
নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
বইমেলা থেকে বিশ্বকাপ। বছর জুড়েই ছিল আনা আয়োজনে তোলপাড়। ২০২২ সালের নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে আলোচনায় ছিল রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ। কলেজে বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া ৩০তম অধ্যক্ষ প্রফেসর তালাত সুলতানার বেদনা বিধুর বিদায়ের খবর যেমন ছিল, তেমন ছিল উনিশ বছর পর পুনরায় তোলপাড় ক্যান্টিন চালু কিংবা সবার প্রিয় রবীন্দ্র-নজরুল মুক্তমঞ্চের মতো আবেগতাড়িত খবর। এছাড়াও ছিল তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশে প্রথম বঙ্গবন্ধু বইমেলার প্রশংসার জোয়ার ও বিশ্বকাপ।
তিতুমীরে নতুন ২ একাডেমিক ভবন ও ২ হল উদ্বোধন
শিক্ষার্থীদের জন্য বছরের শুরুতেই ছিল চমক। এপ্রিলের ১৮ তারিখে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে নবনির্মিত ও নির্মিতব্য ১০তলা দুটি একাডেমিক ভবন ও দুটি হল এবং পাশাপাশি ‘হৃদয়ে মুজিব’ শিরোনামের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হলেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ
মে মাসের ৩০ তারিখে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর-গুলশান মাধ্যমিক শিক্ষা থানা প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিল সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোসা. তালাত সুলতানা।
তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
চার বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল রোববার ১২ জুন। সেদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেইজে ১৩ পৃষ্ঠার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এতে বিভিন্ন পদে স্থান পাওয়া ৩২১ জনের নাম-পদবি প্রকাশ করা হয়েছিল।
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছিল।
১৯ বছর পর তিতুমীর কলেজে তোলপাড়
২৬ জুলাই রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে দীর্ঘ ১৯ বছর পর ‘তোলপাড়’ সবারে করি আহ্বান, শিরোনামে ক্যান্টিন উদ্বোধন করা হয়েছিল। সেদিন মঙ্গলবার কলেজের তোলপাড় ক্যান্টিন উদ্বোধন করে ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা। সেদিন ক্যান্টিন উদ্বোধনের সংবাদ শিক্ষার্থীদের আবেগতাড়িত করেছিল। উদ্বোধনের দিনটিতে ক্লাস না থাকা সত্যেও অনেক শিক্ষার্থী ছুটে এসেছিলেন শুধুমাত্র ক্যান্টিন দেখার উদ্দেশ্য।
রবীন্দ্র-নজরুল মুক্তমঞ্চ
জুলাইয়ের ২৭ তারিখ বর্ষণমুখর একটি দিন। বৃষ্টির সেদিনে ভিজতে ভিজতে রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চ উদ্বোধন করেছিলেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর তালাত সুলতানা। সেদিন রবীন্দ্র-নজরুল মুক্তমঞ্চ উদ্বোধনের সময় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন বিদায়ী অধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা। উদ্বোধনের এক পর্যায়ে আবেগতাড়িত হয়ে অঝোরে কেঁদেছিলেন এবং কাঁদিয়েছিলেন হাজারো শিক্ষার্থীকে।
৩০তম অধ্যক্ষ প্রফেসর তালাত সুলতানার বিদায়
বেদনায় মোড়ানো আরেকটি দিনের উপক্রম ঘটেছিল রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে। সেদিন বৃহস্পতিবার ২৮ জুলাই ২৩তম শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বিদায় জানানো হয়েছিল সবার প্রিয় অধ্যক্ষ প্রফেসর তালাত সুলতানাকে।
তিতুমীর কলেজের বিগত দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে অধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা সেদিন বলেছিলেন, কর্মজীবনে অনেকগুলো বছর পার করলাম। এই তিতুমীর কলেজে শত স্মৃতি রয়েছে আমার। দীর্ঘদিন শিক্ষকতায় আমার প্রাপ্তি আমার শিক্ষার্থীরাই। যখন কোথাও কোনো দরকারে যাই, তখন অনেকেই এগিয়ে এসে বলে আমি তিতুমীর কলেজের। তখন বেশ ভালোই লাগে। আমি সবার জন্য দোয়া করি তারা যেন প্রত্যেকে ভালো অবস্থানে পৌঁছায় এবং ভালো মনের মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলে।
পঁচাত্তরের পর প্রথম বঙ্গবন্ধু বইমেলা
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু বইমেলার আয়োজন করেছিল সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। দুই দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধু বইমেলার উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
মেলায় সেদিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৮০টি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গল্প কবিতার বই ছিল ১২০টি। বঙ্গবন্ধু বইমেলায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের মধ্য ছিল ‘ডাকটিকিট ও মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু’, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইংরেজি অনুবাদ ‘ব্লাড অব আওয়ার হিরো বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন’, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ইত্যাদি।
তিতুমীর কলেজের পরিবহন পুলে যুক্ত হওয়া নতুন চারটি বাস
সম্প্রতি ক্যাম্পাসে সবথেকে বেশি চর্চায় ছিল তিতুমীর কলেজ পরিবহন পুলে যুক্ত হওয়া চারটি বাসকে ঘিরে। সেদিন ২১ আগস্ট রোববার সব জল্পনা-কল্পনা শেষে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট নিরসনে আরো নতুন চারটি বাস সংযুক্ত করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাস চারটি গ্রহণ করেছিল কলেজ প্রশাসন।
নতুন চারটি বাস পেয়ে সেদিন শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বয়ে যায়। সেদিন চোখে পড়ার মতো চিত্র ফুটে উঠেছিল তিতুমীরের ক্যাম্পাসে। কেউ কেউ মুঠো ফোনে সেলফি তুলছে ত কেউ বাসের রুট নির্ধারণে হিসাব কষছে। এভাবেই গত তিন মাসে তিতুমীরের ক্যাম্পাসের দিনগুলো আলোচনার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে।
বিশ্বকাপে তিতুমীর যেন আরেকটি স্টেডিয়াম
গত ২০ নভেম্বর থেকে কাতারে শুরু হওয়া ফুটবল বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ সরকারি তিতুমীর কলেজের মাঠেই উপভোগ করেছিল দর্শকরা। কেবল বড় পর্দায় খেলা দেখা নয় শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আসনেরও (বসার) সুব্যবস্থা করা হয়েছিল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে। প্রতিটি খেলা ১৬ফিট দৈর্ঘ্য এবং ১০ফিট প্রস্থের এলইডি টিভি দিয়ে সম্প্রচার করা হয়।
বিশ্বের পাশাপাশি বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশব্যাপী। এর ব্যতিক্রম ছিল না তিতুমীর কলেজও। সারা দেশের মানুষের ন্যায় বিশ্বকাপের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছিল তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। শিক্ষার্থীরা কলেজ মাঠে বসেই বড় পর্দায় উপভোগ করেছিল বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ। এ যেন বিশ্বকাপের আরেকটি স্টেডিয়ামে পরিণত হয়েছিল।
২৭ নভেম্বর রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের আন্তঃবিভাগীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সেদিন উদ্বোধন শেষে মেয়র নিজেই নেমে গিয়েছিল মাঠে, বল নিয়ে দুই পায়ে ফুটবলের ছন্দ দেখিয়েছিল সবাইকে। এই ছন্দ কেড়ে নিয়েছিল উপস্থিত সবার মন।
দীর্ঘ কয়েকমাস অধ্যক্ষের শূন্য পদের বিপরীতে ৩০ নভেম্বর রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন পেয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম। ঐদিন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতেরের উপসচিব চৌধুরী সামিনা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তিতুমীরে নবান্ন উৎসব
‘এসো মিলি নবান্নের উৎসবে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে তিতুমীর নাট্যদলের আয়োজনে ২২ অগ্রহায়ণ (৭ ডিসেম্বর) কলেজে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঐ আয়োজনে ছিল পিঠা উৎসব, নাটক, নবান্ন মেলা, ঘুড়ি উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বছরের শেষে সবথেকে বেশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তিতুমীর কলেজের ভিডিও আর্জেন্টিনার অফিসিয়াল পেইজের বিষয়টি। বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরের মতো এবারের কাতার বিশ্বকাপ ঘিরেও মেতে উঠেছিল বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা। নিজেদের পছন্দের দলের জয়-পরাজয় নিয়ে মেতেছিল তারা। বাংলাদেশের প্রতিটি শহর-গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় এখন ফুটবল ভক্তের জোয়ার বইয়েছিল। বাদ ছিল না তিতুমীর কলেজেও। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়েছিল বিশ্বকাপের উন্মাদনা। ১৪ ডিসেম্বর ঠিক এমন উন্মাদনা-উল্লাসের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল আর্জেন্টিনার অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে।
Posted ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২২
ajkerograbani.com | Salah Uddin