শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বুকে জ্বালাপোড়া?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

বুকে জ্বালাপোড়া?

হঠাৎ বুকে জ্বালাপোড়া অনুভূত হওয়া, টক ঢেকুর ওঠার অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই কমবেশি আছে। এই সমস্যাগুলো সাধারণত ভূরিভোজের পর অনেকেরই হয়ে থাকে। কিন্তু কেউ কেউ নিয়মিত এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। যদি কেউ সপ্তাহে দুই বা ততোধিক দিনের বেশি বুক জ্বালাপোড়ায় ভুগে থাকেন এবং স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবন যাপন ব্যাহত হয়, তাহলে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ। বাংলাদেশে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত।

গলা ও বুক জ্বালাপোড়া সাধারণত ‘গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ’ বা ‘জার্ড’ নামের এক রোগের কারণে হয়ে থাকে। এ রোগ সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ বছর ২০-২৬ নভেম্বর ‘বুক জ্বালাপোড়া সচেতনতা সপ্তাহ ২০২২’ পালিত হচ্ছে।

 

‘জার্ড’ কী?

পাকস্থলীর এসিডসমৃদ্ধ খাদ্যকণা ও জারক রস কোনো কারণে উল্টো পথে পাকস্থলী থেকে খাদ্যনালিতে আসার ফলে বুকে জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি অন্য যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, সেটাকেই ‘গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ’ বা ‘জার্ড’ বলা হয়ে থাকে।

লক্ষণ

 

বুক জ্বালাপোড়া যদিও রোগটির প্রধান লক্ষণ হলেও এর বাইরেও অন্যান্য উপসর্গ নিয়েও এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভুগতে পারেন। বুক জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো থাকতে পারে—

♦ বুকে ব্যথা অনুভব করা

♦ খাবার ওপরের দিকে উঠে আসা

 

♦ মুখে টক টক স্বাদ অনুভূত হওয়া

♦ ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া

♦ গলায় বাঁধা অনুভব করা

♦ কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কাশি।

কারণ

রোগটির নামেই এটির পরিচয় লুকিয়ে আছে। ‘রিফ্লাক্স’ শব্দের মানে হচ্ছে উদগিরণ। অর্থাৎ পাকস্থলীতে জমে থাকা খাবার ও পানীয় যদি পাকস্থলী থেকে উল্টা পথে খাদ্যনালির দিকে উঠে আসাকে রিফ্লাক্স বলে। আমরা জানি খাবার হজম করার জন্য পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে এসিড থাকে। এই এসিড কোনোভাবে পাকস্থলী থেকে যেন খাদ্যনালিতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য খাদ্যনালির শেষ অংশ ভাল্ভ বা কপাটিকা হিসেবে কাজ করে। সাধারণত খাবার গ্রহণের সময় এই কপাটিকা অল্প সময়ের জন্য খুলে সঙ্গে সঙ্গেই তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। কোনো কারণে এই কপাটিকা ঠিকমতো কাজ না করলে তা অল্প সময়ের পরিবর্তে যদি দীর্ঘ সময় খোলা থাকে এবং ফলে পাকস্থলীর এসিড ও খাদ্যকণিকা খাদ্যনালিতে উঠে এসে খাদ্যনালির দেয়ালে ক্ষত তৈরি করে। ক্ষত তৈরি ছাড়াও শুধু এসিডের সংস্পর্শের জন্যও রোগীর বুক জ্বালাপোড়া এবং অন্যান্য উপসর্গ হতে পারে। পাকস্থলীর এক ধরনের গঠনগত সমস্যা হচ্ছে ‘হায়াটাস হার্নিয়া’। এতে পাকস্থলীর ওপরের কিছু অংশ পেট থেকে বুকের দিকে উঠে আসে। এই ধরনের সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের বুক জ্বালাপোড়া বা ‘গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ’-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

সতর্কতা

বুক জ্বালাপোড়া রোগীদের কোনো কোনো উপসর্গকে ‘অ্যালার্ম সাইন’ বা বিশেষ সতর্কতামূলক বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বুক জ্বালাপোড়ার সঙ্গে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো থাকলে একজন রোগীকে অ্যান্ডোস্কপি এবং অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে খাদ্যনালির ক্যান্সার হয়নি নিশ্চিত করতে হবে।

♦ ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া

♦ ঢোক গিলতে ব্যথা অনুভব করা

♦ রক্তবমি

♦ আত্মীয়-স্বজন কারো যদি খাদ্যনালির ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে

♦ রক্তশূন্যতা।

এসব উপসর্গ থাকলে শিগগিরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসা

♦ ওষুধ এবং জীবন যাপন ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনই মূল চিকিৎসা।

♦ অ্যান্টাসিড, পিপিআই (অমিপ্রাজল, র‌্যাবিপ্রাজল ইত্যাদি), এইচটু ব্লকার (রেনিটিডিন, ফেমোটিডিন ইত্যাদি), এলজিনেটস ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করা যায়। এগুলোর ভেতর পিপিআই সর্বাধিক জনপ্রিয় ও কার্যকর। এসব ওষুধই আমাদের দেশে সুলভ ও সহজলভ্য।

♦ দীর্ঘদিন ওষুধ এবং জীবন যাপন প্রণালী পরিবর্তনের ফলেও যাঁদের বুক জ্বালাপোড়ার উন্নতি হয় না, তাঁদের ‘ফান্ডোপ্লাইকেশন’ অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে ইদানীং ভালো কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারের ফলে খুব কমসংখ্যক রোগীরই অপারেশনের প্রয়োজন হয়। সাধারণত ‘গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ’-এর জটিলতা হিসেবে কোনো রোগীর খাদ্যনালি সংকুচিত হয়ে গেলে, খাদ্যনালির ক্যান্সার হলে অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে। ইদানীং অ্যান্ডোস্কপির মাধ্যমেও এ রোগের চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:০২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]