বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ০২ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। নওগাঁ, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। হিমশীতল বাতাসে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। ঘনকুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় সারাদেশে জনজীবন বিপর্যস্ত। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় গত এক সপ্তাহযাবত দিনে সূর্যের দেখা মিলছে। হাড় কাঁপানো শীতের কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য গরীব মানুষরা খড়কুটো জ্বালিয়ে একটু উষ্ণতার পরশ নিচ্ছে। কুয়াশার চাদরে সারাদিন সূর্য ঢাকা থাকায় ঘর থেকে বেরিয়ে কাজের সন্ধানেও অনেকে যেতে পারেন না। এর ফলে দিনে এনে দিনে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান, ঠেলাচালক, কৃষি শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের রোজগার নেই। দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে কাজের আশায় প্রচণ্ড শীতেও অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছে, কিন্তু মিলছে না কাজ। কাজ না পাওয়ায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সারাদেশে বাড়ছে শীতজনিত রোগ-বালাই। নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার শিশু ও বৃদ্ধ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে সকালেও হেডলাইড জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। গতকালও কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল রাজধানী। সকাল থেকে ঘনকুয়াশার কারণে রাজধানীতে যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কিছু কিছু স্থানে কুয়াশা এত ঘন হয়ে জমে যে ২০ হাত দূরের জিনিসও দৃশ্যমান হয় না। শীত ও কুয়াশার এ অবস্থা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এ সংস্থার তথ্যমতে, চলতি সপ্তাহের শেষে শীতের দাপট আরও বাড়তে পারে। কয়েকটি এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। শৈত্যপ্রবাহ শক্তিশালী হয়ে আরও কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। চলতি মাসে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তবে এ মাসে শৈত্যপ্রবাহ তীব্র্র আকার ধারণ বা তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার আশঙ্কা নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল রাজধানীসহ দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকার তাপমাত্রাও শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক শূন্য নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও শ্রীমঙ্গলে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিন আগে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পরতে পারে। সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার ও -এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

সারাদেশে শীতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট নিচে তুলে ধরা হল।
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, পৌষ মাসের শেষার্ধে এসে সারা দেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলেও বেড়ে গেছে কুয়াশা ও শীতের দাপট। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল-কনকনে হাওয়ায় জেঁকে বসেছে শীত। এতে করে মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষত চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা ও হাড়কাঁপানো শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল উত্তর জনপদের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শ্রীমঙ্গলে ১০ ডিগ্রি সে.।

শীতের কষ্ট থেকে পরিত্রাণের জন্য ফুটপাত থেকে অভিজাত মার্কেট-শপিংমল পর্যন্ত গরম কাপড়ের বেচা-কেনা জমজমাট। হতদরিদ্র মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ভোর থেকে সকালে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে শহর-গ্রাম-জনপদ। এর ফলে দিনে এনে দিনে খাওয়া গরীব শ্রমজীবী মানুষের রুজি-রোজগারে ভাটা পড়েছে। দু’মুঠো আহার জোগাড় করতে কাজের আশায় ঠায় বসে আছে শ্রমজীবীরা। তেমন মিলছে না কাজ। কুয়াশা ও শীতের কাঁপন বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে জ্বর-সর্দি, কাশি, শ^াসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ হরেক শীতজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভিড় বেড়েছে। শীতের তীব্রতা যতই বাড়ছে ততই গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় রস ও গুঁড় এখন আগের মতো মিলছে না। দামও বেড়ে গেছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:১৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০২ জানুয়ারি ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]