বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

বৈদেশিক সহায়তা ও প্রকল্পের গতি নিম্নমুখী

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

বৈদেশিক সহায়তা ও প্রকল্পের গতি নিম্নমুখী
বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি ও দেশীয় অর্থনীতির নানামুখী চাপের প্রভাব পড়েছে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। যার ফলে একদিকে যেমন কমছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নের হার, অন্যদিকে কমেছে বৈদেশিক সহায়তা। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) নতুন অর্থবছরের ছয় মাসের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই নিম্নমুখী প্রবণতা।

আইএমইডি বলেছে, চলতি ২০২২-২৩ বছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২৩.৫৩ শতাংশ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরের একই সময় এই হার ছিল ২৪.০৬ শতাংশ। খুব বেশি না হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের হার কমেছে ০.৫৩ শতাংশ। খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি না থাকায় এমনটি হয়েছে।

অপরদিকে ইআরডির তথ্য-উপাত্ত বলেছে, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে গত অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ অর্থ ছাড় কম হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ও সহায়তা বাবদ ৩৭৮ কোটি পাঁচ লাখ ডলার পেয়েছে, যা গত অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৯ কোটি ডলার কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ খাতে এসেছিল প্রায় ৪১৭ কোটি ডলার। তবে অর্থ ছাড় কম হলেও এ সময় বেড়েছে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ।

আইএমইডির দেওয়া সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অর্থবছরের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ৯টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার এডিপি বাস্তবায়ন হার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এডিপি বাস্তবায়ন করেছে ২.৪৯ শতাংশ। এবং জরনিরাপত্তা বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ২.৯৯ শতাংশ। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫.৩১ শতাংশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৫.৪৯ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬.০৭ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৯.৫ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৯.৫১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে। অপরদিকে ধীরে ধীরে কমছে উন্নয়ন প্রকল্পের বৈদেশিক সহায়তা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ও সহায়তা বাবদ ৩৭৮ কোটি পাঁচ লাখ ডলার পেয়েছে, যা গত অর্থবছর একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৯ কোটি ডলার কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ খাতে এসেছিল প্রায় ৪১৭ কোটি ডলার। একই সঙ্গে কমেছে ঋণের প্রতিশ্রুতিও।

ইআরডির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে খাদ্য এবং প্রকল্প সহায়তা বাবদ বৈদেশিক অনুদানের অর্থ ছাড় গত অর্থবছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। তবে এ সময় ঋণের অর্থ ছাড় অনেকটা কম হয়েছে। প্রথম ছয় মাসে অনুদানের অর্থ ছাড় হয়েছে প্রায় ২১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরে একই সময় ছিল প্রায় ১৫ কোটি ডলার। আর ঋণের অর্থ ছাড় হয়েছে ৩৫৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরে ছিল ৪০২ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় হয়েছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে। তাদের কাছ থেকে এসেছে ৯২ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এর পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থ ছাড় করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যংক (এডিবি)। তাদের কাছ থেকে এসেছে ৫৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) কাছ থেকে এসেছে ৫৪ কোটি তিন লাখ ডলার। চীন থেকে এসেছে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রাশিয়া থেকে অর্থ ছাড় হয়েছে ৪৪ কোটি ডলার, ভারত দিয়েছে ১৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। এ ছাড়া অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ সময় অর্থ ছাড় হয়েছে ৩৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার।

একই সঙ্গে কমেছে অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতিও। ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতিও কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। এ সময় বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ ১৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। অথচ এর আগের বছরের একই সময় বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছিল প্রায় ৪৩০ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬০ শতাংশ।

এক বছরের ব্যবধানে অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি কমেছে ২৬৪ কোটি ডলার : চলতি বছরের ছয় মাসে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিভিন্ন প্রকল্পে মাত্র ১৭৬ কোটি ডলারের অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। গত বছর একই সময়ে ৪৪০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছিল। এক বছরের ব্যবধানে অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি কমেছে ২৬৪ কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অর্থনীতির এই চাপের সময় বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করার দরকার বেশি। কারণ এতে দেশে ডলার আসবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থনীতি চাপের মুখে আছে তার প্রতিফলন আমাদের এখানেও দেখা যাচ্ছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:০৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]