
নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
তাকে ডাকা হয় ভিনগ্রহের ফুটবলার। সর্বকালের সেরার বিতর্কে তাকে রাখা হয় পেলে-ম্যারাডোনার কাতারে। কারো মতে তো ফুটবলের ইতিহাসেই তার চেয়ে ভালো কেউ আসেনি। তার নাম লিওনেল মেসি। সেই মেসি কাতারে যাচ্ছেন নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে অংশ নিতে। ফুটবল ক্যারিয়ারের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপে মেসির লক্ষ্য ২০১৪ সালের অপূর্ণ কাজটুকু পূরণ করা। আর্জেন্টিনার দীর্ঘ ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ খরা ঘুচিয়ে তৃতীয় শিরোপা এনে দেয়ার লক্ষ্যেই আলবিসেলেস্তেদের নেতৃত্ব দেবেন মেসি।
২০০৬ বিশ্বকাপে নতুন ম্যারাডোনার তকমা গায়ে লাগিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী লিওনেল মেসি। ১৬ বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপ যখন তিনি খেলতে যাচ্ছেন, তখন ‘মেসি’ নিজেই এক কিংবদন্তির নাম। এই প্রজন্মের তরুণ কোনো প্রতিভার খেলায় মেসির ঝলকানি দেখা গেলে নতুন মেসি দেখার আশায় বুক বাঁধে মানুষ। ফুটবল ইতিহাসের সেরাদের সেরার তালিকায় একদম শুরুতেই থাকে তার নাম। ক্লাব পর্যায়ে বার্সেলোনার হয়ে একের পর এক রূপকথার গল্প লিখে জিতেছেন সম্ভাব্য সব শিরোপা। ব্যক্তিগত পুরস্কারের তালিকায়ও বাকি নেই আর কিছু জেতার। লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারে অপূর্ণতা বলতে একটা বিশ্বকাপ শিরোপা।
২০১৪ বিশ্বকাপেই শিরোপা ছোঁয়ার খুব কাছাকাছি গিয়েও ফিরতে হয়েছে না ছুঁয়েই। আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল জিতলেও তাতে কি আর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে না পারার আক্ষেপ কমে?
ব্রাজিলে খালিহাতে ফেরার পর রাশিয়া বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনার জন্য কেটেছে বিস্মরণযোগ্য। মাঝখানে একের পর এক কোপা আমেরিকার ফাইনাল হারে জেগেছিল আন্তর্জাতিক শিরোপা ছাড়াই মেসির বিদায়ের শঙ্কা। তবে ২০২১ সালের পর থেকে মেসির জাতীয় দল ভাগ্য সুপ্রসন্ন। গত বছরের কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা, যা ১৯৯৩ সালের পর তাদের প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা। চলতি বছর ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিপক্ষে লা ফিনালিসিমাতেও বড় জয় পায় আর্জেন্টিনা।
২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে হারার পর থেকেই অপরাজিত আর্জেন্টিনা। টানা ৩৫ ম্যাচ হারের মুখ না দেখা আলবিসেলেস্তেরা দাঁড়িয়ে বিশ্বরেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে। আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত ফর্ম আশা দেখাচ্ছে তাদের তৃতীয় বিশ্বকাপের। কাতারের ফাইনালে লিও মেসির হাতে সোনালি কাপটা দেখতে মুখিয়ে আছেন বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলভক্ত।
১৯৮৭ সালে আর্জেন্টিনার রোসারিওতে জন্ম নেয়া মেসির ফুটবলের শুরুটা তার বাবার অধীনই গ্রান্ডোলি নামের একটি অপেশাদার ক্লাবে। সেখানেই দৃষ্টি কাড়েন আর্জেন্টিনার অন্যতম সেরা ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের। তাদের যুবদলে খেলার সময় হরমোনজনিত অসুস্থতায় শেষ হয়ে যেতে বসেছিল তার ফুটবল ক্যারিয়ার। তখনই এগিয়ে আসে লা লিগার জায়ান্ট বার্সেলোনা।
২০০০ সালে মাত্র ১৩ বছরের মেসিকে ক্লাবে ভিড়ায় বার্সেলোনা। লা মাসিয়ার একাডেমিতে চলতে থাকে ঘষামাজা।
বয়সভিত্তিক দল পেরিয়ে ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার সিনিয়র দলের হয়ে অভিষেক ঘটে মেসির। এরপর টানা ১৭ বছর ন্যু ক্যাম্পে রেকর্ডের পর রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। জিতেছেন একের পর এক শিরোপা। হয়েছেন ক্লাবটির ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়।
লা লিগায় ৫২০ ম্যাচে ৪৭৪ গোল নিয়ে মেসিই লিগের সর্বোকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন ১০টি লা লিগার শিরোপা, ৭টি কোপা দেল রে ও ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ অসংখ্য শিরোপা।
ব্যক্তিগত অর্জনের তালিকায়ও মেসি সবার চেয়ে এগিয়ে। ২২ বছর বয়সে প্রথমবার ব্যালন ডি’অরজয়ী মেসি এখন পর্যন্ত পুরস্কারটি জিতেছেন সর্বোচ্চ সাতবার।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে এখন পর্যন্ত ১৬৪টি ম্যাচ খেলেছেন মেসি। আকাশি-সাদা জার্সিতে তার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেননি আর কেউই। গোল করার দিক দিয়েও দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে সবার সেরা তিনিই। ৯০ গোল নিয়ে এখনো খেলছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে তিনি। ১৯১ ম্যাচে ১১৭ গোল নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পুরুষ খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে শিরোপা বারবার ধরা দিয়েও প্রতারণা করেছে মেসির সঙ্গে। একের পর এক ফাইনালে হারের পর জাতীয় দল থেকে অবসরও নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ফুটবলের টানে ফিরেছেন ফের।
২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয় মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতার পর থেকেই জাতীয় দলের জার্সিতে মেসি অপ্রতিরোধ্য। অধিনায়কের অনুপ্রেরণায় আর্জেন্টিনা দলটিও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। কাতারে তাই শিরোপা সম্ভাবনায় মেসির আর্জেন্টিনা আছে শুরুর দিকেই।
একনজরে মেসি:
নাম: লিওনেল আন্দ্রেস মেসি
জন্ম: জুন ২৪, ১৯৮৭, রোজারিও
ক্লাব: প্যারিস সেন্ট জার্মেই
পজিশন: ফরোয়ার্ড
জাতীয় দলের জার্সি নম্বর: ১০
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: পঞ্চমবার (২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮, ২০২২)
বিশ্বকাপে অর্জন: রানার্সআপ (২০১৪), গোল্ডেন বল (২০১৪)
Posted ৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin