শনিবার ১০ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জলবায়ু চুক্তি অনুসরণ করার এখনই সময়

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০৮ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

জলবায়ু চুক্তি অনুসরণ করার এখনই সময়

মিশরে চলা কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এর মধ্যেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি অনুসরণ করার এখনই সময়’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে আমেরিকান-জার্মান মালিকানাধীন রাজনৈতিক সংবাদভিত্তিক গণমাধ্যম পলিটিকো। রোববার (৬ নভেম্বর) নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়।

এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখেন, মানব ইতিহাসে এর আগে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার চেয়ে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ সামনে আসেনি। অন্য প্রাণীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে বাস করা আমাদের এ পৃথিবী এর আগে এত বেশি ঝুঁকির মধ্যে কখনো পড়েনি।

সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতি আর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য সুফল বয়ে আনবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরে যে শক্ত পদক্ষেপের (জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়) ওপর জোর দিয়ে আসছেন, এখন তা বাস্তবায়ন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

সিলেটের সাম্প্রতিক বন্যার কথাও নিবন্ধে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের মানুষ এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। এ দুর্ভোগ ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। কোনো প্রতিশ্রুতি বা শব্দমালা আকস্মিক বন্যায় তাদের বাড়িঘর ভেসে যাওয়া, তাদের জীবিকা ধ্বংস করা বা প্রিয়জনকে হারানো ঠেকাতে পারেনি। এছাড়া টুইট বার্তায় সহযোগিতার আশ্বাস কিংবা নামমাত্র সহায়তার প্যাকেজ তেমন কোনো কাজে আসেনি গত মাসের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়া পাকিস্তানের তিন কোটির বেশি মানুষের জন্য।

আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘আমার দেশের (বাংলাদেশ) মতো অন্য যেসব দেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, তাদের সহায়তায় গত বছরের কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল; তা পূরণ করতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাই।’

তিনি আরও লেখেন, বিশ্বনেতারা আবারও একত্রিত হয়েছেন (কপ-২৭ সম্মেলনে)। আমি আমার সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, তারা যেন সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উপায় খুঁজে বের করার পদক্ষেপ নেন।

নিবন্ধে শেখ হাসিনা লেখেন, ‘উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত আর্থিক সহায়তাকে একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কারণ এটি আমার দেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। এটি (আর্থিক সহায়তা) ভবিষ্যতের জন্য ছেড়ে দেয়া যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিস্তৃত পরিণতির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি এবং এ লড়াই অব্যাহত রাখতে হলে অবিলম্বে সহায়তার প্রয়োজন।’

নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ বর্তমানে ০ দশমিক ৫৬ শতাংশ বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। কিন্তু এর বিপরীতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের ক্ষতির অনুপাত অনেক বেশি।

পলিটিকোতে প্রকাশিত নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো লিখেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, খরা, তাপপ্রবাহ এবং বন্যা সবই আমাদের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের অবকাঠামো এবং কৃষি শিল্পকে ধ্বংস করবে, কারণ আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ, হ্রাস এবং মোকাবিলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি।

গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, মানবসৃষ্ট উষ্ণায়নের কারণে আমাদের জিডিপি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ২১০০ সালে মানুষের গড় আয় এখনকার তুলনায় ৯০ শতাংশ কম হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলের (আইপিসিসি) মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে দরিদ্রতা বাড়বে প্রায় ১৫ শতাংশ।

শেখ হাসিনা লেখেন, এ ধরনের পূর্বাভাসে হতাশাগ্রস্ত হওয়াই স্বাভাবিক। অনেকের কাছ থেকেই এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান যেমন শোনা যাচ্ছে না, তেমনি এর অগ্রগতিও খুব ধীর। উদ্বেগ থেকে হতাশ হওয়া সহজ, কিন্তু আমাদের অবশ্যই তা প্রতিরোধ করতে হবে। আর বাংলাদেশে আমরা সেটাই করছি।

তিনি আরও লেখেন, এ ধরনের গুরুতর হুমকির মুখে তুলনামূলকভাবে আমরা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল এবং ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাও উন্মোচন করেছি। বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, আমাদের গতিপথকে দুর্বলতা থেকে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কার্বন নিঃসরণ কমানো থেকে শুরু করে সবুজ বিনিয়োগের (গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট) উদ্যোগ নিয়েছি।

শেখ হাসিনার নিবন্ধে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম ২০০৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। বিভিন্ন অভিযোজন এবং প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য এখন পর্যন্ত আমরা ৪৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছি। বর্তমানে আমরা আমাদের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য একটি আবাসন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছি। প্রায় পাঁচ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে আশ্রয় দেয়ার জন্য ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করাই যার লক্ষ্য। আমার ১৮ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে, আমার সরকার আজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষকে ঘর করে দিয়েছে।

নিরাপদ, জলবায়ু-সহনশীল এবং সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গঠনে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে লাখ লাখ গাছের চারা রোপণের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভি-২০ এর সাবেক চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থের প্রচারে মনোনিবেশ করে চলেছে। শুধু বেঁচে থাকাই যথেষ্ট নয়, আমরা সফল হতে চাই। আমরা আমাদের প্রতিবেশী এবং বিশ্বকে দেখাতে চাই যে এখনও আশানুরূপ ভবিষ্যতের পথ খোলা রয়েছে। কিন্তু আমরা একা এটি করতে পারব না। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের কথাগুলোকে অবশ্যই কাজে পরিণত করতে হবে। গ্লাসগোতে সম্মত হওয়া জলবায়ু তহবিলে বর্ধিত ৪০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে আমাদের অবশ্যই ভবিষ্যতের প্রাথমিক বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। অন্যথায়, নিষ্ক্রিয়তার খরচ হবে অপরিসীম। গত বছরের আইপিসিসি ওয়ার্কিং গ্রুপ-২ ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে যে, ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জিডিপির ক্ষতি পৌঁছাতে পারে ১০ থেকে ২৩ শতাংশে।

পলিটিকোতে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিবন্ধে বলা হয়, যেদিকেই তাকাই না কেন, সেদিকেই আমরা এখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং এর ক্ষয়ক্ষতি দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তা শিগগিরই অন্যদেরও আক্রান্ত করবে। এই মহা চ্যালেঞ্জ আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

সবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখেন, গত বছর বিশ্বের ধনী দেশগুলো সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের তা পূরণ করা উচিত। কথাকে অবশ্যই কাজে পরিণত করতে হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ নভেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]