মঙ্গলবার ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদন

ইবি শিক্ষার্থীকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এতে ছয় শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনেও নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জেবিএম হাসানের নেতৃত্বে দ্বৈত বেঞ্চে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দুটি হাইকোর্টে পড়ে শোনান আইনজীবীরা।

বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, ইবিতে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় সানজিদা চৌধুরী অন্তরা নির্যাতন করেছেন। অমানবিক, পাশবিক ও নির্মম নির্যাতন করেছেন তিনি।

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনে পাশবিক নির্যাতনের সত্যতা মিলেছে। নির্যাতন করেছেন মিম, তাবাসসুম, উর্মি, লিমা, মুয়াবিয়া; আর নেতৃত্বে ছিলেন সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। প্রতিবেদন দুটি আরও পর্যালোচনা করে বুধবার (১ মার্চ) এ বিষয়ে আদেশ দেবেন উচ্চ আদালত। এ সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন আদালত।

এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় হলের প্রভোস্ট এবং হাউস টিউটরদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টিও উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। অভিযুক্তরা ভিকটিমকে মুচলেকা দিতেও বাধ্য করেন। বিচার বিভাগীয় তদন্তে এসেছে, প্রক্টর চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং অভিযোগ পেয়েও কোনো পদক্ষেপ নেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত নিজস্ব কী আইন ও বিধি আছে, সেটিও জানতে চেয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আদালতে দাখিল করা হয়, যা সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়। ইবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জামান মিল্টন তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেন।

এর আগে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ইবির রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি। ওইদিন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল ৫০০৯ নম্বর স্মারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি জমা দেন।

পরে তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান বলেন, ‘আমার কাছে প্রতিবেদনটি এসেছে। এটি উপাচার্য ও হাইকোর্টে পাঠানো হবে।’

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ইবি ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তার আগের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই ছাত্রীকে (ইবি) রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটে জড়িতদের হাইকোর্টে তলব করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মোহসীন জনস্বার্থে রিটটি করেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব, ইবির ভিসি, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় নবীন এক ছাত্রীকে। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে–তারা ওই ছাত্রীকে মারধর করে ও তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাড়ি চলে যান ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। পরে র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা। হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]