শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

‘সন্তানদের ডাকে ঘুম ভাঙে খোকনের’

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

‘সন্তানদের ডাকে ঘুম ভাঙে খোকনের’

৪২ বছর বয়সী খোকন বসাক। মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চার কক্ষের সেমিপাকা ঘরে থাকতেন তিনি। অটোরিকশা চালিয়ে ভালোই চলছিল ছয়জনের সংসার। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে রান্নাঘরের চুলা থেকে লাগা আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঘরে। ছেলেমেয়েদের ‘বাবা বাবা’ ডাকে ঘুম ভাঙলে দেখতে পান আগুনের লেলিহান শিখা। নিজে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারলেও আগুন থেকে বাঁচাতে পারেননি বাবা-মা, স্ত্রী ও আদরের দুই সন্তানকে। ঘরের মধ্যেই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হন তারা।

ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউপির তিন নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায়। শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে খোকন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। মৃতরা হলেন- কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললিতা বসাক (৬০), স্ত্রী লাকি বসাক (৩২), ছেলে সৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে শায়ন্তী বসাক (৬)।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, বেড খালি না থাকায় মেঝেতে রেখেই খোকন বসাককে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শ্বাসনালি পুড়ে গেছে তার। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। শনিবার তার চিকিৎসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এ সময় জানালার গ্রিল কেটে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অগ্নিদগ্ধ একজনকে উদ্ধার করে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিলে চিকিৎসক চমেক হাসপাতালে পাঠান।’

শুক্রবার চমেক হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, মাথা, মুখে, হাতে ও পিঠে দগ্ধ হওয়া খোকন বসাক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। বেড না থাকায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল তাকে। দুই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল তার। কিছুক্ষণ চুপ থাকলেও আবার কেঁদে উঠছেন। কথা বলার অবস্থা তার নেই।

তবুও বলছেন, ‘বাসায় এক রুমে আমার বাবা, এক রুমে মা ও দুই সন্তান এবং অপর একটি রুমে আমরা স্বামী-স্ত্রী থাকতাম। আগুন লাগার পর পাশের রুম থেকে আমার ছেলেমেয়ে চিৎকার করে বলে বাবা আগুন, ঘুম থেকে ওঠো। এরপর সবাই একত্রি হয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখি আগুনের লেলিহান শিখা। এরপর সবাইকে আমার পেছন পেছন দৌড় দিতে বলে আমি বের হয়ে পড়ি। কিন্তু ওরা কেউ বের হতে পারেনি। ঘরেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে মারা গেছে ওরা। যাদের ডাকে ঘুম ভাঙল সেই ছেলেমেয়েকেও বাঁচাতে পারলাম না। সবকিছু হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব।’

হাসপাতালে জেলা পুলিশের এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, অগ্নিদগ্ধ খোকনের মাথা, মুখের বামপাশ, দুই হাত ও পিঠসহ শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। তার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। কথা বলতে পারছেন না। শনিবার তাকে ঢাকা পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

পারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এখতেহার হোসেন বলেন, ‘খোকনের চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে তাকে ঢাকা নেয়া হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:২০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]