বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ধান ক্ষেতের কোর্ট’ নামে পরিচিত দেশের যে আদালত!

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

‘ধান ক্ষেতের কোর্ট’ নামে পরিচিত দেশের যে আদালত!

কয়েক বছর আগেও ধান চাষ হতো বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দু’পাশে। এ কারণে আদালতটি স্থানীয়দের কাছে এখনও ‘ধান ক্ষেতের কোর্ট’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। স্থানীয়দের এমন নামকরণের মধ্যেই যেন ফুটে উঠেছে আদালত ভবনের বাস্তব চিত্র।

সরেজমিনে দেখা যায়, বহু পুরনো একতলা একটি ভবনের দুই কক্ষে পরিচালিত হচ্ছে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের চারটি আদালত। ভবনের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এর আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে এসেছে। ছাদের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে। এতে আহতও হয়েছেন অনেক বিচারপ্রার্থী। এ ছাড়াও ফাটল ধরে পলেস্তারা খসে পড়েছে একাধিক পিলারের।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টিতে আদালত ভবনে পানি আসে। তখন বিঘ্নিত হয় বিচার কার্যক্রম। এ ছাড়া ভবনের ছাদ চুইয়ে পানি ঢুকে নষ্ট হয় আদালতের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। স্থান সংকুলান না হওয়ায় শুকনো মৌসুমে আদালতের বাইরে রাস্তার ওপরে এবং গাছতলায় বিচারপ্রার্থীরা অবস্থান নিলেও বৃষ্টির সময় দুর্ভোগের শেষ থাকে না। তখন লেজেগোবরে অবস্থা হয় বিচারপ্রার্থীদের।

প্রায় একই অবস্থা বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনেরও। এ আদালত ভবনেও এজলাস সংকটে ব্যাহত হয় বিচারিক কার্যক্রম। আবার যেসব এজলাসগুলো রয়েছে তাও আকারে অনেক ছোট। এ কারণে বসার জায়গা হয় না খোদ আইনজীবীদেরই। এ ছাড়াও কক্ষ সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয় দাফতরিক কার্যক্রম।

বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসা সুমন নামের এক বিচারপ্রার্থী বলেন, ভবনের ভেতরে দাঁড়াতেই ভয় লাগে। কখন জানি ভেঙে পড়ে এ ভবন। এ ছাড়াও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে বিচার প্রার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনা এখানে এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্কারের পরও এ ভবন এখন আর ব্যবহারের উপযোগী নেই।

ইউসুফ নামের আরেক বিচারপ্রার্থী বলেন, সকাল ৯টায় আদালতে এসেছি। কোথাও বসার একটু জায়গা নেই। গাদাগাদির কারণে আদালতের ভেতরে দাঁড়ানোর অবস্থাও নেই। তাই গাছতলায় এসে বসে আছি। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনটির এমন অবস্থা যে, এখানে বাথরুমে যাওয়ার ব্যবস্থাও নেই।

বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, আমাদের আদালত ভবনগুলো এখন বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীসহ আদালতের কর্মীদের কাছে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিচারপ্রার্থী এবং আইনজীবীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই বিশ্রাম নেয়ারও কোনো ব্যবস্থা। জরাজীর্ণ ভবনের কারণে সব সময় আতঙ্ক নিয়ে আদালত ভবনের ভেতরে অবস্থান করতে হয়।

এ বিষয়ে নাজির মো. ইব্রাহিম বলেন, ভবনের দুরবস্থাসহ স্থান সংকটের কারণে কি যে সমস্যায় পড়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না। ‌বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমরা নিরুপায় হয়েই এই ভবন ব্যবহার করছি। আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা তো দূরের কথা; এ ধরনের ভবনে বসাও ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন আদালত ভবন নির্মাণ না হলে এই দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই।

এ বিষয়ে বরগুনার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত বিশ্বাস বলেন, বরগুনার আদালত ভবনের সমস্যা নিরসনের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি। এরইমধ্যেই বরগুনায় একটি অত্যাধুনিক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এটি অনুমোদন পেলে ভবন নির্মাণের ফলে এসব সমস্যার সমাধান হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:২০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]