
নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামরিক শক্তি বাড়ানোর দিকে নজর ছিল না জাপানের। এই খাতে বড় কোনো বিনিয়োগও করেনি তারা। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেছে। সম্প্রতি সামরিক শক্তি বাড়াতে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এতে ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতাধর হয়ে উঠবে জাপান, যা চীনে আঘাত হানতে সক্ষম।
টোকিও বলছে, চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের ভয়ের পাশাপাশি রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন আক্রমণের পর জাপানিদের মধ্যে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এসবই জাপানের সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রধান কারণ।
শুক্রবার জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশ করেছে। এর আওতায়ই প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে দেশটির সঙ্গে জুড়ে থাকা ‘শান্তিবাদী’ ভাবমূর্তি একরকম শেষই হতে চলল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানির জোটে থাকা জাপানের ওপর বিজয়ী মিত্রশক্তি শান্তিবাদী সংবিধান চাপিয়ে দিয়েছিল। সেই সংবিধানে সামরিক বাহিনীর স্বীকৃতি ছিল না। দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ছিল কার্যত প্রতীকী। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাপানের তত্কালীন যুদ্ধবাজ ভাবমূর্তি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে শান্তিমুখী হয়। তবে সাম্প্রতিককালে আবার জাপান সামরিক ক্ষেত্রে তত্পরতা বাড়িয়েছে, যা নিয়ে দেশটিতে বিতর্ক রয়েছে।
প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে মোট তিন ধাপের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সরকার। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা ব্যয় ২০২৭ সালের মধ্যে মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ হবে, যা আগে ছিল ১ শতাংশ। সম্ভাব্য সামরিক ব্যয় অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের দিক থেকে জাপান আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরই থাকতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক সেন্টারের কর্মকর্তা নাওকো আওকি বলেন, আত্মরক্ষাকেন্দ্রিক জাপানের আগের অবস্থান প্রতীকী হয়ে গেছে। সর্বশেষ রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন আক্রমণের পর প্রতিরক্ষায় জাপানের মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নতুন নিরাপত্তা কৌশল অনুযায়ী, জাপানের প্রতিরক্ষা কৌশলের মূল স্তম্ভ হবে ‘প্রতি-আক্রমণ সক্ষমতা’ অর্জন। জাপান দাবি করছে, এ কৌশলের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র উেক্ষপণ কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করার দিকে নজর থাকবে তাদের।
চীন এর প্রতিক্রিয়ায় গতকাল বলেছে, জাপান যেন তার ‘নীতির প্রতিফলন ঘটায়’। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে জাপান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বোঝাপড়া থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং চীনের অবমূল্যায়ন করেছে। ’
তবে জাপানের নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে উন্মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সমুন্নত রাখতে জাপানের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই প্রকাশ।
সূত্র: বিবিসি
Posted ২:১৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin