শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজাকারপুত্রকে আ.লীগের দলীয় মনোনয়নের সুপারিশ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

রাজাকারপুত্রকে আ.লীগের দলীয় মনোনয়নের সুপারিশ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ রাজাকারপুত্রকে দলীয় প্রার্থী করার সুপারিশের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেন, চেয়ারম্যান হিসেবে ওই প্রার্থীর বাবার নাম পিস কমিটিতে থাকলেও তিনি কখনোই রাজাকার ছিলেন না।

রোববার (২০ নভেম্বর) বিকেলে আলফাডাঙ্গা বাজারের চৌরাস্তা মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।

এ সময় বক্তব্য দেন গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোনায়েম হোসেন খান, গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হাসান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল ইসলাম প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। মিছিলটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২৯ ডিসেম্বর গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গত শুক্রবার উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোনায়েম হোসেন খানের পক্ষে ১১ জন ভোট দেন। কিন্তু পরে অনিয়ম করে তার পক্ষে আট ভোট দেখিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান রাজাকারপুত্র হারিচুর রহমান সোহানকে এক নম্বর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করেছে।

তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা এবং মনোনয়ন বোর্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মনোনীত প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার জোর দাবি জানান।

গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোনায়েম হোসেন খান বলেন, ‘মোট ১৯ জন ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে আমি ১১ ভোট পেয়েছি, কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে আমি আট ভোট পেয়েছি। ভোট প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উৎকোচের বিনিময়ে আমাকে ঠকানো হয়েছে। একজন রাজাকারপুত্রকে টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যান বানাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এসব কাজ করছেন। বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে।’

গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হাসান বলেন, ‘আলফাডাঙ্গা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় এখানকার ভোটে। এখানে একজন রাজাকারপুত্রকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করবেন আওয়ামী লীগ নেতারা–এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে এসব করছেন নেতারা, আমরা এটা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম সুজা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। তখন আব্দুর রহমান সাহেব আলফাডাঙ্গায় ছিলেন না। তিনি তখন ঢাকায় তার ভগিনীপতির বাসায় থাকতেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি এলাকায় স্বাধীনতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন না, তবে তার নাম পিস কমিটিতে ছিল।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, ‘হারিচুর রহমানের বাবা রাজাকার ছিলেন না। তবে তিনি তৎকালে ইউনিয়ন বোর্ডে ছিলেন। সেই হিসেবে তার নাম হয়তো পিস কমিটিতে থাকতে পারে। আর মনোনয়ন সভায় উপস্থিত ভোটাররা যেভাবে ভোট দিয়েছেন, আমরা সেভাবেই সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছি। এখানে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, ‘বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগকে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

এদিকে হারিচুর রহমান সোহান বলেন, ‘আমার বাবার নামে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। আমি বর্তমানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোট ভোটার ছিলেন ২০ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১৯ জন। মোট প্রার্থী ছিলেন পাঁচজন। আমি পেয়েছি ১১ ভোট আর মোনায়েম ভাই পেয়েছেন ৮ ভোট। অন্যরা কোনো ভোট পাননি।’

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]