নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সবুজ চত্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। যার প্রতিটি প্রান্তর শিল্পীর রঙ-তুলিতে আঁকা ছবির মতো। যার পরতে পরতে লেগে আছে মায়াময় সৌন্দর্যের ছোঁয়া। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপত্য, স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ এই স্থানটি। তার মধ্যে অন্যতম এখানকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। পাখির কিচিরমিচির কলতান, সবুজ শ্যামল প্রকৃতি, পুষ্পে সাজানো বাগানসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অতিমাত্রায় বর্ধিত করেছে এই পবিত্র স্থানটিকে। যার চারপাশের পরিবেশ অলংকৃত করেছে ক্যাম্পাসকে।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের তুলনায় ব্যতিক্রম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। উঁচু বেদির ওপর নির্মিত এই মিনারটি রয়েছে চারটি স্তম্ভ। বাহাত্তরে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান। সেই সংবিধানের চার মূলনীতি ছিল- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। সেই চার মূলনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে রাবির শহিদ মিনারটি। যার চারটি বাহু ১৯৭২ সালের সংবিধানের চারটি মূলনীতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রশাসন ভবন। সেখান থেকে ডান পাশের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেলেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ। এর সামনে রয়েছে কেন্দ্রীয় মসজিদ, পেছনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। পূর্ব দিকে শহিদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, পশ্চিম দিকে একটি দেয়ালচিত্র এবং উন্মুক্ত জায়গা। যেখানে শোভা পাচ্ছে জবা, গাঁদা, গোলাপসহ বিভিন্ন রঙ-বেরঙের ফুল। উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া।
ইতিহাস
‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক’ শীর্ষক একটি প্রকাশনা থেকে জানা যায়, এই শহিদ মিনারটির নকশা করেন স্থপতি খায়রুল এনাম। ১৯৭২ সালের ৯মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ শহিদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ কাজ শেষ হলে ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলী উদ্বোধন করেন।
মূল দৃশ্যপট
শহিদ মিনারটি চার একর জমির উপর অবস্থিত। সমতল ভূমি থেকে ১২ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট টিলার ছয় কোণা প্লাটফর্মের উপর মূল বেদি। ফলে বেশ কয়েকটি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। শহিদ মিনারটিতে রয়েছে ৫৬ ফুট লম্বা চারটি সাদা কালচে রঙের স্তম্ভ। যার বাহুগুলো উল্লম্বভাবে উঠে গেছে উপরে। বাহু চারটি উপরের দিকে বন্ধনী দ্বারা আবদ্ধ করেছে।
পেছনের দেয়ালের ম্যুরাল চিত্র
শহিদ মিনারটির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো, এর পেছনের দেয়ালের ম্যুরাল চিত্র। এক স্নেহময়ী মা ও তার সন্তানদের অবয়ব প্রকাশ করেছে ম্যুরাল চিত্রে। অক্ষয়বট শীর্ষক ম্যুরালটি নানা বর্ণের পোড়া ইট ও পাথরের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। ম্যুরালটি সূর্যের উপস্থিতিতে শহিদ সন্তানদের বীরত্বকে উপস্থাপন করে। এছাড়া মায়ের অঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শহিদদের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার বিষয়টিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গঠনশৈলী এবং উপাদানের বৈচিত্র্যে অনন্য এই ম্যুরালটি নির্মাণ করেছেন শিল্পী মর্তুজা বশীর।
শহিদ স্মৃতি সংগ্রহশালা ও মুক্তমঞ্চ
শহিদ মিনারের পাদদেশে যেদিক থেকে সূর্য উদয় হয় সেদিকে রয়েছে শহিদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। এ সংগ্রহশালার ডিজাইন করেন স্থপতি মাহবুবুল হক। সংগ্রহশালায় রয়েছে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নানা রাজনৈতিক ঘটনাবলির আলোকচিত্র, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নানা শিল্পকর্ম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের আলোকচিত্র, তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। সংগ্রহশালার কোল ঘেঁষে রয়েছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। এর পেছনের দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাম বাংলার আবহমান দৃশ্য। এটি নির্মাণ করেন শিল্পী ফণীন্দ্রনাথ রায়।
দেয়ালচিত্র
শহিদ মিনারের পশ্চিম পাশের একটি দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তির সংগ্রাম ও পরবর্তী সময়ের চিত্রকর্ম। যা মনে করিয়ে দিচ্ছে, দেশভাগ থেকে শুরু করে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বের এবং পরবর্তী সময়ের মুহূর্তগুলো। এ যেন ইতিহাস বইয়ের প্রাণবন্ত পাতা। দেয়ালচিত্র অঙ্কন করেছে রাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
Posted ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin