নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
মঙ্গলবার তখন মধ্যরাত। ওই সময় দুই বছরের দগ্ধ শিশু মোহাম্মদ আজিমের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় রক্তের। অনেক চেষ্টা করেও রক্তদাতা না পেয়ে কাঁদছিলেন শিশুটির মা। এমন সময় শিশুটির প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে এলেন চিকিৎসক। নিজেই দিলেন রক্ত। মানবিক এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রশংসায় ভাসছেন হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. বিমান চন্দ্র আচার্য।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঘটনাটি ঘটে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। দগ্ধ শিশু মোহাম্মদ আজিম উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শতফুল গ্রামের দিনমজুর জিহাদের ছেলে। শিশুটি বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।
শিশুটির মা নাজমা বেগম বলেন, বাড়ির পাশে চুলা থেকে নেয়া গরম ছাই স্তূপ করে রাখা ছিল। আমার ছেলে আজিম হাঁটতে হাঁটতে সেই গরম ছাইয়ের স্তূপের মধ্যে পড়ে যায়। এতে তার দুই পা-সহ শরীরের অনেকাংশ পুড়ে যায়। গত শনিবার মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। চিকিৎসকরা তার অবস্থা সংকাটপন্ন হওয়ায় জেলা সদরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় জেলা সদরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা সদর হাসপাতালেই রাখতে হয়েছে তাকে। এদিকে বার বার ছেলের শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশ ড্রেসিং করতে গিয়ে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। সব শেষে মঙ্গলবার চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু সঙ্গে কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় রক্ত জোগাড় করতে পারছিলাম না। সন্তানকে বাঁচানোর জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চেয়েছি কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে চিকিৎসক বিমান চন্দ্র রক্ত দিয়ে আমার সন্তানকে বাঁচিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সৌমেন সাহা বলেন, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ৭ লাখ লোকের জন্য ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি করা হয়। আইনগতভাবে অনেক রোগীকে বাইরে পাঠানোর পরামর্শ দিতে হয়। কিন্তু আর্থিক ও মানবিক কারণে অনেক সময় তারা বাইরের হাসপাতালে যেতে পারে না। পুড়ে যাওয়া শিশুটির ক্ষেত্রেও সেরকম হয়েছে। আমাদের একজন শিশুটিকে রক্ত দিয়েছেন। ঘটনাটি নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি রাখে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে ধন্যবাদ জানাই।
রক্তদাতা ডা. বিমান চন্দ্র আচার্য বলেন, শিশুটির শরীরের অনেকাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। রোগীর বাড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। তাদের সহযোগিতা করার মতো উপজেলা সদরে কেউ ছিল না। শিশুটির মায়ের আর্তনাদে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। কোনো প্রশংসা পাওয়ার জন্য নয়, মানবিক দিক বিবেচনা করে আমি এই কাজটি করেছি।
Posted ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin