বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ফিলিপাইনের সঙ্গে চুক্তি : চীনকে ঘিরে ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

ফিলিপাইনের সঙ্গে চুক্তি : চীনকে ঘিরে ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিপাইনে চারটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য ম্যানিলা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি চুক্তি হয়েছে। দেশটিতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সফরে এই চুক্তি হলো। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলে আঞ্চলিক পরাশক্তি চীনকে কোণঠাসা করাই এই কৌশলগত পদক্ষেপটির লক্ষ্য।

যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের মধ্যে ঘাঁটি স্থাপনের এ চুক্তির মধ্য দিয়ে উত্তরে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান এবং দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিদ্যমান দীর্ঘ অক্ষের মধ্যে মার্কিন উপস্থিতির শূন্যতা পূরণ হলো। এত দিন কৌশলগত অক্ষটির ফিলিপাইন অংশটি শূন্য ছিল।

ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কৌশলগত ও আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন কেন্দ্রের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কর্মসূচির পরিচালক গ্রেগরি বি পলিং বলেন, ‘দক্ষিণ চীন সাগরে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে ফিলিপাইনের প্রয়োজন হয় না।’

দুই দেশের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের যৌথ বিবৃতিতে ২০১৪ সালে স্বাক্ষরিত বর্ধিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি (ইডিসিএ) পূর্ণ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ওই চুক্তির পর ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের পূর্বসূরি রদ্রিগো দুতার্তে চীনমুখী নীতি গ্রহণ করায় ম্যানিলা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে ভাটা পড়ে।

লুজান দ্বীপে তিনটি ঘাঁটি? :

ধারণা করা হচ্ছে, নতুন চুক্তির আওতায় ফিলিপাইনের লুজান দ্বীপে তিনটি মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন করা হতে পারে। চীনকে বিবেচনার বাইরে রাখলে তাইওয়ানের কাছাকাছি বৃহত্তম ভূখণ্ড এটি।

আরো কিছু জায়গার জন্য ফিলিপাইনকে অনুরোধ করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। অসমর্থিত সূত্র বলেছে, সম্ভাব্য জায়গাগুলো হতে পারে কাগায়ান, জাম্বালেস, পালাওয়ান ও ইসাবেলা দ্বীপ। এসব জায়গায় ঘাঁটি হলে ফিলিপাইনের ভূখণ্ড থেকে তাইওয়ান, স্কারবোরো শোল এবং স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের দিকে নজরদারি চালানো যাবে।

সার্বিক বিষয়ে ওয়াশিংটনের প্রতিষ্ঠান ‘কৌশলগত ও আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন কেন্দ্র’ এর গ্রেগরি বি পলিং আরো বলেন, মার্কিন তৎপরতার মূল লক্ষ্য হবে দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলে চীনকে ভূখণ্ডগত সম্প্রসারণ থেকে দূরে রাখা। এ ছাড়া তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীনের সামরিক তৎপরতায় নজর রাখাও তাঁদের উদ্দেশ্য। তিনি মন্তব্য করেন, ফিলিপাইনের কাছে এই অক্ষে যোগ দেওয়া ছাড়া চীনের সম্প্রসারণ ঠেকানোর উপায় নেই।

ইউনিভার্সিটি অব ফিলিপাইনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হারম্যান ক্রাফট অবশ্য মনে করেন, ফিলিপাইন মোটেও পুরোদমে মার্কিন জোটের অংশ হবে না। বরং তারা অর্থনৈতিক কারণে চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। অধ্যাপক ক্রাফট দাবি করেন, জাপান বা অস্ট্রেলিয়ার মতো করে কিছু করছে না ফিলিপাইন।

পুরনো আঞ্চলিক বিরোধ :

দক্ষিণ চীন সাগরের বিস্তীর্ণ সমুদ্র অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব দাবি করে চীন। এ নিয়ে প্রতিবেশী ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ব্রুনেই ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। এমনকি কেউ কেউ একে দক্ষিণ চীন সাগর না বলে অন্য নামে ডাকতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে চীনকে ঠেকাতে দক্ষিণ চীন সাগরের দাবিদার দেশগুলোর প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে।

ফিলিপাইনের বামপন্থী দলগুলো এই চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বামপন্থী প্যাট্রিয়টিক অ্যালায়েন্সের মহাসচিব রেনোতো রেয়েস বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বৈষম্যের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’

ঘনিষ্ঠতার দীর্ঘ ইতিহাস :

গত শতকের আশির দশকেও ফিলিপাইনে ১৫ হাজারের মতো মার্কিন সেনা ছিল। দেশটির ক্লার্ক ফিল্ড ও সুবিক বে অঞ্চলে এশিয়ার বৃহত্তম দুটি সামরিক ঘাঁটি ছিল ওয়াশিংটনের। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের শেষে স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের শাসন উত্খাত হওয়ার মধ্য দিয়ে ফিলিপাইনের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এবার ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে দেশের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় আবারও মার্কিন ঘাঁটি স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হলো।

আগের ঘাঁটির সময় অনেক মার্কিন সেনার বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। ফিলিপাইনি নারীদের গর্ভে প্রায় ১৫ হাজার শিশুর জন্ম দিয়ে মার্কিন সেনারা সে দেশ ছেড়েছিল। সেই অতীতের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন ফিলিপাইনের কেউ কেউ।

সূত্র : বিবিসি, এএফপি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(205 বার পঠিত)
(190 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]