শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৭ মার্চ স্মরণে তিতুমীর ছাত্রলীগের ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০৭ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

৭ মার্চ স্মরণে তিতুমীর ছাত্রলীগের ভাবনা

বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ মার্চ একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তথা তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে গর্জে উঠেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠ। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। লাখো প্রাণ এবং হাজারো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিলেন দেশের স্বাধীনতা।

বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ পরবর্তীতে স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজমন্ত্রে রূপ নেয়। এ ভাষণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি সম্ভাবনাও তৈরি করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।

বাংলাদেশে ৭ মার্চ দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়। দেশজুড়ে বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই ঐতিহাসিক ও রক্ত গরম করা ভাষণ। এ দিনটি নিয়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতাদের মধ্যে রয়েছে আবেগ-উচ্ছ্বাস ও অনুপ্রেরণা। সেই তাৎপর্য নিয়ে ছাত্র নেতাদের মনোভাব তুলে ধরেছেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি শাকিল আহমেদ।

৭ মার্চ আমাদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের শিক্ষা দেয়

বাঙ্গালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু’র ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণ বাঙ্গালির প্রেরণার চিরন্তন উৎস। এ ভাষণ নিপীড়িত জাতিকে স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের পরেও বাঙ্গালীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের গণমানুষের আস্থার স্থান শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে তালবাহানা শুরু করে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সেই শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সামনে ১৮ মিনিটব্যাপী যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা ছিল বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ। এ ভাষণ ছিল মূলত শাসকদের অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার মানুষকে এক পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশনা।

৭ মার্চের ভাষণের পর বাঙ্গালি আর আগের মতো রইল না। আমূল পরিবর্তন আসে তাদের চিন্তা চেতনায়। দৃঢ় চিত্তে নিজেদের অধিকার আদায়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। যতটা সাহস আগে ছিল এ ভাষণের পর বাঙ্গালির সাহস আরো বেড়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ছয় দফার মাধ্যমে বাঙ্গালিকে স্বাধিকারের যে সাঁকোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তা মূলত ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বপ্ন সেতুতে রূপান্তর করেছিলেন। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বর্তমান ছাত্র সমাজকে এটাই শিক্ষা দেয় সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে কিভাবে ঐক্যবদ্ধ করে অন্যায়, অবিচার শোষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হয়।

শাহাবুদ্দিন বাবু
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা।

৭ মার্চ- পাল্টে যায় বাঙালির মানচিত্র

জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ পাল্টে দিয়েছিল বাঙালির মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত। ২৩ ফাল্গুন, ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ রোববার বিকাল ৩টায় জাতির পিতা জনতার মঞ্চে অধিষ্ঠিত হলেন। উত্তাল জনতা দৃঢ় বিশ্বাসে জাতির পিতার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, কবি কখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিবেন। জাতির পিতা তার অমর কবিতা শুরু করলেন ‘ভাইয়েরা আমার, …..’।

অলিখিত ১৮ মিনিটের বক্তব্যে তুলে ধরেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বাঙ্গালির ওপর নির্যাতনের ২৪ বছরের ইতিহাস।
৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতার দূরদৃষ্টি ছিল স্বাধীনতার প্রতি। তাইতো সেদিন তিনি জনসম্মুখে চারটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। যার মধ্যে নিহিত ছিল বাঙালীর স্বপ্নের স্বাধীনতার বীজ।

এই ভাষণের পিছনে জাতির পিতার অনুপ্রেরণা এবং সাহস যুগিয়েছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। যিনি বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা দিয়েছেন প্রতিটি লড়াই সংগ্রামে। জাতির পিতার সেই ভাষণে ফুটে উঠেছিল গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সমাজতন্ত্র এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা।

জাতির পিতার এই ভাষণটি কালের গণ্ডি পেরিয়ে যুগযুগান্তর বেঁচে থাকবে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা হয়ে। বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণটি সমাপ্ত করেছিলেন অপ্রতিরোধ্য বাঙ্গালীর প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়ে। তিনি বজ্র কণ্ঠে বলেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’

মোঃ দুলাল মিয়া
সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। অপরিসীম সাহস, দৃঢ় মনোভাব ও আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরাধীন বাঙালিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছিলেন।

সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকার করে। ১৯৭১ সালের ৭মার্চ রেসকোর্স ময়দানের বক্তব্যে বাঙালির ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তোলার শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিলেন তিনি। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উচ্চারিত- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ছিল তার অসামান্য নেতৃত্বের উত্থান-পর্বের শেষ শীর্ষবিন্দু।

রাজীব দেব অমিত
সহসভাপতি
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা

মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন জাতির পিতা

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুধু বক্তৃতা নয়, এটি ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গরে তোলা। যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী শোষিত বাঙ্গালী মনে-প্রাণে মুক্তি চেয়েছিল, আর সেই মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন জাতির পিতা। বাঙ্গালির রন্দ্রে-রন্দ্রে প্রতিবাদের ঝড় তুলে দিয়েছিলেন। সেদিন জাতির পিতার ভাষণটি যারা মন দিয়ে শুনেছিলেন, তারা বুঝতে পেরেছিলেন তিনি পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে মুক্তির ঝাণ্ডা নিয়ে এসেছেন। তিনি বাংলার মানুষের মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বার্তা নিয়ে এসেছেন।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জাতি ধর্ম ভুলিয়ে বাঙ্গালিকে করেছে ঐক্যবদ্ধ, এনে দিয়েছে স্বাধীনতা। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনকের ঐ ভাষণের দিক-নির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্র কঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত শক্তির উৎস ছিল এই ভাষণ।

ফিরোজ মাহমুদ মাহিন
সাংগঠনিক সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ মার্চ ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]