বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ বিশ্ব জেলিফিশ দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

আজ বিশ্ব জেলিফিশ দিবস

প্রতি বছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সব দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সব দিবসগুলোর মধ্যে একটি হলো বিশ্ব জেলিফিশ দিবস।

বিশ্ব জেলিফিশ দিবস প্রতিবছর ৩ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী দিনটি উদযাপন করা হয়। তবে বাংলাদেশে এবারই প্রথম দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ কক্সবাজারে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (বিওআরআই) দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

জেলিফিশ এক ধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণী যাদের পৃথিবীর সব মহাসাগরে দেখতে পাওয়া যায়। নামে ‘ফিশ’ হলেও এটি মাছ নয়, এর মেরুদণ্ড নেই। এমনকি বাহ্যিক গঠনে এদের সঙ্গে মাছের কোনোরূপ মিল পাওয়া যায় না।
ঘণ্টাকৃতি জেলীসদৃশ প্রাণীটি প্রাণীজগতের নিডারিয়া পর্বের সিফোজোয়া শ্রেণীর অন্তর্গত। জেলিটিন সমৃদ্ধ ছাতার মতো অংশ এবং ঝুলে পড়া কর্ষিকা – এ দুই অংশে প্রাণীটির দেহ গঠিত।

অন্তত পাঁচ হাজার কোটি বছর ধরে সাগরে এদের বাস। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই প্রানীটির শুরু ডাইনোসোরের চেয়ে আরো তিন গুণ আগে। দক্ষিণ গোলার্ধে যখন বসন্তকাল তখন বিশ্ব জেলিফিশ দিবসটি পালন করা হয়। কারণ এই মৌসুম থেকেই প্রাণীগুলো উত্তর গোলার্ধের দিকে অভিবাসন শুরু করে। মানুষের চেয়ে আদিম এই প্রাণীর সম্মানার্থে দিবসটি পালন করা হয়। যদিও কখন থেকে দিবসটির উত্পত্তি, তা অস্পষ্ট। তবে বিভিন্ন সূত্র মতে ২০১৪ সাল থেকে দিবসটি নিয়মিত পালিত হয়ে আসছে।

আগেই বলে নিচ্ছি অসম্ভব সুন্দর এই প্রাণীটির মাথা ও হৃদয় বলতে কিছু নেই। অথচ কোন প্রাণী লাভাররা এর প্রেমে পড়ে যায়। এদের দেহের ৯৮ শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত। জেলিফিসের ই এক প্রজাতি বক্স জেলিফিস এর আছে লম্বা কর্ষিকা যা নেমাটোসিস্ট ও বিষ বহন করে। এর হুলের আঘাত প্রাণঘাতী হতে পারে এবং মাত্র চার মিনিটেই শিকারকে মেরেও ফেলতে পারে অর্থ্যাৎ সাপের বিষকেও হার মানিয়ে দেয়। এগুলোর বিষ-রোধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। প্রতিটি বক্স জেলিফিশে ৬০ টিরও বেশি মানুষকে হত্যা করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ জমা থাকে।

জেলিফিস সংকুচিত হয়ে পেন্সিলের সাথে লাগানো রাবারের ন্যায় ছোট হতে পারে আবার প্রসারিত হয়ে ৫০০ পাউন্ডের মত আকারের প্রসারিত হতেও পারে। সবচেয়ে ছোট স্টোরোক্লাদিয়া ও ইলেউথেরিয়া জেনারায় রয়েছে, যাদের বেল ডিস্ক রয়েছে মাত্র ০.৫ মিলিমিটার থেকে কয়েক মিলিমিটার ব্যাস পর্যন্ত। অপরদিকে বিশ্বের বৃহত্তম জেলিফিশ লায়ন ম্যান জেলিফিশ। এরা প্রায় ১২০ ফুট পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে! তবে ওজন এবং ব্যাসের দ্বারা সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম জেলিফিশ হ’ল টাইটানিক নোমুরার জেলিফিশ। এদের ওজন ৪৪০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।

মুন জিলিফিসের শরীরের মাঝখানে চির ধরে আবার জোড়া লেগে যায়। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, আবার টিস্যুগুলো জন্মায় আর আগের অবস্থায় ফিরে যায়। চীনের শিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীববিদ্যার ছাত্র জিনরু হে ২০১১ সালে সাগর থেকে একটি পুরুষ মুন জেলিফিশ সংগ্রহ করে গবেষণাগারে লালন-পালন শুরু করেন। ১৮ মাস পরে প্রাণীটি বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে মরে যায়।

জিনরু সেই মরদেহটি নতুন পাত্রে নিয়ে নতুন পানিতে রেখে দেন এবং সতর্ক পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখেন। তিন মাস পরে আবাক করার মতো ঘটনা ঘটে। মৃত দেহ থেকে নতুন শাখা প্রশাখা গজাতে শুরু করে। গবেষকেরা বলেন, জেলিফিশের নিষিক্ত ডিম সাধারণত শূককীটে পরিণত হয়। আর তা থেকেই প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। ক্যান্সারের কোষের কার্যক্রমের সঙ্গে মুন জেলিফিশের শরীর পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার মিল রয়েছে। ক্যান্সার কোষও এ রকম অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়ায়।

কখনই বার্ধক্য আসেনা ব্যাকওয়ার্ড এজিং জেলিফিশের। বয়সের ভারে এদের মৃত্যু হয়না। বয়সকে লুকিয়ে ফের যৌবনে ফিরে যাওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে এই প্রাণীটির। কখনো এসব জেলিফিশের দেহের কোনো অংশে আঘাত লাগলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে এরা ‘পলিপ দশা’ তে চলে যায়। পলিপের আকারে দেহের চারপাশে মিউকাস মেমব্রেন তৈরি করে তারা। এরপর ক্ষতিগ্রস্থ অংশ সেরে উঠলেই পলিপ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে তারা। তখন বিজ্ঞানীরা এটা দেখে অবাক হন যে, পলিপ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা জেলিফিশগুলোর দেহের প্রায় সব কোষই নতুন ও সজীব।

আর এভাবেই নিজেদের বয়স কমিয়ে যৌবনে চলে আসে তারা। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এসব জেলিফিশ তিন দিন পলিপ অবস্থায় থেকে শরীরের সব কোষ রূপান্তর করে ফেলে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বার্ধক্যে উপণিত হলে জেলিফিশেরা বার্ধক্যের উল্টো দিকে ধাবিত হয়।

জেলিফিশের কিছু কিছু প্রজাতি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে মানুষের খাদ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। চীন, জাপান ও কোরিয়ার মতো বেশ কিছু জায়গায় এটি খুব মজার খাবার হিসেবে বিবেচিত। সালাদে, নুডলসে এবং সয়া সস দিয়ে প্রায়ই এদের খাওয়া হয়। থাইল্যান্ড প্রতিবছর জেলিফিশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মদ্রা অর্জন করছে। এ ছাড়া জেলিফিশ কোলাজেনের উত্স হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, ওষুধশিল্পে এবং বিশ্বজুড়ে পাবলিক অ্যাকোয়ারিয়ামে প্রদর্শিত হয়।

সামুদ্রিক বিজ্ঞানী এবং বিওআরআইয়ের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, জেলিফিশ সমুদ্রের নিচের খাদ্যশৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এটি যদিও অপেক্ষাকৃত ছোট ও সহজ প্রাণী।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(218 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]