নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
টার্গেট ব্যক্তিকে আগে থেকে অনুসরণ করে। এরপর বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাকে সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত থাকে। তাদের একজন ওই ব্যক্তির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে মারধর শুরু করে। লোকজন এগিয়ে এলে বলে নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি। ততক্ষণে অন্য একজন ছিনতাইয়ের কাজ সেরে ফেলে।
রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত রাজধানীর কোতোয়ালী, মতিঝিল, খিলগাঁও, রামপুরা, হাতিরঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর ও ওয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ সময় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার, চাকু, ক্ষুর, এন্টিকাটার, কাঁচি, ব্লেড, মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোহাব্বত মিয়া, মো. মাসুম, ফজল খাঁ, মো. সাইফ, মো. আকাশ, মো. আবু বকর, মো. নজরুল ইসলাম, মো. আলমগীর, মো. জাহাঙ্গীর, মো. সোহেল, মো. সোহেল, মো. সোহানুর রহমান সাগর, মো. মামুন, লিটন, মো. আলমাস, সুজন মিয়া, রাকিব, মো. রিপন, মো. কালাম, মো. নজরুল ইসলাম, মো. সুমন মৃধা, অন্তর হোসেন রবিন, মো. আব্দুল রসুল, মো. কবির, মো. ছামিদুল রহমান, ইকবাল হোসেন, কামরুল, শহীদুল ইসলাম উজ্জ্বল, মো. কালু, মো. সুমন, মো. হৃদয় ও মো. সাজিদ খান।
সোমবার রাজধানীর টিকাটুলি র্যাব-৩ এর কার্যালায়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, যে কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে এদের তৎপরতা বাড়ে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে এবং একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর লোকসমাগম হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছিনতাইয়ের মাধ্যমে জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
বেশ কিছুদিন ধরে বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক এ চক্রটি রাজধানীর কোতোয়ালী, মতিঝিল, খিলগাঁও, রামপুরা, হাতিরঝিল, সবুজবাগ, শাজাহানপুর, ওয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছিনতাই করারও পরিকল্পনা করে চক্রটি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণত এসব এলাকায় ছিনতাইকারী এই চক্রটির সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। এছাড়া সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের অন্য সদস্যরা বিভিন্ন অলিগলিতে ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ছিনতাই কাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করে না।
তিনি আরো বলেন, তারা ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে এবং ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোনো রিকশা অথবা সিএনজি আরোহী যাত্রীদের টার্গেট করে তারা অন্য একটি রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে ঐ ব্যক্তির পেছনে যেতে থাকে। ছিনতাইকারীদের সুবিধামত স্থানে পৌঁছে যাত্রীকে এবং চালককে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রিকশা ও সিএনজি যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেয়। ছিনতাইকারীরা তাদের ছিনতাই করা অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেশা করে এবং কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এ চক্রের সদস্যদের অধিকাংশেরই রাজধানীতে বসবাসের জন্য স্থায়ী কোনো বাসস্থান নেই।
র্যাব-৩ এর এ কর্মকর্তা বলেন, তারা সবাই রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে। চক্রের প্রায় সব সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়ায়।
Posted ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin