাটিং করা ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার করে আলাদাভাবে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেসখ্যাত মাশরাফি।

জিম্বাবুয়ের একই সফরের ওয়ানডে সিরিজে রঙিন পোশাকেও পথচলা শুরু হয়ে যায় সুঠাম দেহের অধিকারী এ পেসার। তার অভিষেক টেস্টে হার এড়ালেও, ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে এখানেও বল হাতে ব্যতিক্রম মাশরাফি। জিম্বাবুয়ে ম্যাচ জেতে ৪২.২ ওভারে। যেখানে ৮.২ ওভার বোলিং করে ৩ মেইডেনের সহায়তায় মাত্র ২৬ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছিলেন অভিষিক্ত মাশরাফি।

অভিষেক ম্যাচে আলাদা করে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেয়া মাশরাফি পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই হয়ে থেকেছেন সবার চেয়ে আলাদা, নিজের জায়গা করেছেন সবার চেয়ে ওপরে। ঘাত-প্রতিঘাতের ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলতে পেরেছেন মাত্র ৩৬টি। যার সবশেষটি আবার ২০০৯ সালে। ইনজুরির কারণে এরপর আর সাদা পোশাকে খেলতে পারেননি তিনি।

তবু এখনও পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী পেসারের নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা। টেস্ট ক্যারিয়ার চলাকালীন তো নয়ই, টেস্ট থেকে বাধ্যতামূলক সরে যাওয়ার পরের ১১ বছরেও মাশরাফিকে উইকেটসংখ্যায় ছাড়াতে পারেনি বাংলাদেশের আর কোনো পেসার। টেস্টে তার মোট শিকার ৭৮ উইকেট, ব্যাট হাতে তিন ফিফটিতে রয়েছে ৭৯৭ রান।

ইনজুরির কারণে টেস্ট ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত হয়নি, তবে ওয়ানডেতে ম্যাচ কিংবা উইকেটসংখ্যায় তিনিই বাংলাদেশের সবার ওপরে। অনাকাঙ্ক্ষিত বাধায় থামতে হয়েছে বারবার, তবে দুর্দান্তভাবে ফিরেছেন প্রতিবার। গত মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজেও ছিলেন দলের সদস্য।

পঞ্চাশ ওভারের এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২২০ ওয়ানডে খেলেছেন মাশরাফি, শিকার করেছেন দেশের সর্বোচ্চ ২৭০ উইকেট। ২০০৬ সালে এক ম্যাচে মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। যা এখনও পর্যন্ত ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। ব্যাট হাতে এই ফরম্যাটে তার সংগ্রহ ১৭৮৭ রান।

২০০৬ সালে দেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়েই কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় মাশরাফির। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফরম্যাট থেকে বিদায় নিয়েছেন ২০১৭ সালের এপ্রিলে। মাঝের সময়ে ৫৪ ম্যাচে ৪২ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ১৩৬ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ৩৭৭ রান।

এ তো গেলো খেলোয়াড় মাশরাফির পরিসংখ্যান। তিনি অনন্য অধিনায়কত্বেও। নিঃসন্দেহে দেশের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক, অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে দেশের ইতিহাসের সেরা অধিনায়কও বটে। আর এমনটা বলা হবেই না কেন! মাশরাফির অধিনায়কত্বেই যে ছোট দলের তকমা গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন যেকোনো দলের বিপক্ষে সমানে লড়াই করে টাইগাররা।

মাশরাফির ইনজুরি জর্জরিত ক্যারিয়ারের ধাক্কা লেগেছে তার অধিনায়কত্বেও। ক্যারিয়ারে প্রথম যে ম্যাচে টেস্ট অধিনায়ক হন, সে ম্যাচেই পড়েন ইনজুরিতে, শেষ হয়ে যায় তার নিজের টেস্ট ক্যারিয়ার। তবে ম্যাচটি জিতেছিল বাংলাদেশ। তাই টেস্ট ফরম্যাটে ১ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে সেটিতেই অপরাজিত মাশরাফি।

অধিনায়কত্বের অধ্যায়েও ওয়ানডেতেই সবচেয়ে সফল মাশরাফি। ২০১৪ পরবর্তী সময়ে তার হাত ধরেই সেরা সাফল্যগুলো পেয়েছে বাংলাদেশ। খেলেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে, পৌঁছে গেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে, এশিয়া কাপের রানারআপ হয়েছে দুই আসরেই। এছাড়া প্রথমবারের মতো বহুজাতিক সিরিজের শিরোপা এসেছে মাশরাফির অধিনায়কত্বেই।

সবমিলিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশকে ৮৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। যার মধ্যে জিতেছেন ৫০টিতে। বাংলাদেশের আর কোনো অধিনায়ক ৫০ জয়ে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। জয়-পরাজয়ের হারেও (৫৮.১৩%) অন্য যেকোনো অধিনায়কের চেয়ে এগিয়ে মাশরাফি। টি-টোয়েন্টিতেও মাশরাফির অধীনে সর্বোচ্চ ১০টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

খেলোয়াড় কিংবা অধিনায়ক হিসেবে দেশের ক্রিকেটে অনেক সাফল্যের রুপকার মাশরাফির জন্মদিনে জাগোনিউজের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। কাকতালীয় বিষয় হলো, ২০১৪ সালে একই তারিখে জন্মগ্রহণ করেছে মাশরাফির দ্বিতীয় সন্তান সাহেল মর্তুজা। তাকেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৫ অক্টোবর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]