শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিজয় থাকুক খাদ্য এবং প্রাচুর্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

বিজয় থাকুক খাদ্য এবং প্রাচুর্যে

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরন্তর চেষ্টা করছেন দেশ-মানুষ-মাটির কল্যাণে। আর তাই এখন পত্রিকায় শিরোনাম হচ্ছে- অ্যাপে ধান বিক্রি করবে কৃষক। কিন্তু তাঁর সদিচ্ছা থাকলেও মন্ত্রী-এমপি-সচিব-আমলাদের অধিকাংশ তা চায় না। আর একারণেই সোনার বাংলাদেশে নির্মমতার অন্ধকার নেমে আসছে প্রতিদিন, নীতিহীন দুর্নীতিবাজ-জঙ্গীদের হাত ধরে। প্রতি বছর ১ লক্ষ কোটি টাকার চেয়েও বেশি পাঁচারকারী রাজনীতিক-অর্থনীতিক আর আমলাদের কারণে প্রতিদিন বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-বিদ্যু-তেল-গ্যাসের মূল্য। শুধুমাত্র তাদের কারণেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিন্ডিকেটের কারসাজি, কয়েকটি ব্যবসায়ীচক্রের কারণে নির্মমভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দ্রব্যমূল্য প্রতিদিন বাড়ছে যখন, তখন মন্ত্রী-আমলাদের নির্দেশনায় বেড়েছে পরপর ৩ বার বিদ্যুতের দাম। এমন একটা সময় আমজনতার সাথে প্রতারণার খেলায় মত্ত হয়ে বলছে- চলতি আমন মৌসুমে কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে ধান কিনবে সরকার। এজন্য মাঠপর্যায়ে খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ১৩ নির্দেশনা দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। দেশব্যাপী ২৭২টি নির্বাচিত উপজেলায় ‘কৃষকের অ্যাপ’ পাইলট আকারে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে ঢাকা, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের কাছে এ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

যখন উন্নয়নের রোল মডেল বলতে বলতে মন্ত্রী-এমপিদের মুখে ফেনা উঠেছে, তখন ঢাকনা চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে ম্যানহোলের পড়ে পা ভেঙ্গেছে জার্মান উপরাষ্ট্রদূতের। একই সময়ে জনগণের কথা ভেবে বাজারের দ্রব্যমূল্য কমাতে কোন স্থির সিদ্ধান্ত না নিয়ে আমজনতাকে বিপদের মুখে ফেলে তথাকথিত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সরকারে কোটি কোটি টাকা লোপাটের নতুন প্রজেক্ট বানিয়ে বলা হচ্ছে- অর্থনৈতিক বেদনা নির্দেশনায় ধান বিক্রির আবেদন করতে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন করতে ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে খাদ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সংযোজিত ‘ফটো এবং ভিডিও বক্স’-এর ‘গাইড লাইন-কৃষকের অ্যাপ’ থেকে ভিডিও টিউটোরিয়াল ডাউনলোড করে অ্যাপ ব্যবহার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করতে হবে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা নিবন্ধনের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করবে। শুধু এখানেই শেষ নয়; প্রতারণার ফাঁদ পেতে তৈরি করা হচ্ছে ছাত্র-যুব-জনতার রক্ত পানি করা অর্থকে প্রজেক্টের নামে আত্মসাতের চেষ্টা। সেই চেষ্টার পথ ধরে বলছে- অ্যাপ ব্যবহারে কৃষকদের প্রশিক্ষণ শিডিউল অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সব ইউএনও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ খাদ্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট মনোনীত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জুমের মাধ্যমে ভার্চুয়াল কর্মশালায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত করা লিফলেট ও তৈরি করা অডিও ডাউনলোড করে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সব ইউনিয়নে প্রচার করতে হবে।

এত এত প্রচার-প্রচারণা-প্রজেক্টের নামে কোটি কোটি টাকা তিয়ে এ্যাপস বানানো হলেও তার ফলাফল কোনভাবেই যে ভালো হবে না, তার প্রমাণ- কৃষকদের হাতে মোবাইল তো দূরের কথা, দু বেলা ভাত খাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তাঁরই প্রমাণ বয়ে বেড়াচ্ছে- ‘চুক্তি অনুসারে চাল ও গম আমদানি এখন পর্যন্ত অপর্যাপ্ত। মোট চুক্তির ৭৪ শতাংশ খাদ্যশস্য এখনো দেশে আসেনি।’ সংবাদটি। অপরদিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পূর্ভাবাস-গত বছরের তুলনায় এবার ২৫ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হবে। কমবে গম ও ভুট্টার উৎপাদন। এ ছাড়া কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ কম হয়েছে প্রায় পৌনে ৪ লাখ টন। খাদ্য নিয়ে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মূলত মার্কিন মুদ্রা ডলার ও জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার খবর, আগামী বছরে বিশ্বে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। যা দুর্ভিক্ষে রূপ নিতে পারে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আসছে বছরে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছেন। যদিও বলা হচ্ছে- এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে নিরাপদ মজুতের পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে স্বাভাবিক খাদ্য নিরাপত্তা মজুতের পরিমাণ ১৩ লাখ টন এবং সংকটকালীন মজুতের পরিমাণ ১৪ লাখ টন নির্ধারণ করা হয়। বর্তমান খাদ্য নিরাপত্তা মজুতের পরিমাণ সাড়ে ১০ লাখ টন।

সারাদেশে সরকারের মন্ত্রী-এমপি-জনপ্রতিনিধি-সচিব-আমলারা যখন অর্থ পাঁচারের রামরাজত্ব তৈরি করছে যখন, তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- ডলারের মূল্য বৃদ্ধি বিশ্বখাদ্য বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এতে আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। আমদানি করতে অতিরিক্ত অর্থের বিষয়টি দেখবে অর্থ মন্ত্রণালয়। আমরা পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী খাদ্যশস্য আসছে। রাশিয়া থেকে এরইমধ্যে ৫০ হাজার টন গম আনা হয়েছে। অন্যান্য দেশ থেকে খাদ্য আমদানি হচ্ছে। মজুত নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। এমন একটা পরিস্থিতিতে সত্য হয়ে এসেছে- চলতি বছরের শুরুতে হাওড়ে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আর আমন মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় ধানের উৎপাদন কমতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। সব মিলে এ বছর গত বছরের তুলনায় হেক্টরপ্রতি ফলন ১৩ দশমিক ১ শতাংশ কমবে যা ২৫ লাখ টনের মতো। এ ছাড়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে গম ও ভুট্টার উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কম হবে। এ বছর ৪ কোটি ৮৪ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২৩ লাখ টন বেশি।

কৃষি জমি ভরাট করে একের পর এক ভবন নির্মাণ হচ্ছে, উন্নয়নের রোল মডেল-এর নামে বড় বড় ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এমন অসংখ্য কারণে নির্মম বাস্তবতায় আমাদের উৎপাদন কমেছে। বিদেশ থেকে আমদানির জন্য এ পর্যন্ত ১১ লাখ ৮০ হাজার টন খাদ্যশস্য আমদানির চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন চাল এবং গম ৬ লাখ ৫০ হাজার টন। থাইল্যান্ড থেকে ২ লাখ টন, ভিয়েতনাম থেকে ৩০ হাজার টন, মিয়ানমার থেকে ২ লাখ টন ও ভারত থেকে ১ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। কিন্তু গত ২৫ আগস্ট পর্যন্ত আমদানি হয়েছে মাত্র ১ লাখ টন। একইভাবে রাশিয়া থেকে জিটুজি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে গম ৫ লাখ টন, ইউক্রেন ও বুলগেরিয়া থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টন আনার চুক্তি হয়। একথাও সত্য যে, গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার টন। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে ৫০ হাজার টন এবং বুলগেরিয়া থেকে ১ লাখ ২ হাজার টন। অপরদিকে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার টন এবং গম ৩ লাখ ৫৬ হাজার টন।

অনেক অপরিকল্পনা, অনেক কষ্টবেদনার হাত ধরে রাষ্ট্রিয় অব্যবস্থাপনায় বাজারে নিয়ন্ত্রণহীন মূল্য পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশ ও বিশ্ব উভয় বাজারেই পণ্যের দাম বাড়ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তিন বছরে বিশ্বাবাজরে চালের রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি থাইল্যান্ডে ৩ হাজার ২৪৮ টাকা (২৯ মার্কিন ডলার), ভারতে বেড়েছে ১ হাজার ১২০ টাকা (১০ ডলার)। অপরদিকে ইউক্রেনে গমের রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি বেড়েছে ১৩ হাজার ৪৪০ টাকা (১২০ মার্কিন ডলার)। একইভাবে রাশিয়ায় গমের মূল্য বেড়েছে ১৪ হাজার ৬৭২ টাকা (১৩১ মার্কিন ডলার)। এক্ষেত্রে প্রতি মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে ১১২ টাকা। বিশ্ববাজারে মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারের ওপর। মোটা চাল কেজিতে খুচরা পর্যায়ে ১৮ দশমিক ৩৩ টাকা এবং পাইকারি ১৭ দশমিক ৭১ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে আটার খুচরা মূল্য কেজিতে ২২ দশমিক ৭০ টাকা এবং পাইকারিতে ২১ দশমিক ৫৬ টাকা বৃদ্ধি পায়। এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। যা নিম্ন ও মধ্যম শ্রেণির ভোক্তাকে চরম বিপাকে ফেলছে।

এমন বিপাক থেকে দেশের সাধারণ মানুষকে না বাঁচালে কোন ক্ষমতাবানই নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে পারবে না। কারণ জনগণ ভালো না থাকলে যতই শক্তিশালী পুলিশ-প্রশাসনভিত্তিক রাজনৈতিক ক্ষমতাধর সরকার হোক না কেন ভেঙ্গে পরবে তাঁর ক্ষমতার ভিত। এই ভিত যেন ভেঙ্গ না পরে, সেজন্য চাই দেশ-মানুষেল জন্য নীতিবান নেতৃত্ব। সেই নেতৃত্ব যুদ্ধাপরাধী-ধর্মব্যবসায়ী বা বাংলাদেশ বিরোধী কারো কাছে চাইছি না। চাইছি ছাত্র-যুব-জনতার সমৃদ্ধ দেশ গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে স্বাধীনতা-স্বাধীকার-সার্বভৌমত্ব তৈরির নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। সেই চাওয়া পূরণ তিনি করবেন না নাকি কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রধান হিসেবে টিকে থাকার রাস্তাকে বেছে নেবেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে বিজয়ের ৫১ বছর পর এসেও!

মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]