
নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটতে যাব, সন্ধ্যায় রস ঝেড়ে এনে জাউ রেন্দে খাবো, খেজুর গাছে চোমর বেরইছে তোরে এনে দেব’ বাংলার গ্রামপল্লীতে এ লোককথা প্রচলিত শত বছর ধরে।
শীত পুরোপুরি না নামলেও আগে ভাগেই শুরু হয়ে গেছে খেজুর গাছ পরিচর্যার (তোলা ও ঝোড়া) কাজ। শীতের আগমনী বার্তায় ঝিনাইদহের গাছিরা এখন খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী ৪ মাস একনাগারে চলবে এ কর্মযোগ্য। খেজুর গাছিদের মধ্যে চলছে মনোপ্রতিযাগিতা। কোনোভাবেই কেউ কারো থেকে পিছিয়ে পড়তে নারাজ। সবার প্রচেষ্টা বাজারে তিনিই প্রথম নতুন রস ও গুড় বিক্রি করবেন।
ঝিনাইদহ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৫ হাজার ৭৫২ জন খেজুরগাছি ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় গাছ কাটা শুরু করেছেন। এ বছর জেলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৪১৫টির বেশি খেজুর গাছ থেকে ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮২৫ লিটার রস ও ৫৮০ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টনের বেশি গুড় পাওয়া যাবে। যেখানে সদর উপজেলায় খেজুর গাছ রয়েছে ৪৭ হাজার ৩৮০টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১১ হাজার, কোটচাঁদপুরে ২০ হাজার ২২৫টি, মহেশপুরে ১০ হাজার ৮৯০টি, শৈলকুপায় ১৪ হাজার ৩৪৫টি, হরিণাকুন্ডুতে ৯ হাজার ৫৫০টি খেজুর গাছ রয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আবু তালেব বলেন, ৩০টি বছর ধরে খেজুরের গাছ কেটে বছরের অন্তত ৬ মাস সংসার চালান। এ বছরও ১২০ বেশি খেজুরের গাছ তোলার (পরিচর্যার) কাজ শুরু করেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি ছুটে চলেছেন এ গাছ থেকে অন্য গাছ কাটায়। নিয়মিতভাবে খেজুরের গাছের সংখ্যা কমলেও গ্রামের একমাত্র গাছি তিনি। বয়সের ভারে গাছে উঠতে কষ্ট হলেও এই রস ও গুড় বিক্রি করে আগামী ৬ মাস চলতে পারবেন। এই আশায় পরিশ্রম করছেন তিনি।
আরো বলেন, ১০ ঠিলে (কলস) রস থেকে এক ঠিলে গুড় হয়। একটি গাছ থেকে এক সিজনে প্রায় ১২০-১৪০ ঠিলে রস আহরণ সম্ভব। ভোরে যেমন রসের কদর আছে ঠিক তেমনি গুড়ের কদরও কম না। এক ঠিলে রস ১২০ টাকা করে বিক্রি হয়। অন্যদিকে এক কেজি নলেন গুড়ের দাম প্রায় ১৮০-২০০ টাকা। বর্তমানে এক ঠিলে গুড় বিক্রি হয় হাজার থেকে ১২শ টাকায়। শীতের সময়ে গুড় ও রস বিক্রি করে সংসারটা ভালোই চলে।
জানা যায়, তার মতোই গ্রামে গ্রামে চলছে গাছ কাটা বা গাছ তোলার ধুম। দা ধার দেওয়া, ঠিলে ও নলি তৈরি করা আরো কতো কী। হবে না কেন? আগামী চার মাস যে এ গাছগুলোই তাদের রুজি-রুটি।
গ্রামের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, শীতের সময় আসলে তাদের বন্ধুরা রস খেতে গ্রামে আসে।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের গাছী আব্দুল কাদের জানান, গ্রাম বাংলার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক এ খাতে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এ পেশা। আবার এ কাজে কঠোর পরিশ্রম হওয়ায় বর্তমান যুব কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছে। যার কারণে আগামীতে খেজুর গুড় ও রস বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, মধু বৃক্ষ থেকে সংগ্রহ হবে সুমিষ্ট ও স্বাস্থ্যসম্মত এবং শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ রস। তাতে তৈরি হয় নলেন গুড় ও পাটালি। এ জেলা থেকে যে রস উৎপাদন হয় তার ৩০ ভাগ রস খাওয়া হয় এবং বাকি ৭০ ভাগ রস দিয়ে গুড় তৈরি হয়।
তিনি আরো বলেন, জেলায় রস উৎপাদানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮শ লিটার। আর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৮১ মেট্রিক টন। চিনি থেকে খেজুরের রস বা গুড় অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত।
Posted ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin