নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
ভ্যানচালক ইউসুফের ছেলে এমরান হোসেন। পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ছোটবেলা থেকে পড়ালেখা করে আসছেন। কখনো ঢাকায় পা রাখেননি তিনি। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্যই গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসেন এমরান। ওঠেন এক আত্মীয়ের কাছে। শুক্রবার (১০ মার্চ) মেডিকেলে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়ে ওই আত্মীয়ের সঙ্গেই ঢাকায় ছিলেন। রোববার মেডিকেলে ভর্তির ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে তিনি ৪৭৯তম স্থান অর্জন করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তার পরিবারে এখন খুশির জোয়ার বইছে।
এমরান লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার ভ্যানচালক মো. ইউসুফের ছেলে। তিনি সংসারের দ্বিতীয় সন্তান। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে হাজিরহাট মিল্লাত একাডেমি থেকে এসএসসি ও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে তিনি জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এমরানের বাবা মো. ইউছুফ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবার কষ্টে উপার্জিত অর্থের অপচয় করার মতো ইচ্ছে কখনো এমরান তার মনে জাগ্রত হতে দেয়নি। বাবা-মা ও বোনরা তাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ছোটবেলা থেকে পড়ালেখা করে আসছেন তিনি। ঢাকা কখনো যাওয়ার সুযোগ হয়নি তার। এসএসসি ফলাফলের পর তিনি লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণও হয়েছেন। স্বপ্ন ছিল মেডিকেল ভর্তি হওয়ার। এতে প্রথবারের জন্য গত ৮ মার্চ তিনি ঢাকা গিয়ে এক আত্মীয়ের কাছে ওঠেন। ১০ মার্চ মেডিকেলে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়ে ওই আত্মীয়ের সঙ্গেই ঢাকায় ছিলেন। গতকাল রোববার মেডিকেলে ভর্তির ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে তিনি ৪৭৯তম স্থান অর্জন করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
এমরান হোসেনের মোবাইল বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এমরান হোসেন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তিনি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছেন। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের খবর পেয়ে তার বাবা-মা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই ফলাফল পাওয়ার পরপরই তিনি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ আলম বলেন, এবার আমাদের কলেজ থেকে ৫ জন মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে এমরান একজন। ছেলেটি খুব মেধাবী। তার ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল। আমার সঙ্গে প্রথম তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন কলেজের লাইব্রেরিয়ান সাজ্জাদুর রহমান। ২-৩ মাস সে আমার কাছে ক্লাসের বাইরে পড়েছিল। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কলেজ আসতে তার প্রায় ১০০ টাকার মতো খরচ হতো। এ খরচ বহন করা তার জন্য কষ্টসাধ্য ছিল। এজন্য আমার কাছে আর পড়তে আসেনি। ক্লাসেও নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারত না। তবে সবগুলো পরীক্ষাতে সে ভালো ফলাফল করতো। নিজের চেষ্টায় সে আজ সফল।
কমলনগর ইউএনও সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হলে অবশ্যই তাকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে। এ সময় এমরানকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান তিনি।
Posted ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin