
নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
ছয় বছর আগের এক বিস্ময়ের গল্প বলি। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাতার বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলোর কাজ চলছে। কোনোটি তৈরি হচ্ছে, কোনোটির সংস্কার চলছে। সেগুলো পরিদর্শনে গিয়েছিলেন শখানেক বিদেশি সাংবাদিক।
ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার নানা সাংবাদিক, একেকজনের একেক রকমের দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁদের আগ্রহেরও শেষ নেই। চোখগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে শ্রমিক, বুলডোজার ও নানা সরঞ্জামে ঠাসা স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোণে। কেউ দেখেশুনে মোহিত হচ্ছেন। অনেকে ইউরোপের ফুটবল স্টেডিয়ামগুলোর সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছেন। কেউ খুঁজছেন অন্তরালের ইস্যু। হয়তো বা হতভাগ্য নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর গল্প। সেই গল্প বলারও উপায় নেই, শ্রমিকদের ওপর যে কাতারি কর্মকর্তাদের কড়া নজরদারি। স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার মুখে একজন জিজ্ঞেস করে বসেন—
ভাই, বাংলাদেশ থেকে এসেছেন?
—বাংলা কথা শুনে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি, একজন গায়ে অনেক কাপড় চাপিয়ে, চেহারা ঢেকে কাজ করছেন। বাংলাদেশি শুনে তিনি গল্প করতে চান; কিন্তু তাঁর বেশভূষা দেখে আমার উৎসাহও দ্বিগুণ। এমন গরমে আপনার গায়ে এত কাপড় কেন?
ভিনদেশি আগন্তুকের সঙ্গে স্টেডিয়াম শ্রমিকের কথা বলা নিষেধ। আমি তপ্ত রোদ এড়িয়ে দৌড়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। এমন রোদে মাছ নিমেষে শুঁটকি হয়ে যাবে। কাপড় মোড়ানো দেশি ভাইয়ের ছবিটি মাথায় এমনভাবে ঢুকে গেল, তার পাশে বিশ্বকাপ রাখলে আঁতকে উঠি। বাসে বসে ভাবি, এই গরমে কিভাবে খেলা হবে। রাতে হলেও তো সম্ভব নয়; কিন্তু কোনোভাবে মিল ছিল না কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের অঙ্ক।
ছয় বছর পর দেখি সব অঙ্কই দিব্যি মিলে গেছে। ফিফা-উয়েফা মিলিয়ে দিয়েছে গরমের অঙ্ক। প্রথাগত জুনের বিশ্বকাপ হিমশীতল হবে কাতারে নভেম্বরের ঠাণ্ডায়। ইন্টারনেটে ঘুরছে স্টেডিয়ামগুলোর কী সুন্দর ছবি, দেখলেই লোভ লাগবে। ছয় বছর আগে কী দেখেছিলাম, আর এখন কী দেখছি। একেকটি স্টেডিয়াম যেন কাতারি স্পোর্টস আধুনিকতার অপূর্ব মনুমেন্ট। তখনই তারা বর্ণনা করেছিল এয়ারকন্ডিশনার কিভাবে কাজ করবে স্টেডিয়ামগুলোতে। খেলার মাঠে তো বটেই, দর্শক সিটের নিচ থেকেও বের হবে ঠাণ্ডা হাওয়া। ফাইনালের ভেন্যু লুসাইল স্টেডিয়ামের পাশে বুলবার্ডে কয়েক দিন আগে শুরু হয়ে গেছে লুসাইল ফেস্টিভাল। তাদের প্রতিটি শহরে বিভিন্ন জায়গায় এখন উৎসবের আমেজ। উদ্দেশ্য—দেশি-বিদেশি সমর্থকরা খেলার বাইরে গিয়েও যেন কাতারকে উপভোগ করতে পারেন। তাদের সংস্কৃতিকে জানতে পারেন, বুঝতে পারেন।
Posted ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin