শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুকুলের মৌ-মৌ সুবাস

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

মুকুলের মৌ-মৌ সুবাস

আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহী। আমের নগরীতে গত বছরের মতো এবারো মাঘের শেষ ও ফাল্গুনের শুরুতে মুকুলে মুকুলে ভরে উঠেছে আমবাগান। নগর কিংবা গ্রাম, আম গাছের নিকটবর্তী হলেই মিলছে মুকুলের মৌ-মৌ সুবাস। তবে গত বারে গাছভর্তি মুকুল আসলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে হতাশায় ডুবেছিলেন আম চাষি ও বাগান মালিকেরা। তাই এবার বাগানে পর্যাপ্ত মুকুল আসলেও চাষিদের মনে দেখা মিলে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা। তবে, কৃষি দফতর বলছে- আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং সঠিক পরিচর্যা করলে গত বছরের থেকে এ বছর বাম্পার ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলেছে গাছে গাছে ভরপুর স্বর্ণালী মুকুলের আভা। মুকুলের ভারে প্রতিটি আম গাছের মাথা নুয়ে পড়ার উপক্রম। মৌমাছিরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন মধু আহরণে। মুকুলের সমারোহ দেখে অত্যন্ত প্রফুল্ল আম চাষিরাও। তবে গত কয়েকদিন যাবৎ ভোরের দিকে ঘন কুয়াশায় হওয়ায় কিছুটা ভয়ে কাটছে আম চাষিদের দিন। কারণ, ঘন কুয়াশায় আমের মুকুলের ক্ষতি করে বিভিন্ন রোগব্যাধি।

জানা গেছে, ২০২১-২২ মৌসুমে আমের আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ১১ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন এবং মোট উৎপাদন হয়েছিলো ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন।

এবার জেলায় আবাদ ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৯১ হেক্টর। তবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আগের তুলনায় আরো বাড়বে বলে জানানো হয়। কারণ গত বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ আম্ফানের কারণে শতকরা ১৫ ভাগ ফলন কম হয়েছিল। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন অনেক কৃষক। তবে এবার ঝড় কিংবা অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আর তীব্র দাবদাহ থেকে গাছের মুকুল ও গুটি বাঁচাতে চাষিদের পূর্বপ্রস্তুতি ও কৃষি সহায়তা প্রদান করা হবে বলেও জানিয়েছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

মহানগরীর উপকণ্ঠ নওহাটা এলাকার বাসিন্দা রাজিবুল ইসলাম ইরান। দেড় যুগ ধরে আমের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।

তিনি বলেন, গত বছর প্রথমদিকে গাছে এতো মুকুল এসেছিল তা বলার মতো না। কিন্তু আফসোস মুকুল টেকেনি। প্রথমদিকে ঝড়-বৃষ্টি আর রোদ্রের প্রচণ্ড তাপে ঝরে পড়েছে মুকুল ও গুটি আম। ঔষধির ব্যবহার আর পানির প্রয়োগ করেও লাভ হয়নি। তবে এবছরও গতবারের মতো আবহাওয়া বিপর্যয় ঘটলে আমাদের হা-হুতাশ করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।

তাই আগে থেকেই পূর্বপ্রস্তুতি ও পরিচর্যা নিচ্ছি। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস ও ফল গবেষণার কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সহায়তায় কুয়াশাজনিত রোগবালাই থেকে বাঁচতে কীটনাশকসহ কিছু ওষুধ গাছে ছিটানো কাজে বেশ ব্যস্ত সময় কাটছে। গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ দেখে আপাতত মনটাও বেশ ভালো। আর আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, আগের মতো আবহাওয়া বিপর্যয় যেনো না ঘটে।’

গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউপির আকবর আলী জানান, ‘এবার গাছে বেশ ভালো মুকুল এসেছে। গুটিও হচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু মনে মধ্যে কাজ করছে শঙ্কা। গতবারের মতো ঝড়-বৃষ্টি ও তীব্র দাবদাহ হলে গাছে মুকুল থাকবে না। লাভের আশা রোদ এবং ঝড়-বৃষ্টির পানিতেই ভেসে যাবে।’

তবে আমের মুকুলের সঠিক পরিচর্যা করলে রোগব্যাধিসহ অন্যান্য সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে জানিয়েছেন রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল আলিম।

তিনি বলেন, কুয়াশা খুব বেশি হলে ‘পাউডারি মিলডিউ’ নামে রোগ হতে পারে। এ রোগের কারণে প্রথমে মুকুল সাদাসাদা হয়ে কালো বর্ণ ধারণ করে ঝরে পড়ে। দীর্ঘদিন কুয়াশা অথবা হপার পোকার আক্রমণে মুকুলে কালো আস্তরণ পড়ে থাকে। এ থেকে রোধ পেতে সালফার জাতীয় ফাংগিসাইড যেমন- থিউবিট, কমোলাস নামের ওষুধ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা থেকে রক্ষা মিলবে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ও কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ হিল কাফী বলেন, গাছের ঠিকমতন পরিচর্যা নিলে মিলডডিউ ও বিভিন্ন ভাইরাসজনিত আক্রমণ থেকে রক্ষা সম্ভব। কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে সরকার কৃষকদের যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পূর্বের চাইতে অধিক লাভের মুখ দেখবেন আম চাষিরা।’

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৩২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]