নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
তোমার হাত পাখার বাতাসে, প্রাণ জুড়িয়ে আসে! কিছু সময় আরো তুমি থাকো আমার পাশে।
আমি জন্ম থেকেই জ্বলছি ,আমি একা একা চলছি।
আমার মরণ হলে তুমি যদি পাও খবর ফুলে ফুলে এসো প্রিয়া সাজাতে আমার কবর।
উপরোক্ত গানগুলো স্রষ্টা প্রয়াত গায়ক আকবর আলী গাজী। গায়ক আকবর হিসেবেই তিনি পরিচিতি শোবিজ অঙ্গনে। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি (রোববার) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। প্রয়াণকালে তার বয়স ছিল ৫৪ বছর।
দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে তার চিকিৎসা চলছিল। কিডনি, রক্তের প্রদাহ, ডায়বেটিসসহ নানা ধরনের অসুখ শরীরে বাসা বাধে। গত বছরের জানুয়ারী থেকে বিছানায় সয্যশায়ী ছিলেন এই শিল্পী। আচল হয়ে যায় দুই কিডনি। যার কারণে পায়ে পানি জমে এবং কেটে ফেলা হয় তার পা। এর পরে বেড়ে যায় তার কিডনি ও লিভারের সমস্যা। উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় কয়েক দফায়। আবারো বিদেশে চিকিৎসা করানোর পরিকল্পনাও ছিল তার পরিবারের। সে অনুযায়ী তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ফান্ড কালেকশন করেন সকলের থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার জন্য ২০ লাখ টাকা অনুদান দেন। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন তিনি।
হানিফ সংকেতের উপস্থাপনায় জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ইত্যাদি’র মঞ্চ থেকে উঠে আসা গাজী আকবরের কণ্ঠে তোমার হাত পাখার বাতাসে, প্রাণ জুড়িয়ে আসে গানটি তাকে রাতারাতি তারকা খ্যাতি এনে দেয়। তার আয় করা অর্থ দিয়েই সংসার চলে। এই গায়ক মারা যাওয়ার পরে কিভাবে চলছেন তার স্ত্রী সন্তান?
তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, খুব সংকটে দিতাতিপাত করছেন তারা। তিনি বলেন, চাকরি করতেও পারছি না। চাকরি করতে গেলে অথৈ (মেয়ে)র সমস্যা হয়ে যাবে। সে বেলা দুইটা পর্যন্ত স্কুলে থাকে। বাসা এসে খেয়ে কোচিং করতে যায়। সিলেবাস পরিবর্তন হওয়াতে আমি পড়াতে পারছি না। স্কুলে তার টিউশন ফি মওকুফ করে দিয়েছে। সেটা দিয়েই কোচিং করাই। লোন তুলেছি সেটা দিয়ে দিন পার হয়ে যাচ্ছে।
এতোদিন হানিফ সংকেত, ডিপজন অনেক সহযোগিতা করেছেন, এখন তারা কোনো সহযোগিতা করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অথৈর বাবা( গায়ক আকবর) মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি আর খবর নেন না। ডিপজল বস আমার মেয়ের স্কুলের বেতন, বাসা ভাড়া বাকি ছিল ৫ মাসের সেগুলো দিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজনে কল দিতে বলেছেন তিনি।
প্রয়াত গায়কের অপর সংসার থেকে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, তারা আকবরের জমিতে ঘুমায়। আমার তো নিজের ঘর নাই, আমি রাস্তায় ঘুমাই সন্তান নিয়ে। আমার স্বামী আমাদের জন্য কিছু রেখে যাওয়ার আগে আল্লাহ নিয়ে গেছে। অথৈর বাবার ঋণ আছে ১০ লাখ সেটার দায়িত্ব তারা নিবে না। আমাকে শোধ করতে হবে। তাহলে তাদের অভিযোগ কিভাবে ঠিক হয়?
যখন উনি মারা যায় তারা কোনো খরচ করে নি। এমনকি কবরে দেয়া বাশ গুলোর টাকাও আমার থেকে নিছে। সব আমি করেছি। তারা একটা কিছু করেনি। এসব অপবাদ দেয়ার আগে তাদ্দের লজ্জা করা উচিৎ, যোগ করেন আকবর পত্নী কানিজ ফাতেমা।
এই মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা পেলেই সংসার, সন্তান নিজের খরচ যোগানোর জন্য অনলাইনে কিছু করতে চান প্রয়াত শিল্পীর স্ত্রী। আগামী মাস থেকেই শুরু করার ইচ্ছা তার। বর্তমানে প্রবাসী এক ভাইয়ের অর্থে সংসার চলছে বলে জানান ডেইলি বাংলাদেশের প্রতিবেদককে।
গায়কের ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে অথৈ এই প্রতিবেদককে জানায়, আমিও একদিন বাবার মত গান করব। সেজন্য গানের রেওয়াজ করি। তখন আমার মায়ের আর কোনো অভাব থাকবে না।
উল্লেখ্য, গায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে যশোরে রিকশা চালাতেন আকবর। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও আকবরের বেড়ে ওঠা যশোরে। কিশোর কুমারের ‘একদিন পাখি উড়ে’ নতুন করে গেয়েছিলেন আকবর আলী গাজী। এর আগে তিনি যশোরে বিভিন্ন স্টেজ শোতে গান গাইতেন।
Posted ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin