নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০১ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ এর ওপর হামলার প্রতিবাদে খুলনায় ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।
বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত খুলনা জেলার স্বাস্থ্য সকল প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকরা পূর্ণকর্মবিরতি চলবে। সকাল থেকেই সরকারি হাসপাতালের বর্হিবিভাগ ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় বিএমএ ভবন খুলনার কাজী আজহারুল হক মিলনায়তনে সাংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম। তিনি বলেন, চিকিৎসকের ওপর হামলাকারী এ এস আই নাঈম ও তার সঙ্গীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না আনা হলে বুধবার সকাল ৬ টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত খুলনা জেলার স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান (সরকারি, বেসরকারি স্বায়ত্বশাষিত) সকল প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকরা পূর্ণকর্ম বিরতি পালন করা হবে। শুধুমাত্র মানবিক কারণে জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। এছাড়া বুধবার সকাল ১০ টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহি:বিভাগ চত্ত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএমএ’র সংবাদ সম্মেলনের পর ঘটনার তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, অথৈ নামের ছয় বছরের আগুনে পোড়া মেয়েটি প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি ছিল। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বাম হাতের কয়েকটি আঙ্গুল জোড়া লেগে যাওয়ায় তার চিকিৎসার জন্য শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই দেখানো হয় ডা. নিশাত আব্দুল্লাহকে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে অপারেশন করে আঙ্গুল ছাড়াতে অনেক সময় লাগবে এমনটি বলা হলে উক্ত ডাক্তারের পরামর্শেই তাকে ভর্তি করা হয় হক নার্সিং হোমে। সেখানে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তার অপারেশন করে ছেড়ে দেয়া হলেও মেয়েটির মায়ের সঙ্গে প্রায়ই মোবাইলের হোয়াটসএ্যাপে এসএমএস দেয়া-নেয়া হচ্ছিল। হক নার্সিং হোমে অপারেশন হলেও কয়েকবার তার ড্রেসিং করা হয় শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালে। এরপর কয়েক দফায় মেয়ের মাকে একা চেম্বারে ডাকা হলেও তিনি না গিয়ে এক পর্যায়ে তার স্বামীকে বিষয়টি জানান। তার স্বামী যেহেতু সাতক্ষীরায় কর্মরত সেহেতু তিনি যথা সময়ে আসতে না পেরে মেয়েকে নিয়ে স্ত্রীকে আবারো ডাক্তারের কাছে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে ঘটনার দিন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রোগীর হাতের একটি আঙ্গুল ব্যান্ডেজের মধ্যদিয়ে পড়ে যাওয়ায় ওই অবস্থায় রোগী নিয়ে তার মা হক নার্সিং হোমে যান। সেখানে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ অপারেশন করায় ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পর বের হলে তাকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর তাকে ওটিতে নেয়ার পর বিভিন্ন মন্তব্য করায় রোগীর মা ৯৯৯ এ কল করে পুলিশ আনেন।
রোগী অথৈ’র মা নুসরাত আরা বলেন, ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আমরা প্রথম আবু নাসের হাসপাতালের ডা. নিশাত আব্দুল্লাহের কাছে আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য যাই। তিনি আমাদের দেখে দ্বিতীয় ফলো আপ দেন ২৭ সেপ্টেম্বর। তিনি বলেন বাবুর হাতে সার্জারি লাগবে। কিন্তু তিনি অনেক দিন থেকে ঘুরাঘুরি করান। তারপর আমাদের বলেন, আপনারা যদি হক নার্সিং হোমে অপারেশনটা করেন তাহলে খুব ভালো হবে। আমি তাকে বলি আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। পেরে অনেক কষ্ট করে টাকা ম্যানেজ করে ওই হাসপাতালে যাই। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ ওখানে যাই। ১৮ তারিখে অপারেশন করি। আমাদের বলে অপারেশন করতে চার ঘণ্টা লাগবে কিন্তু সাড়ে ৫ ঘণ্টা লাগায়। ওটি রুমের মধ্যে ৫-৬ বার ওষুধ আনতে বলেন। ওই দিন থেকে বাচ্চার আঙ্গুল কালো হয়ে যায়। আমরা ১৯ তারিখ তা ডাক্তারকে জানাই।
ডাক্তার জানান, প্রতি ২ ঘণ্টার পর পর আঙ্গুলের ছবি তুলে তার (ডাক্তার) হোয়াটসআপে পাঠাতে। ডাক্তার পরে বাচ্চার বিষয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি দেখা করি না। এরপর তিনি অনেক ম্যাসেজ পাঠান। যেগুলো আমার কাছে ভালো লাগেনি। তিনি আমার সঙ্গে আলাদাভাবে সময় কাটাতে চায়। তাই বাচ্চারে রিলিজ নিয়ে চলে আসি। এরপর একদিন ড্রেসিং করাতে গেলে ওটির মধ্যে রেখে আমাকে চেম্বারে দেখা করতে বলেন। সেখানে গেলে আমার গায়ে টাস করেন। বাজে কিছু কথা বলেন। যখন সেটা বুঝতে পারি তখন দ্রুত চলে আসি। এরপর আমার বাচ্চার ড্রেসিং করতে গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ব্যাথা দেয়। বাচ্চা চিৎকার করলে বলে কতো পারিস চিৎকার কর তোর মা তোর কান্না পছন্দ করে। আমি তখন বাচ্চাকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসে আমার স্বামীকে সব খুলে বলি। এরপর তিনি আমাকে আবার এসএমএস করেন যে তার ভুল হয়ে গেছে। ৬ তারিখ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত বাচ্চার ড্রেসিং করাই ডাক্তারের কাছে। আমার মনে হয় আমি তার কথা রাজি না হওয়ায় আমার বাচ্চার ভুল চিকিৎসায় তার আঙ্গুল হারিয়ে ফেললাম। আমার স্বামীকে বলার পর তিনি এসে ডা. নিশাত আবদুল্লাহকে বাচ্চার বাম হাতের আঙ্গুল পরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তার ওপর হামলা করেন।
৯৯৯ এ ফোন করার পাশাপাশি আমি সোনাডাঙ্গা থানার ওসিকেও বিষয়টি জানানোর পর সেখান থেকেও পুলিশ আসে। এরপর তিনি তার স্বামীকে জানানোর পর তিনি ডিউটিরত থাকায় ছুটি নিয়ে পোশাক পরিহিত অবস্থায় ঘটনাস্থলে আসলে শুধুমাত্র কথা কাটাকাটি হয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই ঘটনাটি সেখানেই মীমাংসা হয়। যেখানে আমার মেয়ের অঙ্গহানির জন্য আমরা মামলা করবো সেখানে উল্টো আমাদেরই আজ ভিকটিম হতে হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দু:খজনক ।শিশুটির পরিবারের অভিযোগ করেন তাদের ওপর হামলা করে ডা. নিশাত এখন নিজেকে বাঁচাতে নতুন নাটক শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে তার ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
Posted ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০১ মার্চ ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin