বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবারো নতুন করে অভিনয়ে মনোযোগী হতে চাই: আফসানা মিমি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

আবারো নতুন করে অভিনয়ে মনোযোগী হতে চাই: আফসানা মিমি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আফসানা মিমি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের আয়োজনে সপ্তম বার্ষিক নাট্য সপ্তাহ উৎসবের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিমি। দীর্ঘদিন অভিনয় করার পর নির্মাতা হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। এদিন বাংলাদেশের নাট্য অঙ্গন ও সমসাময়িক বিষয়ে আফসানা মিমি কথা বলেছেন ডেইলি বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহসান হাবীব।

আফসানা মিমি: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি আমার তৃতীয় আগমন। এর আগে একবার এসেছিলাম ইউএসএআইডির একটা কাজে। আরেকবার শ্যুটিংয়ের কাজে এসেছিলাম। এই ক্যাম্পাসের সর্বত্র শুটিং করেছিলাম। কলাভবনে, নাট্যকলার অডিটোরিয়ামে, পুকুরের ঘাটে, লাইব্রেরিতে, নজরুল ভাস্কর্যে, অগ্নিবীণা হলে-সর্বত্র। তখন খুব ভালো একটা সময় কাটিয়েছিলাম। কারণ, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাই সেখানে অংশ নিয়েছিলেন। এবার এসে ওদের খুঁজছিলাম, কিন্তু ওরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেছে। ঐ কাজটা অনেক সমাদৃত হয়েছিল। ভেবেছিলাম, এখানে প্রজেক্টরে ওটার একটা শো দেখাব। কিন্তু করোনা শুরু হয়ে যাওয়ায় আর সেটা সম্ভব হয়নি। এরপর তিন বছর পরে আজ আসলাম। খুব ভালো লাগছে, কারণ, বারবারই নাট্যকলা বিভাগে আসছি বা নাটকের কাজেই আসছি।

আফসানা মিমি: শুধু জনপ্রিয়তা লাভের উদ্দেশ্যে নাটক বা সিনেমা বানানো হলে তা শুধু সাময়িক জনপ্রিয়তাই এনে দিতে পারে, দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকবে না এটিই স্বাভাবিক। কন্টেন্টের মানের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে, তাহলে দর্শক দীর্ঘ সময় মনে রাখবে।

আফসানা মিমি: মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা যখন নাটকে এসেছিলাম তখন সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নাট্যচর্চা শুরু হয়নি। এখনও টেলিভিশন নাটক বা সিনেমার অভিনয়ের জন্য বাংলাদেশে সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নেই। আমরা যখন শুনি- ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা, পুনা ফিল্ম ইন্সটিউট কিংবা সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইন্সটিটিউটের কথা, সেরকম ইন্সটিটিউট কিন্তু বাংলাদেশে নেই। হ্যাঁ, সরকারিভাবে একটা তৈরি হয়েছে বটে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক যে শিক্ষাটা রয়েছে, সেটা কিন্তু আমরা থিয়েটার বা মঞ্চ থেকেই পেয়েছি। রিহার্সাল রুমটাই ছিল আমাদের শ্রেণিকক্ষ।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, অভিনয় একটা বিস্তৃত জায়গা। তাই এখানে পরম্পরার জায়গাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার একজন গুরু বা মেন্টর থাকা উচিত- যার হাত ধরে আমি শিখি। তাই আমি বলব- এই ধারাটা থাকা জরুরি যে অভিনেতা বা অভিনেত্রী কোনো একটা শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। সেটা হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়, হতে পারে একটা নাটকের দল বা খুব চমৎকার একটা সিনেমার টিম। মোটকথা, অভিনয়ের সঙ্গে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত থাকাটা জরুরি কিংবা একজন গুরু থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। অন্যদের দ্বিমত থাকতে পারে।

আফসানা মিমি: আমি আসলে একটা সময় অভিনয় থেকে সরে গিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে টানা ১৫ বছর নির্মাণ নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। নির্মাণের কাজটা অনেক কঠিন। অভিনয়টাও কঠিন কাজ। তবে অভিনয়ের কাজটা একমুখী। কিন্তু নির্মাতা হিসেবে বহুমুখী দায়িত্ব পালন করতে হয়। ১৫ বছর এই মাল্টিটাস্কিং করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে- আমার অভিনয় স্কিলটাই হয়তো নষ্ট হয়ে গেল (হাসি)। তাই এখন একটু বিরতি নিয়েছি। তবে এটা আমি অত্যন্ত উপভোগ করেছি। যেমন উপভোগ করেছি অভিনয়ও। তবে এখন মনে হচ্ছে, আবার নতুন করে অভিনয়ে মনোযোগ দেব, নতুন করে শিখব। (হাসি দিয়ে) আবার শ্রেণিকক্ষে ফেরত যেতে হবে।

আফসানা মিমি: আমরা কি শুধু নাটকের প্রতিই আগ্রহ হারাচ্ছি? নাকি আমরা আগ্রহ হারাচ্ছি পৃথিবীর সবকিছুর প্রতি? আমরা সবথেকে বেশি আগ্রহ হারাচ্ছি মানুষের প্রতি। আমাদের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে যন্ত্রের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে নয়। আমরা এখন যন্ত্র দেখি, যন্ত্র শুনি, যন্ত্র পড়ি, যন্ত্রের সঙ্গে বসবাস করি। তো যখন আমরা মানুষের থেকে দূরে সরে যাব, তখন মানুষের ভালো লাগা থেকেও আমরা দূরে সরে যাব। শুধু নাটককেই বলবেন কেন- আপনি সিনেমা নিয়ে বলেন, কিংবা সঙ্গীত, সাহিত্য, কবিতা নিয়ে বলেন। নতুন যা কিছু তৈরি হচ্ছে তার কতটুকু মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে? খুব কম। তার মানে হচ্ছে- হিউম্যান ইন্টার‍্যাকশন থেকে আমরা সরে যাচ্ছি। তাই যন্ত্র নির্ভরতা কমালেই আমরা সংস্কৃতির দিকে মনোযোগী হতে পারব। যন্ত্রনির্ভর সমাজ আসলে মিথ্যা সমাজ। তাই যখন আমি আমার ক্যারেক্টারকে নিজে বিশ্বাস করবো না, তখন তাকে পর্দায় দেখে দর্শকরা কেন বিশ্বাস করবে? বিশ্বস্ততার জায়গাটা হারিয়ে যাচ্ছে।

আফসানা মিমি: আজকে যে অনুষ্ঠানে আমি এসেছি তার নিমন্ত্রণপত্রে চমৎকার একটা কথা লেখা আছে- নাট্যে খুঁজি জীবনের মানে, মিলেছি আজ নবযুগের সন্ধানে। ওটিটি হচ্ছে সেই নবযুগ। এই নবযুগকে আমরা অস্বীকার করতে পারব না। এটি আমাদেরকে সারা বিশ্বে সঙ্গে সংযুক্ত করে দিচ্ছে। দীর্ঘদিন আমরা এই চেষ্টাটা করেছি। এখন ওটিটির কল্যাণেই সেটি সম্ভব হয়েছে। একসময় পশ্চিমবঙ্গের দর্শকরা বাংলাদেশি নাটকের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকত। এখন শুধু তারাই নয়- কন্টেন্ট যদি উচ্চ মানসম্পন্ন হয় তাহলে সারা বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া সম্ভব হচ্ছে। এটি একটি অসাধারণ ব্যাপার।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]