বৃহস্পতিবার ৫ই অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আজ বিশ্ব মেনোপজ দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট

আজ বিশ্ব মেনোপজ দিবস

প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সব দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সব দিবস গুলোর মধ্যে একটি হলো বিশ্ব মেনোপজ দিবস।

১৮ অক্টোবর, প্রতি বছর এই দিনে পালন করা হয় বিশ্ব মেনোপজ দিবস। যদি একটু ইতিহাসের দিকে যাই, মেনোপজ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সম্পর্কে মেয়েদের সচেতন করার উদ্দেশ্যেই মূলত অক্টোবর মাসটিকে বিশ্ব মেনোপজ মাস হিসেবে পালন করা শুরু হয়েছিল। ১৮০০ সালের দিকে ইংল্যান্ডের চিকিৎসকরা মেনোপজের সমস্যার উপশম করতে কার্বোনেটেড সোডা মিক্সচার দিতেন। তখনকার দিনে আফিম এবং গাঁজার ব্যবহারও করা হতো এই কাজে। তারপর ১৮৯০ সালে প্রথম ওভেরিন-এর ব্যবহার শুরু হয়। এটি মেনোপজের লক্ষণগুলোর উপশমে বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত প্রথম ওষুধ।

গরুর ডিম্বাশয় নির্মূল করে এই ওভেরিন তৈরি করা হতো। ১৯৩০-এর দশকে মেনোপজকে একটি ‘ঘাটতিজনিত রোগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা এইচআরটি এখন মেনোপজের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রচলিত একটি প্রতিবিধান। সর্বপ্রথম ২০১৪ সালে অক্টোবর মাসটিকে মেনোপজ মাস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। মূল উদ্দেশ্য, মেনোপজ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর নিরসন কীভাবে করা যেতে পারে সে ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা।

রজঃস্রাব বা ঋতুচক্র প্রতিটি মেয়ের প্রজননক্ষম জীবনকালের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মোটামুটি ভাবে প্রতি এক মাস অন্তর এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটি পর্যায়ক্রমে ঘটে থাকে। তাই বেশিরভাগ মানুষই এই নিয়মিত প্রক্রিয়াটিকে ‘মাসিক’ বলে জানেন। এই চক্র ২৮ দিন অন্তর পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয় বলে ধরা হয়। তবে বাস্তবে কিছুদিন আগে পরে হয়েই থাকে, একটা সময়সীমার মধ্যে দেখলে মোটামুটি ভাবে ২১ থেকে ৩৫ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক ঋতুচক্র হিসেবে গণ্য করা হয়।

ঋতুচক্রের মাঝামাঝি সময়ে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়। যৌনমিলনের ফলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মিলিত হলে তা থেকে জাইগোট এবং পরবর্তীতে ভ্রূণ তৈরি হয়। তবে জরায়ুতে শুক্রাণু সঠিক সময়ে না পৌঁছাতে পারলে, ডিম্বাণু নষ্ট হয়ে যায় এবং জরায়ুর ভিতরের দেওয়াল থেকে এন্ডোমেট্রিয়াম স্তর ভেঙে পড়ে। ফলত এই চক্রের শেষের দিকে ভগ্ন কোষস্তর, মিউকাস, রক্ত মিশ্রিত তরল টানা কয়েকদিন ধরে যোনিপথ দিয়ে নির্গত হতে থাকে। এই ক্ষরণকেই বলা হয় রক্তস্রাব বা রজঃস্রাব।

একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে যায়। তখন আর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ হয় না, রজঃস্রাবও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়টাকে বলা হয় মেনোপজ। তবে মাসিক রজঃস্রাব বন্ধ হয়ে যাবার এই প্রক্রিয়াটি আবার হঠাৎ করে হয় না। পাঁচ থেকে সাত বছর জুড়ে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। প্রজননক্ষম একজন নারীর প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার এই সময়কালকে জলবায়ু সংক্রান্ত বলা হয়।

মেনোপজের বয়স আবার সবার ক্ষেত্রে এক হয় না। গড়ে ৫০ বছর ধরা হলেও ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে যে কোনো সময় হতে পারে। তবে সার্জারির মাধ্যমে ডিম্বাশয় কেটে বাদ দিলে অনেক কম বয়সেও মেনোপজ আসতে পারে। এটিকে সার্জিক্যাল মেনোপজ বলা হয়। এছাড়া যাদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস), এন্ডোমেট্রিয়োসিস, থাইরয়েডের সমস্যা বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা থাকে তাদের ক্ষেত্রেও মেনোপজের বয়স স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ধূমপান বা মদ্যপান করলেও অনেক সময় এরকম হতে পারে।

মেনোপজ শুরু হওয়ার প্রথমের দিকটায় রজঃস্রাব অনিয়মিত হয়ে পড়ে, কোনো মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম সময়ে আবার কোনো মাসে বেশি সময় পর রজঃস্রাব হতে পারে। এই সময়ে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এর সবই মূলত ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের ঘাটতিজনিত কারণে হয়ে থাকে। কারো কারো শরীরে অত্যধিক গরম অনুভূত হওয়া, ঘুমের সমস্যা, মাথাব্যথা, অত্যধিক ঘাম হওয়া, শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া, যৌনমিলনে আগ্রহ কমে যাওয়া এই সমস্ত সমস্যা হয়। কারো কারো মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত মানসিক উদ্বেগ, বিরক্তিভাব, খিটখিটে মেজাজ, অবসাদ, মুড সুইং, মনঃসংযোগ করতে না পারা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

এইসব সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে কিছু দীর্ঘমেয়াদী অসুখের সম্ভাবনাও বাড়ে। মেনোপজের পরের সময়টাতে হার্টের রোগ, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, সেরেব্রাল স্ট্রোক, অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওপেনিয়া ইত্যাদি অসুখ অনেক সময় বেড়ে যায়। মেনোপজ সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যার থেকে পরিত্রাণ পেতে গেলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

তবে মেনোপজ পরবর্তী জীবন সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে গেলে কিছু সাধারণ উপায় মেনে চলা দরকার। পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন ছোট মাছ, দুধ খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। মোটামুটিভাবে খাদ্যতালিকায় ৪০ শতাংশ শর্করা, ১৫ শতাংশ আমিষ এবং ৪৫ শতাংশ শাকসবজি ও ফলমূল থাকা ভালো। বলাই বাহুল্য ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ রাখতে হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(151 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]