
নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
শীতের স্নিগ্ধ সকালে অফিসের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই সকলের চোখে পড়বে শিশির বিন্দুতে ভিজে লাল টকটকে হয়ে উঠেছে গোলাপ ও ডালিয়া ফুল। হিমেল হাওয়ায় সতেজ হয়ে উঠেছে গাঁদা ফুলের গাছগুলো। উড়ে উড়ে ফুল থেকে ফুলে প্রজাপতি আর মৌমাছির নাচন। সাজানো গোছানো ফুল বাগানের চারদিকে মৌ মৌ করছে রঙিন ফুলের সৌরভ।
ফুলের পরশে এমনই মোহনীয় হয়ে উঠেছে বরিশাল বিভাগের বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা ভূমি অফিসের আঙিনা। উঁচু ভবন থেকে দেখলে মনে হবে যেন এক টুকরো মাটিতে ফুলের গালিচা বিছিয়ে সংবর্ধনা দিতে আপনাকে ডাকছে।
ভোরের শীতল রোদের কিরণ ফুলের গায়ে পড়তেই চারিদিকে তার আভা ছড়িয়ে পড়ে। গাছের পাতার ভাঁজে ভাঁজে হেসে উঠে সবুজ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। আবার রাতের আঁধারে নানান রঙের আলোর ঝলকানিতে ফুলের বাগানটি মুগ্ধ করবে যে কাউকে। বাগানের মধ্যেই নির্মাণ করা হয়েছে একটি গোলঘর যেখানে বসে আপনি অনায়েসে আড্ডা দিতে পারবেন। উপভোগ করতে পারবেন নয়নাভিরাম দৃশ্য।
সরকারি অফিসের আঙিনায় পরিত্যক্ত জমিতে প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য তৈরিতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগে নিয়েছেন পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার। যোগদানে পর থেকে তিনি গোটা উপজেলাকে ঢেলে সাজাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
ভূমি অফিসের ফুলের বাগানের সামনেই কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি কক্ষ বিশিষ্ট গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি কাচারি ঘর। যে ঘরটিতে পূর্বে উপজেলা ভূমি অফিসের কার্যক্রম চলতো। কয়েক যুগ আগে এর পাশেই স্থায়ী একটি ইমারাতে ভূমি অফিসের কর্যক্রম হস্থান্তর করা হলে ঐতিহ্যবাহী এ কাঠের ঘরটিকে পরিত্যক্ত করা হয়। অতি সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় ও অর্থায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুফল চন্দ্র গোলদার গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে কালের স্বাক্ষী হয়ে অযত্ন-অবহেলায় দাঁড়িয়ে থাকা আভিজাত্যের প্রতীকটি রক্ষা করতে নানান উদ্দ্যেগ গ্রহণ করছে।
এরমধ্যে সংস্কারণ করে লাল-সবুজের রংঙে সাজিয়ে তোলা হয়েছে কাঠের কারুকাজ করা টিনের তৈরি এই দোতলা ঘরটি। যার নাম দেওয়া হয়েছে কাচারি ঘর। ঘরটির আশেপাশের কক্ষে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। সামনের বারান্দায় রাখা হয়েছে বসার ব্যবস্থা। আবার মাঝের রুমে করা হয়েছে বিশ্রামের ব্যবস্থা প্রয়োজনে এক-দুইদিন রাত যাপনও করা যাবে এখানে।
ইউএনও সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, ‘কাচারি ঘর ছিল বাংলার অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থের আভিজাত্যের প্রতীক। দীর্ঘদিন এটি এখানে অযত্ন-অবহেলায় পরে ছিলো। গ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পাথরঘাটা ভূমি অফিসের এই ঘরটিকে সংস্কারের উদ্দ্যোগ নিয়েছি। দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এ ঘরের সঙ্গে।’
কয়েক মাস আগেও যেদিকে তাকালে মানুষ ভয় পেতো সেই কাচারি ঘর থেকে দুই কদম এগিয়ে ডান পাশে তাকালেই চোখে পড়ে বিশাল এক কৃষি বাগান। যেখানে কুমড়া, লাউ, শিম,করলা, টমেটো, বেগুন, পেঁপে, কাচামরিচ, লালশাক, পুঁইশাকসহ মৌসুমের নানা শাক-সবজির গাছ রয়েছে। আর এসব গাছ থেকে উৎপাদিত হচ্ছে বিষমুক্ত শাক-সবজি। যা এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা মেটানোর পর বাড়তি অংশ বিক্রি হচ্ছে বাজারে। সবজি বাগানের দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হয়েছে আম, লিচু, সবেদা, মালটা, লেবুসহ বিভিন্ন ফলের গাছ। গাছগুলো এরমধ্যে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে আসতে শুরু করছে ফলনও।
সরকারি অফিসের আঙিনার পরিত্যক্ত জমি কাজে লাগিয়ে হতে পারে বিকল্প কৃষি। অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যেতে পারে কৃষির মধ্য দিয়ে। পরিবেশ রক্ষায়ও রাখতে পারে অনন্য ভূমিকা। এর দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ তৈরি করেছেন সুফল চন্দ্র গোলদার। ছোট এই কৃষি বাগান অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে সবার।
তিনি বলেন,‘এক টুকরো জায়গাও খালি রাখা যাবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা কাজে লাগাতে উপজেলা ভূমি অফিসের পরিত্যক্ত জমিতে ফুল-ফল ও কৃষি বাগান করা হয়েছে। এখানে বিষমুক্ত সবজি ও ফল উৎপাদন হচ্ছে। অবসর সময়ে এ বাগানে সুন্দর সময় কাটানো যায়। মন প্রফুল্ল হয়। আমাদের নিজেদের আঙিনার ছোট ছোট জমিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিতে অনন্য ভূমিকা এবং পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। এটি পরিবেশ সুরক্ষায় আন্দোলন হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়ায় আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।’
বরিশাল থেকে ঘুরতে আসা নাজমুল সানী বলেন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পরিত্যক্ত জমি কাজে লাগাতে পারলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। নিজেদের ফল ও ফুলের চাহিদা মেটাতে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই কৃষি বাগান।
Posted ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin