নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
হ্যাটট্রিক জয়ী আওয়ামী লীগ সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তি শনিবার (৭ জানুয়ারি)। গত চার বছর বর্তমান সরকারের চলার পথ নিষ্কণ্টক ছিল না। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সব বাধা পেরিয়ে সরকার যতটা অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং জীবনমানের পরিবর্তন করেছে তা অতীতের কোনো সরকার করতে পারেনি। তবুও সরকার গঠনের টানা তৃতীয় মেয়াদের পঞ্চম বর্ষে দাঁড়িয়ে সাফল্য-সীমাবদ্ধতার হিসাব কষছে দেশের প্রাচীনতম এই দলটি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয় পেয়ে সরকার গঠন করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে চার বছর পেরুনোর পাশাপাশি একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার, যা দেশের ইতিহাসে বিরল।
সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই গত বছর পদ্মা সেতুর মতো সাহসী অবকাঠামো চালু করা সম্ভব হয়েছে। ঢাকার বুকে চলছে মেট্রোরেল। ওদিকে কর্ণফুলী টানেলও প্রায় প্রস্তুত। গত বছর একই দিনে উদ্বোধন করা হয় ১০০ সেতু এবং ১০০ সড়ক। চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কর্মযজ্ঞ। তাই অনেকেই বলেন, ২০২২ আক্ষরিক অর্থেই ছিল, অবকাঠামো উন্নয়নের বছর। কেন্দ্র থেকে প্রান্ত সর্বত্র ডিজিটাল সেবা আজ দোরগোড়ায়।
তবে গত চার বছর মসৃণ ছিল না সরকারের চলার পথ। একদিকে করোনার থাবা অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা। যার রেশ চলছে এখনো। সেই ধকলে বেড়ে গেছে জ্বালানির দাম, বেড়েছে আমদানি ব্যয়ও। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে ভোক্তার পকেটে।
এত কিছুর পরও স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। তাইতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার সন্ধ্যায় সরকারের বর্তমান মেয়াদের চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেন, ‘শিল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।’
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সরকার সফল। যে কারণে দেশের মানুষ আবারও বেছে নেবে নৌকাকে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্তি হচ্ছে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত এক বছর করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিশ্বব্যাপী নানা সংকট ছিল। এরপরও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী যেভাবে করোনা মোকাবিলা করেছেন, বিশ্বসম্প্রদায় তার প্রশংসা করেছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, নিক্কি ইনস্টিটিউট ও ব্লুমবার্গের যৌথ জরিপ বলছে, বাংলাদেশ করোনা মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিশ্বে পঞ্চম, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বসংকট ও মূল্যস্ফীতির মধ্যেও বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের মূল্যস্ফীতি ইউরোপ ও অনেক উন্নত দেশের তুলনায় কম হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে আমাদের রেকর্ড অঙ্কের রেমিট্যান্স এসেছে, রফতানি আয় বেড়েছে। গত কয়েক মাসেও রফতানি আয় বেড়েছে।’
উন্নয়ন আর অগ্রগতিকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরাও। তবে তারা বলছেন, মুদ্রার একদিকে যেমন উন্নতি আছে, তেমনি উল্টো পিঠে আছে নানা হতাশার গল্প। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামালের মতে, এই সরকারের শেষ বছরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারা।
বিশ্লেষকদের মতে, জনগণের মনের ভাষা বুঝেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আগামীতেও জনগণের মনের ভাষা বুঝেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিচালিত হবে, সেটাই চায় কোটি বাঙালি।
Posted ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin