নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৮ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সমতাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। সম্প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস শিলা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে তার ভাবনা, শিক্ষাঙ্গনে নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি, নারী শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন ডেইলি বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহসান হাবীব।
জান্নাতুল ফেরদৌস: মূলত তিনটি মূল বিষয়কে সামনে রেখে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মর্যাদাকে সম্মান জানানোই এই দিবসটির উদ্দেশ্য। এই দিবস পালনের মাধ্যমে লৈঙ্গিক সমতা, নারীর ওপর সহিংসতা বন্ধ ও সমানাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনায় আসে। এজন্যই নারী দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন নারীও একজন মানুষ। এই দিবসটির মাধ্যমে একটি বার্তা আমাদের সবার মধ্যে গেঁথে নেয়া উচিত যে, আমরা সবাই মানুষ। এরপর আমরা কেউ পুরুষ কেউ নারী।
জান্নাতুল ফেরদৌস: শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন। এখানে প্রত্যেকেই শিক্ষক। নারী কিংবা পুরুষ হিসেবে কেউ কাউকে আলাদাভাবে দেখি না বা দেখার সুযোগ নেই। তবে একজন নারী হিসেবে নেতৃত্বের জায়গায় আসতে পেরে ভালো লাগছে। এতে করে নারী শিক্ষকরা যেন কোনো বঞ্চনার শিকার না হয় সে লক্ষ্যে আমাদের কাজের গতি ত্বরান্বিত হবে বলে বিশ্বাস করি।
জান্নাতুল ফেরদৌস: হ্যাঁ, বদলাচ্ছে। তার কারণ হচ্ছে, শিক্ষার প্রতি সচেতনতা বেড়েছে। অভিভাবকরাও এখন সচেতন হচ্ছে। এ কারণেই উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।
জান্নাতুল ফেরদৌস: এই খবরগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক। এগুলো নিরসন করতে চাইলে আইন ও আইনগত অধিকার সম্পর্কে নারীকে আগে সচেতন হতে হবে। নিজের সামাজিক অধিকার সম্পর্কেও নরীদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি আইন ও বিচার ব্যবস্থার যে দুর্বলতাটুকু, সেটিও দূর করতে হবে। আইন ও বিচার ব্যবস্থা যদি সবল হয়, তাহলে কিন্তু এ সমস্ত ঘটনা কমে আসবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি, তা হচ্ছে- আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ, নারীদের সম্মানের চোখে দেখার যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেটি অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জান্নাতুল ফেরদৌস: হ্যাঁ, বিজ্ঞান, চিকিৎসাসহ নানা ক্ষেত্রে নারীরা আসলেই পিছিয়ে পড়ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির তুলনায় কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ সেই হারে বাড়ছে না। তার কারণ হলো, নারীদের অনেক সময় ‘ডাবল লোড, ট্রিপল লোড’ নিতে হয়। অর্থাৎ, নারীরা পরিবার সামলায়, সন্তান সামলায় আবার কর্মক্ষেত্রে কাজও করে। এর সমাধান করতে চাইলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করতে হবে। এর পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রটিকেও নারীবান্ধব করে তুললে সব ক্ষেত্রেই নারীরা ব্যাপকহারে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
জান্নাতুল ফেরদৌস: নারীরা যেহেতু অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে সেদিক থেকে দেখলে আসলে এই ব্যাপারটি যৌক্তিক বলেই মনে হয়। এছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে বাচ্চাদের পড়ানো, আদর করা ও শাসন করার বিষয়গুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক৷ কারণ শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের সঙ্গে নারীদের একটা সম্পর্ক রয়েছে।
জান্নাতুল ফেরদৌস: কর্মক্ষেত্রে পুরুষদেরকে সহকর্মী হতে হবে এবং সহমর্মী হতে হবে। পুরুষরা যদি সহকর্মীর পাশাপাশি সহমর্মী হয়, তাহলে অনেক ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়িয়ে যেতে পারব। পুরুষ সহকর্মীরা আসলেই আমাদের প্রতি সহনশীল। তবে ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে। নারীদের প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে, ডাবল-ট্রিপল লোডের ব্যাপারে আমরা অনেক ধরণের অসহযোগিতা দেখি৷ সেগুলো দূর করতে হবে।
জান্নাতুল ফেরদৌস: আগে নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে। এরপর নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
জান্নাতুল ফেরদৌস: আগেই বলেছি, শিক্ষা ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে তুলতে হবে। তাহলেই শিক্ষার সমস্তক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। কর্মমুখী শিক্ষায় নারীরা শিক্ষিত হয়ে উঠলেই কর্মক্ষেত্রেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।
Posted ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৮ মার্চ ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin