
নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট
প্রতি বছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সব দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সব দিবসগুলোর মধ্যে একটি হলো বিশ্ব স্ট্রোক দিবস।
স্ট্রোক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উদযাপন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘না করলে সময় ক্ষেপন, স্ট্রোক হলেও বাঁচবে জীবন’।
বিশ্বব্যাপী একটি আতংকের নাম স্ট্রোক। স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ। স্ট্রোক রোগটিকে অনেকে হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললেও এটি মূলত মস্তিষ্কের রোগ। মস্তিষ্কের কোনো স্থানের রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে বা ব্লক হলে ঐ স্থানের রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কের ঐ বিশেষ এলাকা কাজ করতে পারে না। এটিই স্ট্রোক রোগ। স্ট্রোক কোনো সাধারণ রোগ নয়, কোনো ব্যক্তি স্ট্রোক করলে তার ক্ষয়ক্ষতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মারাত্মক হয়ে থাকে।
চিকিৎসকরা জানান, স্ট্রোক তিন ধরনের। মাইল্ড স্ট্রোক, ইসকেমিক স্ট্রোক ও হেমোরেজিক স্ট্রোক।
>>> মাইল্ড স্ট্রোকে রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ সাময়িক বন্ধ হয়ে আবারও চালু হয়।
>>> ইসকেমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের ও শরীরের অন্যান্য স্থানের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধে।
>>> হেমোরেজিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে যায়।
এ রোগে মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি বেশি থাকে। প্রায় প্রতি ছয় সেকেন্ডে একজন সুস্থ মানুষ স্ট্রোক করে থাকেন। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, সারা বিশ্বে প্রতি ছয়জনে একজন এই রোগের ঝুঁকিতে আছে। প্রতি বছর প্রায় ১৫০ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয় যার মধ্যে ৬০ লাখ মানুষ মারা যান এবং ৫০ লাখ মানুষ আজীবনের জন্য বিকলাঙ্গ হয়ে পরেন।
এ রোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে দেশে দ্রুত স্ট্রোক বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, মস্তিস্কের বিশেষ কিছু অংশ শরীরের যে যে অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে, স্ট্রোক হলে সেসব অংশের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে। মস্তিস্কের এক দিক আক্রান্ত হলে শরীরের উল্টো দিক বিকল হয়ে পড়ে।
স্ট্রোকের লক্ষণ হাত-পা হঠাৎ অবশ হয়ে যাওয়ার কারণে তা নাড়াতে না পারা, মুখ বেঁকে যাওয়া, হাসার সময় মুখ অন্য পাশে চলে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া। এ ছাড়া শরীরের এক পাশ অবশ হওয়া, হঠাৎ চোখে না দেখা, খাবার গিলতে সমস্যা, হাঁটতে না পারা, হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হওয়া। এ ছাড়া বমি বমি ভাব বা বমি, ঘুম ঘুম ভাব, চোখে একটি জিনিস দুটি দেখা। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবজ্ঞা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সম্প্রতি এক সভায় ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ নানা কারণে স্টোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে উচ্চ রক্তচাপের কারণে বেশিরভাগ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। সমীক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করে ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে যারা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপের রোগী। স্ট্রোকে আক্রান্তদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ রোগী অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করেন। দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত ১৯ শতাংশ রোগীর দেহে অতিরিক্ত মেদ থাকে। ১৭ শতাংশ রোগী মানসিক চাপের শিকার।
বাংলাদেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। দেশে বর্তমানে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে ভুগছে। স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতি এক হাজারে অন্তত ১০ জন।
Posted ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin