
এএইচএম মাহবুবুল হাসান ভুইয়া পিংকু | রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকার ১৪২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৩২ কিলোমিটার অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ও সমুদ্রের উচ্চ জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রের লোনাপানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপকূল রক্ষার বেড়িবাঁধ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। এসব বেড়িবাঁধ অরক্ষিত হয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলের ৫০ হাজার বাসিন্দা।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং প্রভাবে উচ্চ জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০ থেকে ২৫ টি পয়েন্টে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, শিলকূপ, সরল, খানখানাবাদ, সাধানপুর, পুকুরিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ঐসব এলাকার ফসলি জমি, মৎস্য ঘের, ঘর বাড়ি, রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিকে ছনুয়া এলাকায় এলজিইডির নবনির্মিত ৫ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকার মাওলানা আশরাফ আলী সড়ক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। অন্যদিকে ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, খানখানাবাদ, উপজেলা এলজিইডি’র কয়েকটি সড়ক ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মরা লাশের ন্যায় হয়ে গেছে।
এছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় তীরবর্তী বেড়িবাঁধ ভেঙে ছনুয়া, সরল, শেখেরখীল, খানখানাবাদের রায়ছটা, কদমরসুল ও প্রেমাশিয়া, বাহারছড়ার রত্নপুর, মিনজীরিতলা, কাথরিয়ার বাগমারা, গন্ডামারার আলোকদিয়া ও খাটখালী, পশ্চিম ও পূর্ব বড়ঘোনা, সাধনপুরের রাতারখোদ্দ গ্রাম, উপকূলীয় জলকদর খাল সংংগ্ন পুঁইছড়ির ফুটখালী, আরবশাহ্ ঘোনা, সরলিয়া ঘোনা, ছনুয়ার মধুখালী, আবাখালী ও খুদুকখালী, চাম্বলের ডেপুটিঘোনা, বাংলা বাজার, শীলকূপের পশ্চিম মনকিচর, শেখেরখীলের সরকার বাজার, ফাঁড়ির মুখ, এবং লালজীবন, ও খানখানাবাদের কদম রসুল গ্রাম প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে প্রতিদিন পানি প্রবেশ করছে। এতে এসব নিম্নাঞ্চলের ৭০ ভাগ বসতঘর জোয়ারের পানি ডুবে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায, বাঁশখালীতে ১৪২ কিলোমিটার বেরিবাধ রয়েছে। তার মধ্যে ৩৬ কিলোমিটার বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। এছাড়াও সাঙ্গুখাল, জলকদরখাল, ছনুয়াখাল, শেখেরখীলখালসহ ১০৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হয়েছে। উপকূলীয় ৩৬ কিলোমিটারের মধ্যে ইতিমধ্যে ১২.৯ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধে সিসিব্লক থাকলেও প্রায় ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত রয়ে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নে প্রায় ৪ কিমি বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শেখেরখীল ইউনিয়নে বিভিন্ন পয়েন্টে ১.৫ কি.মি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গণ্ডামারায়, ৩ কি.মি, সাধনপুরে ১.৫ কি. মি, চাম্বলে ০.৬৫ কি.মি, সরলে ০.৫০ কি.মি, খানখানাবাদ ১.০০ কি.মি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এসব বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ জানান, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছনুয়া এলাকায়। এই ইউনিয়নের প্রতিটি সড়ক ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ও জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে ইউনিয়নের প্রায় সড়ক। এছাড়াও ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধে প্রতিদিন লোকালয়ে প্রকাশ করছে জোয়ারের পানি। আমি কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি দ্রুত সড়ক সংস্কারের অনুরোধ জানায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী সময় উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পরিদর্শন করেছি আমরা। প্রাথমিক তথ্য মতে ছনুয়া, শেখেরখীল, গণ্ডামারা, শিলকূপ, চাম্বল, সরল, খানখানাবা ও সাধনপুর এলাকাশ ১৪ কি. মি বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের পুনরায় সংস্কার করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদ জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে ছনুয়ায় ৫ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকায় নির্মিত আশরাফ আলী সড়কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এলজিইডির নির্মিত সড়কের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এবং জোয়ারের পানির কারণে বিভিন্ন সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
Posted ৪:২৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin