শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরিশালে বিএনপির সমাবেশের আগের দিন বেলস পার্কে জনতার ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

বরিশালে বিএনপির সমাবেশের আগের দিন বেলস পার্কে জনতার ঢল

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ, জ্বালানি ও নিতপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বিধান পুনরুদ্ধারসহ দলের অন্যান্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ কাল শনিবার।

তবে আজ শুক্রবার থেকে গণপরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় আগেভাগেই সমাবেশস্থল বেলস পার্কে জড়ো হয়েছেন লক্ষাধিক নেতাকর্মী। বিএনপির এই সমাবেশে অংশ নিয়েছেন সাধারণ মানুষও। সমাবেশের দুদিন আগে থেকেই মাঠে অবস্থান নিয়েছেন অনেকেই। সবার একই দাবি সরকারের পরিবর্তন। এবং সরকার পরিবর্তনে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত নেতাকর্মীরা।

এ সময় তারা ‘ভোট চোর ভোট চোর শেখ হাসিনা ভোট চোর, ছি ছি হাসিনা লজ্জায় বাঁচি না,’ ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই,’ ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’সহ বিভিন্ন সেøাগানে সমাবেশস্থল মুখরিত করে তুলেছেন।

এরই মধ্যে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে সমাবেশস্থল বেলস পার্ক মাঠ। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে শোভা পাচ্ছে পোস্টার, ফেস্টুন। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন বিভাগীয় ৬ জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিন পর বিভাগীয় এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত বিএনপির নেতাকর্মীরা।

স্থানীয়রা বলছেন, গত এক দশকে এমন পোস্টার-ফেস্টুন, সভা পায়নি বরিশাল নগরী। দেয়ালে, গাছের ডালে, বিদ্যুতের খুঁটিতে, দোকানপাটে সাঁটানো হয়েছে এসব পোস্টার-ব্যানার।

নেতাকর্মীরা বলছেন, আজ শনিবার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। তবে সরকারি দলের বাধা উপেক্ষা করে বরিশালের সমাবেশস্থলে আসছেন তারা। একদিনের সমাবেশ তিন দিনের সমাবেশে পরিণত হয়েছে। আগে থেকেই নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। ক্ষণে ক্ষণে সরকারবিরোধী সেøাগান নিয়ে মাঠে ঢুকছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। তবে তাদের অভিযোগ, সমাবেশে আসতে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন তারা। পথে পথে বাধা ও হামলার শিকার হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে ব্যক্তিগত যানবাহন।

খুলনা, রংপুরের সমাবেশের মতো বরিশালের সমাবেশেও চিড়া, মুড়ি, চাল, ডালসহ মাঠে পৌঁছাচ্ছেন তারা। ভোলা, চরফ্যাশন, মনপুরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, কুয়াকাটা, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পথে পথে বাধা উপেক্ষা করে আসেন এসব মানুষ। অনেকের অভিযোগ, সরকার শুধু পরিবহন ধর্মঘট দেয়নি, আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে সমাবেশে আসা লোকজনের পথে বাধা ও হামলা করছে। এতে আহত হয়েছেন ভোলা জেলার কয়েক শত সাধারণ মানুষ।

এদিকে আজ শুক্রবার সকাল থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন বরিশাল। বাস, লঞ্চ, স্পিডবোট, মাইক্রোবাস সবই বন্ধ। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিভাগের বিভিন্ন জেলায় অসুস্থ রোগীরা উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তবে সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ পায়ে হেঁটে, ছোট ছোট নৌকা, বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন বাহনে পথ ভেঙে সমাবেশস্থলে আসেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভরে যায় পুরো বেলস পার্ক। মাঠের মধ্যে নেতাকর্মীরা মিছিল-মিটিং করেন। দুপুরে তীব্র রোদে শামিয়ানা টানিয়ে তার নিচে অবস্থান করেন। দুপুরের পর মিছিলে মিছিলে জনতার ঢল নামে সমাবেশস্থলে। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মাঠের চারপাশ দিয়ে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। এদিকে এখনো চলছে মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ। রাত ১০টার মধ্যে মঞ্চের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বে থাকা নেতাকর্মীরা।

মামুন হাসান নামে বিএনপির এক কর্মী বলেন, ‘আমরা এই সরকারের পদত্যাগ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, সে জন্য আমি সমাবেশে এসেছি।’

ভোলা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জামিল হোসেন অদুদ বলেন, ‘সমাবেশ সফল করতে আগেই নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছি। আরো নেতাকর্মীরা পথে আছেন। তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে। নৌকায় উঠতে দিচ্ছে না। নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে যাতে কেউ সমাবেশে না আসে। তবে আমাদের নেতারা কোনো বাধাই পরোয়া করে না। যে যেভাবে পারছেন বরিশালে আসছেন।’

বরগুনা থেকে আসা বিএনপি নেতা টিটু বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ বানচাল করতে গণপরিবহন ধর্মঘট দিয়েছে সরকার। তবে সরকারের কোনো বাধাই কাজে আসছে না। মানুষ সমাবেশে ছুটে আসছে। ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের ঢল নামছে। সড়কপথে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক নিয়ে, কেউ হেঁটে, কেউ নৌকায় করে চিড়া, মুড়ি নিয়ে সামাবেশস্থলে পৌঁছেছেন। আরো আসবেন।’

রাতে মাঠে অবস্থানকারীরা বলেন, সরকার গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় আগেভাগেই চলে এসেছেন নেতাকর্মীরা। এ জন্য রাতযাপনের জন্য কাঁথা-বালিশ ও বিছানাপত্র নিয়ে এসেছেন। খাবারের জন্য চাল, ডাল, তেল নিয়ে এসেছেন। মাঠেই রান্না করে খাচ্ছেন। কেউ কেউ আশপাশের ছোট ছোট হোটেলে রান্না করে খাচ্ছেন। এদিকে অনেকেই বরিশাল নদীবন্দর, লঞ্চঘাট, নগরীর বিভিন্ন অলিগলি ও বাসস্ট্যান্ডের রাতযাপন করেন।

ভোলার তজুমদ্দিন থেকে আসা নোয়াব আলী বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ, লঞ্চ বন্ধ। সমাবেশে যোগ দিতে ২ দিন আগেই বরিশাল আসি। আসার পথে নানা জায়গায় বাধা দিয়েছে সরকারদলীয় লোকজন। রাতে সমাবেশস্থলের সামনে মাঠের মধ্যে ঘাসের ওপর বিছানা করে ঘুমিয়ে ছিলাম। সারারাত শীতে কষ্ট করেছি। হাজার হাজার মানুষ আমার মতো কষ্ট করে রাত কাটিয়েছে। তবুও আমাদের প্রত্যাশা সমাবেশ সফল হোক। আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণ হোক। সরকারের পরিবর্তন হোক।’

পটুয়াখালীর দিনমজুর আনসার আলী। রাজনৈতিক দলের কোনো পদ-পদবীতে নেই তার নাম। তবুও ২ দিন আগে বেলস পার্ক মাঠে আসেন। মাঠে বালুর ওপর বিছানা করে রাতযাপন করেন। বিছানা-বালিশ কাঁধে নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে নিয়ে মিছিল করেন। কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো দল নেই। অধিকার আদায়ের জন্য বিএনপির সমাবেশকে সমর্থন করতে এসেছি। এখানে যারা আসেন সবাই নেতা নন। বেশিরভাগ মানুষ খেতে-খামারে, নদীতে কর্ম করে জীবনযাপন করছেন। তবে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এখান থেকে পরিত্রাণ চায়।’

মির্জাগঞ্জ থানা মহিলা দলের সভানেত্রী রাশেদা খান মঞ্জু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমরা যাতে সমাবেশে না আসি সে জন্য হুমকি-ধমকি দিয়েছে। তারা নাকি তালিকাও তৈরি করছে, যারা যারা সমাবেশে আসবে তাদের নামে নাকি নতুন মামলা দেয়া হবে। শুধু তাই নয় গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। এ জন্য আমরা সমাবেশের আগের দিন পায়ে হেঁটে, রিকশা দিয়ে সমাবেশে চলে এসেছি। আজকে রাতে মাঠেই থাকব। কালকে সমাবেশ শেষ করে বাসায় যাব।’

বরিশালের বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

৩১ অক্টোবর রাতে ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশাল জেলায় থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের ডাক দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশাল-ভোলা নৌরুটের ১৪টি লঞ্চের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে ভোলা থেকে স্পিডবোটের চলাচলও।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:০৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]