মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শরণার্থী হয়ে বাস করেছে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ। এই পটভূমিতে রচিত হয়েছে ‘শরণার্থীর সুবর্ণরেখা’ উপন্যাস। সেই সময়ের শরণার্থী জীবনের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসে। গ্রন্থটি মেলায় নিয়ে এসেছে মাওলা ব্রাদার্স। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ।
সেলিনা হোসেনের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন রাজশাহী শহরে। ষাটের দশকের মধ্যভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁর লেখালেখির সূচনা। সেই সময়ের লেখা নিয়ে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘উৎস থেকে নিরন্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। তারপর উপন্যাস, গল্প, শিশুসাহিত্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনিসহ অসংখ্য শাখায় তাঁর বিচরণ। সেলিনা হোসেনের লেখার জগৎ বাংলাদেশের মানুষ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। তাঁর উপন্যাসে প্রতিফলিত হয় সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংকটের সামগ্রিকতা। বাঙালির অহংকার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তাঁর লেখায় নতুন মাত্রা পেয়েছে।
‘শরণার্থীর সুবর্ণরেখা’ উপন্যাস প্রসঙ্গে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের যেসব অঞ্চলে বাংলাদেশের মানুষ শরণার্থী হিসেবে ছিলেন, সেসব জায়গা পরবর্তী সময়ে আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। আমার পরিচিত অনেকেই সেখানে শরণার্থী হিসেবে ছিলেন। এই পটভূমিতে আমি উপন্যাসটি লিখেছি।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পর শরণার্থীদের বসবাস নিয়ে লেখা এ উপন্যাসে পাঠক স্বাধীনতার সময়কে খুঁজে পাবেন। ওই সময়কে বোঝার মধ্য দিয়ে আত্ম-আবিষ্কারের চিত্র পাবেন তাঁরা। আর নতুন প্রজন্ম, স্বাধীনতার পরে যাঁদের জন্ম, তাঁরা শরণার্থীদের জীবনযাপন বুঝতে পারবেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের চিত্র পাবেন।’
বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮০), একুশে পদক (২০০৯), স্বাধীনতা পুরস্কারসহ (২০১৮) বহু সম্মাননা অর্জন করেছেন। ১৯৯৪-৯৫ সালে তিনি তাঁর ত্রয়ী উপন্যাস ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’ রচনার জন্য ফোর্ড ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ পেয়েছিলেন। ২০১০ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি-লিট উপাধি পান। ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি, কানাড়ি, রুশ, মালে, ফরাসি প্রভৃতি ভাষায় তাঁর বেশ কয়েকটি গল্প অনূদিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ‘যাপিত জীবন’ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ উপন্যাস পাঠ্যসূচিভুক্ত।