
নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ একজন রাজাকারপুত্রকে দলীয় প্রার্থী করার সুপারিশের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
রবিবার বিকালে আলফাডাঙ্গা বাজারের চৌরাস্তা মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
এসময় বক্তব্য দেন গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোনায়েম হোসেন খান, গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হাসান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল ইসলাম প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। মিছিলটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২৯ ডিসেম্বর গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গত শুক্রবার উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় সুকৌশলে রাজাকারপুত্রকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার এক নাম্বার সুপারিশ করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
সভায় গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোনায়েম হোসেন খানের পক্ষে ১১ জন ভোট দেন। কিন্তু পরে অনিয়ম করে তার পক্ষে ৮ ভোট দেখিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান রাজাকারপুত্র হারিচুর রহমান সোহানকে এক নম্বর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে।
তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা এবং মনোনয়ন বোর্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মনোনীত প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি জানান।
গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোনায়েম হোসেন খান বলেন, উৎকোচের বিনিময়ে আমাকে ঠকানো হয়েছে। একজন রাজাকারপুত্রকে টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যান বানাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এসব কাজ করছেন। বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে।
গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হাসান বলেন, আলফাডাঙ্গা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। স্বাধীনতার পর সব জাতীয় নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় এখানকার ভোটে। এখানে একজন রাজাকারপুত্রকে চেয়ারম্যানপ্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করবেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে এসব করছেন নেতারা, আমরা এটা কোনোভাবেই মেনে নেব না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাজাকারপুত্র সোহান রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না। হঠাৎ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক তড়িঘড়ি করে তাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ দেন, যেটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশন হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, হারিচুর রহমান সোহানের পিতা রাজাকার ছিলেন না। তবে তিনি তৎকালে ইউনিয়ন বোর্ডে ছিলেন। সেই হিসেবে তার নাম পিস কমিটিতে থাকতে পারে। আর মনোনয়ন সভায় উপস্থিত ভোটারেরা যেভাবে ভোট দিয়েছেন আমরা সেভাবেই সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছি। এখানে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
রাজাকারপুত্রের নাম ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করার সুপারিশ করায় বিক্ষোভের ফেটে পড়ে গোপালপুর ইউনিয়নের নয়টি ওয়াডের আওয়ামীলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ। তারা শুক্রবার রাতেই জেলা আওয়ামী লীগের শিশু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করেন।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোঃ ইশতিয়াক আরিফ বলেন, বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগকে জানিয়েছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। আমরা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে উপজেলা বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব।
অভিযোগের ব্যাপারে হারিচুর রহমান সোহান বলেন, আমার পিতার নামে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় কোনো মানুষের ক্ষতি করেননি।
আপনার বড় ভাই যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বড় ভাই আগে যুবদল করতেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য তারিকুল ইসলাম, পৌরসভা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাজীব, আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মিয়া, কামরুল ইসলাম খান, নবাব আলী খান প্রমুখ।
Posted ৩:২৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin