
নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
ইউক্রেনজুড়ে এক সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। এতে দেশটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানি স্থাপনাগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) রাশিয়া ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল ইউক্রেনের দ্বিতীয় শহর খারকিভ। ইউক্রেনের সেনা কর্মকর্তাদের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) ইউক্রেনে ৭৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
এতে ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারকিভের মেয়র জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় শহরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুরো শহর বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় চলে যায়। শুক্রবার সন্ধ্যার পরে ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ফিরে আসে। খারকিভের এক স্থানীয় বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, এই মুহূর্তে কোনো পানি নেই। কারণ শহরে বিদ্যুৎ না থাকলে পাম্পিং স্টেশনগুলো কাজ করতে পারে না। বর্তমানে বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহহীন শহরে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানী কিয়েভে বসবাসকারী ৪২ বছর বয়সী ওকসানা বলেন, ‘আমি চাই না আমাদের বাচ্চারা এর মধ্য দিয়ে বাঁচুক। বেসমেন্টে, আশ্রয়কেন্দ্রে থাকুক আমি এটি চাই না।’
খারকিভের প্রশাসনপ্রধান বলেছেন, এই শহরের ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোর ৮৫ শতাংশ বিদ্যুৎব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইউক্রেনের পাওয়ার গ্রিড অপারেটর ইউক্রেনারগো সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যে ক্ষতির মাত্রা এত বেশি যে পুনরুদ্ধার করতে আরও বেশি সময় লাগবে। তিনি জানান, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের জ্বালানি ব্যবস্থার শক্তিমাত্রা অর্ধেকর বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে হাসপাতাল, পানি সরবরাহ, তাপ ব্যবস্থা সরবরাহ ঠিক রাখতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ইউরি সাক বিবিসিকে বলেছেন, যে জরুরি পরিষেবাগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে, তবে পরিস্থিতি ‘এখনও কঠিন’। রাশিয়ার ঘন ঘন আক্রমণের কারণে ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করা কঠিন হচ্ছে। এদিকে ইউক্রেনের কিরভি-রিহতে একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে তিনজন নিহত এবং আরও ১৩ জন আহত হন। এ ছাড়া খেরসনে আরও একজন নিহত হয়েছেন। রাজধানী কিয়েভে শহরের মেট্রো স্থবির হয়ে পড়েছে ।
কিয়েভ শহরের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, শুধু রাজধানীতে প্রায় ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে । ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণের পর থেকে এটি সবচেয়ে বড় হামলাগুলোর মধ্যে একটি। দেশের বেশিরভাগ অংশে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে জ্বালানি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে আঘাত করে শীতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের এক সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ১০ অক্টোবর থেকে সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার ১ হাজারটিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইরানের তৈরি অ্যাটাক ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের দাবি এর বেশিরভাগই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সবচেয়ে বড় হামলায় ১০০ টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়া।
এদিকে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ভলকার তুর্ক সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোতে ক্রমাগত হামলা মানবিক পরিস্থিতির আরও গুরুতর অবনতির দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং আরও বাস্তুচ্যুতির কারণ হতে পারে’। প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শমিহাল রাশিয়ার সর্বশেষ হামলাকে ইউক্রেনীয় জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা করার আরেকটি প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন।
Posted ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin